-->
শিরোনাম

ত্বীন ফল চাষে সাফল্য

পলাশ প্রধান, গাজীপুর
ত্বীন ফল চাষে সাফল্য
মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীন

ঢাকার অদূরে গাজীপুরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে মরুর ফল ত্বীন। এখানকার বাগানের উৎপাদিত ত্বীন ফল দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করে বাণিজ্যিকভাবে সফলতা পেয়েছে। যার ফলে সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্যের তালিকায় ত্বীন অচিরেই জায়গা করে নেবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

আরব দেশগুলোয় জনপ্রিয় একটি ফল ত্বীন। মিষ্টি স্বাদের এই ফল শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষের পছন্দের। পবিত্র কোরআনেও মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীনের কথা উল্লেখ আছে। ফলটি এখন আরবের সীমা ছাড়িয়ে চলে এসেছে বাংলাদেশে।

গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার বারতোপা গ্রামে মডার্ন অ্যাগ্রো ফার্ম অ্যান্ড নিউট্রিশন এ ত্বীন ফলের চাষ করছে। এটি আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় বাগান বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ত্বীন ফল ও চারা বিক্রি হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা নারী উদ্যোক্তা রুমা আক্তার বলেন, ‘২০১৪-১৫ সালে থাইল্যান্ড থেকে গাছ এবং তুরস্ক থেকে ত্বীন গাছের কাটিং নিয়ে আসি। পরে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বজায় রেখে বারতোপা এলাকায় ২০১৭ সালে বাণিজ্যিকভাবে চারা উৎপাদন ও আবাদ শুরু করি।’

তিনি আরো বলেন, ‘২০২২ সালে এসে ত্বীন চাষে পুরোপরি সফলতা অর্জন হয়। প্রতিটি গাছ থেকে প্রথম বছরে এক কেজি, দ্বিতীয় বছরে ৭-১১ কেজি, তৃতীয় বছরে ২৫ কেজি পর্যন্ত ফল ধরে। এভাবে ক্রমবর্ধিত হারে একটানা ৩৪ বছর পর্যন্ত ফল দেয় গাছটি। এর আয়ু প্রায় ১০০ বছর। তিন মাসের মধ্যেই শতভাগ ফলন আসে।’

রুমা আক্তার বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে ত্বীন। এটি চাষে কোনো রাসায়নিক সার লাগে না। মাটিতে জৈব ও কম্পোজড সার মিশিয়ে রোদে মাঠে ও ছাদে টব লাগিয়ে ফল উৎপাদনে সাফল্য পাওয়া গেছে। ছাদ বাগানীদের মধ্যেও বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।’

‘দেশে ছাড়াও বিদেশে এ ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এরই মধ্যে ভারত ও জাপান থেকে আমাদের কাছে ত্বীন ফলের চাহিদার কথা জানানো হয়েছে। ত্বীন শুষ্ক ও শীতপ্রধান দেশে চাষ হলেও নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতেও ৩৬৫ দিন এ ফল উৎপাদন সম্ভব।’

প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় ব্যাবস্থাপক মো. পারভেজ আলম বাবু বলেন, ‘বারতোপা এলাকায় সাত বিঘা জমিতে ত্বীন ফলের চাষ হয়েছে। মাদার প্লান্ট (মূল গাছ) থেকে তৈরি করা কলমের তিন মাস বয়স থেকে ফল দেওয়া শুরু করে। ফল ধরার এক সপ্তাহের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয়। প্রতিটি গাছে ন্যূনতম ৭০-৮০টি ফল ধরে। সারা বছরই গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি গাছ ৬-৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘এখান থেকে কলম তৈরি করে চাষিদের মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া ও যশোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ফল বিক্রেতাসহ ভোজন রসিক মানুষ এখান থেকে ত্বীন কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিন ১৫-১৬ কেজি ত্বীন বিক্রি হচ্ছে। এর প্রতি কেজির মূল্য এক হাজার টাকা।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাজীপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘আয়তনের দিক থেকে দেশের সব থেকে বড় ত্বীন ফলের প্রজেক্টটি শ্রীপুরে। বাণিজ্যিকভাবে এত বড় পরিসরে ত্বীন চাষ দেশের কোথাও করা হয়নি। আমরা প্রকল্পটি পরিদর্শন করে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। রোগবালাই নেই বললেই চলে। প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে ত্বীন ফলের চাষ কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে।’

ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধে এ ফল খুবই উপকারী। এছাড়া নানা রোগ নিরাময়ে বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ত্বীন। এটি চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য ও হাঁপানি রোগ নিরাময়েও সহায়তা করে বলে জানান তিনি।

 

মন্তব্য

Beta version