-->
শিরোনাম

কাজে আসছে না ২ কোটি টাকার ডাগওয়েল

শাকিল মুরাদ, শেরপুর
কাজে আসছে না ২ কোটি টাকার ডাগওয়েল
কাজে আসছে না ২ কোটি টাকার ডাগওয়েল

কৃষকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে শেরপুরের নকলা ও নালিতাবাড়ীতে ডাগওয়েল (পাতকুয়া) স্থাপন করে সরকার। সৌরবিদ্যুৎচালিত পাতকুয়া স্থাপনের উদ্দেশ্য ছিল বিনা টাকায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের সবজি এবং ইরি ধানচাষে সেচ দেওয়া। শুস্ক মৌসুমে পানির সংকট থেকে মুক্তি পেলেও বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণ ও সোলারের ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে ডাগওয়েলগুলো। যা সংস্কারে নেই কারো মাথাব্যাথা। ফলে এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক।

জানা যায়, ২০১৬-১৭ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত তিন বছরে শেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় কাবিখা প্রকল্পের দুই কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন ২১টি ডাগওয়েল। এর বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প।

নির্মাণের পর এসব ডাগওয়েল থেকে কৃষকরা সুফলও পেয়েছিল ভালো। কিন্তু কিছুদিন ব্যবহারের পর ডাগওয়েল থেকে হালকা পানি ও পরবর্তীতে কাঁধা ওঠা শুরু করে। একপর্যায়ে তা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকেই নষ্ট হতে থাকে সোলারের ব্যাটারি ও সরঞ্জাম। কৃষকরা বারবার অভিযোগ করলেও ডাগওয়েলগুলোর কোনো সংস্কার কাজ করছে না কেউ। এতে সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

নালিতাবাড়ীর গোবিন্দপুর এলাকার কৃষক আহম্মদ আলী। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, ‘অনেক দিন ধরে ডাগওয়েল নষ্ট। পানি উঠে না। আগে তাও পানি উঠত, এখন একেবারেই ওঠে না। আমরা কয়েকজন কৃষক জানাইছিলাম, তারা আসে নাই।’

নালিতাবাড়ীর পোড়াগাঁও গ্রামের কৃষক রমজান আলী বলেন, ‘আগে তাও কাঁধার সঙ্গে পানি উঠছে, এখন ডাগওয়েল দিয়ে কিছুই ওঠে না। এখন টাকা দিয়ে সেচের পানি দিয়ে ফসল করতে হচ্ছে আমাদের। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই।’

ডাগওয়েলের সুবিধা পাওয়া কয়েকজন কৃষক জানান, স্থাপনের পর প্রথম কয়েক দিন ভালোই চলেছে ডাগওয়েলগুলো। কিছুদিন পর ঘোলা পানি আসতে শুরু করে। এক পর্যায়ে তা বন্ধ হয়ে যায়। তারা নালিতাবাড়ী বিএডিসি অফিসে কয়েকবার অভিযোগ করলেও তারা কোনো সমাধান দেয়নি।

নকলা উপজেলার রামপুড় গ্রামের ডাগওয়েল কৃষক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে ৪১ জনকে পানি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পানি তো ঠিকমতো ওঠে না। কৃষকদের পানি দেওয়া যায় না। তাই কেউ চাঁদাও দেয় না। যে উদ্দেশ্যে এটা করা হয়েছিল, তা পূরণ হয় নাই।’

জানা যায়, প্রতিটি ডাগওয়েল প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়। প্রতিটি কূপের গভীরতা ১১৮ ফুট। ইট-সিমেন্টের পাত বসিয়ে সাত হর্স পাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন সাবমারসিবল পাম্প বসানো হয়। আর এই পাম্প চালানোর জন্য বসানো হয় তিন হাজার ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিশেষ সোলার প্যানেল। বৃষ্টির পানি ধারণ করার মতো করে বসানো হয় সোলার প্যানেলটি।এ ব্যাপারে জানতে বিএডিসি কার্যালয়ে গেলেও কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মুহিত কুমার দে বলেন, ‘শুনেছি কয়েকটি ডাগওয়েল নষ্ট হয়েছে। সঠিক পরিচর্যা করে বা কোনো প্রজেক্টের মাধ্যমে ডাগওয়েলগুলো সংস্কার করলে কৃষকরা লাভবান হবে। এ বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।’

মন্তব্য

Beta version