-->
শিরোনাম

অবসর কাটে বায়ান্নর স্মৃতিকথায়

পুলক পুরকায়স্থ, মৌলভীবাজার
অবসর কাটে বায়ান্নর স্মৃতিকথায়
নাতনিদের সঙ্গে এখন অবসরের সময়টুকু কাটে তার

মৌলভীবাজার জেলার প্রবীণ এবং বর্ষীয়ান রাজনীতিক কমরেড আব্দুল মালিক (মালই মিয়া)। শহরের সুনাপুর এলাকায় ছোট ছেলে আবু রেজা সিদ্দিকি ইমনের বাসায় থাকেন তিনি। বয়সের ভারে ন্যুব্জ, শীতের সকালে রোদের তাপ শরীরের লাগাতে আসেন উঠোনে। নব্বই ছুঁই ছুঁই বয়স নিয়ে নাতনি ইমি, ইলিন ও নাফিসার সঙ্গে অবসরের সময় কাটে তার। তাদেরকে শুনান তার দুরন্ত কৈশরের গল্প।

১৯৩৪ সালের ২৩ জুন কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের পৃথিমপাশা গ্রামে জন্ম আব্দুল মালিকের। বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল ধর্মীয় শিক্ষায় অগ্রসর হবেন তার ছেলে। এজন্য আব্দুল মালিককে মাদ্রাসায় ভর্তি করান। কিন্তু সেখানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে মাদ্রাসা ছেড়ে দেন তিনি।

এরপর ১৯৪৯ সালে আলী আমজাদ স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন আব্দুল মালিক। তৎকালীন স্কুলের জরাজীর্ণ ঘর, বসার বেঞ্চ, ডেস্ক এবং শিক্ষক সংকট নিরসনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন তিনি। এরপরই যুক্ত হন কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গোলাগুলি এবং বেশ কয়েকজন ছাত্র মারা যাওয়ার খবর রেডিওর মাধ্যমে শুনতে পান আব্দুল মালিক। তাৎক্ষণিক স্কুলের ৮/১০ জন বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় মিছিল নিয়ে নেমে যান সেসময় নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এই ছাত্র।

সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে আব্দুল মালিক বলেন, ‘রেডিওতে যখন শুনলাম ঢাকাতে গোলাগুলি হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন ছাত্র মারা গেছে, তাৎক্ষণিক সৈয়দ মহিউদ্দিন মনর, আব্দুল কাইয়ুম, তজমূল আলীসহ ৮/১০ জন স্কুলের ছাত্র নিয়ে রাস্তায় মিছিল নিয়ে নেমে পড়ি। সেই মিছিল স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়েছিল। সেই মিছিলে আওয়াজ ছিল, আগুন ছিল। মিছিল শেষে বৈঠক করি। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরের দিন সব ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে ক্লাস বর্জন করি।'

পরপর দুদিন স্থানীয়ভাবে মিছিল মিটিং হলেও পরে কেন্দ্রের ঘোষিত যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত হন বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘যাদের নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি, আজ তারা কেউ বেঁচে নেই।' এ কথা বলেই দুই চোখ মুছলেন সেই দিনের আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী আব্দুল মালিক।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীসহ বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সান্নিধ্য পেয়েছি। তাদের সঙ্গে সরাসরি বিভিন্ন জায়গায় বৈঠকেও মিলিত হয়েছি।’

আব্দুল মালিক এখনো স্বপ্ন দেখেন সমাজে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকবে না। এমনটাই বিশ্বাস করেন তিনি।

সিপিবি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নিলিমেষ ঘোষ বলু জানান, কমরেড আব্দুল মালিক বায়ান্নর ভাষা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাংলার প্রতিটি লড়াই সংগ্রামে ছাত্র, যুব ও জনতাকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এজন্য তাকে ভাষা সৈনিকও বলা হয়। ছাত্র জীবন থেকেই মিছিলে, সংগ্রামে তিনি ছিলেন অগ্রসৈনিক।

বর্তমানে আব্দুল মালিকের ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা আব্দুল লতিফ বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন ছাড়াও কমরেড আব্দুল মালিক ৬২'র আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রদোহী মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় ৪ মাস কারাবাসে ছিলেন। তারপরও ৬৯'র গণআন্দোলনে নিজেকে সক্রিয় রাখেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘৭১' সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সম্মুখ সমরে অস্ত্র হাতে না নিলেও আগরতলা আশ্রয়কেন্দ্র এবং বাংলার মুক্তিসেনাদের মধ্যে গুপ্তচরের ভূমিকা পালন করেন। তিনি আজীবন পাহাড় আন্দোলন, কৃষক শ্রমিকের অধিকার আদায় আন্দোলনসহ সব আন্দোলনে সক্রিয় থাকতেন। ’

মন্তব্য

Beta version