-->
শিরোনাম

মুখে দিলেই গলে যায় ‘ম্যানেজার স্টলের’ রসগোল্লা!

পুলক পুরকায়স্থ, মৌলভীবাজার
মুখে দিলেই গলে যায় ‘ম্যানেজার স্টলের’ রসগোল্লা!

স্পঞ্জ মিষ্টি, সাক্ষাৎ রসগোল্লা। নাম শুনলেই যেন মন চায় এর স্বাদ নিতে। মুখে দিলেই যেন গলে যায়। এ এক অপূর্ব স্বাদ। এ রকম মুখরোচক স্পঞ্জের মিষ্টি ও রসগোল্লা পাওয়া যাবে মৌলভীবাজারের ঐতিহ্যবাহী ‘ম্যানেজার স্টলে’।

৮০ বছরের পুরোনো এই রসগোল্লার খ্যাতি ছড়িয়েছে সিলেট অঞ্চলের সীমানা পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এই রসগোল্লা রসনা বিলাসীদের যেমন পছন্দের, তেমন চাহিদা আছে প্রবাসীদেরও।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত সুশীল চন্দ্র দাস ১৯৪০ সালের দিকে জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌমুহনী এলাকায় গড়ে তোলেন মদনমোহন মিষ্টান্ন ভান্ডার। ১৯৯২ সালে সুশীল বাবুর মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে সুমেশ দাস যীশু ব্যবসার হাল ধরেন। অতীতের সেই মদন মোহন মিষ্টান্ন ভান্ডারই আজকের ঐতিহ্যবাহী ম্যানেজার স্টল। কয়েক বছর আগে এ স্টলের ডেকোরেশনেও আনা হয় পরিবর্তন। নতুন আসবাবপত্রের সঙ্গে দেয়ালে লাগানো হয়েছে পোড়ামাটির টেরাকোটা।

সরেজমিনে দেখা যায়, টেরাকোটায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মিষ্টি তৈরি, আপ্যায়ন ও অনুষ্ঠানাদির চিত্র। টেরাকোটার এ ফলক দেখলে মনে হবে, মিষ্টি তৈরির ধারাবাহিক ইতিহাস।

শহরের প্রবীণ কয়েকজন জানান, এ অঞ্চলের অনেকেই ৩০-৪০ বছর ধরে ম্যানেজার স্টলের মিষ্টির ক্রেতা। অনেকেই রাতে গরম-গরম রসগোল্লা খেতে স্টলে ভিড় করেন। আবার অনেকে ভোরে মিষ্টির সাথে লুচি দিয়ে জলখাবার সারেন। স্টলটিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে।

স্থানীয়রা জানান, মৌলভীবাজারে ভ্রমণপিপাসু ভোজনপ্রিয় পর্যটকরা আসলে রসগোল্লার স্বাদ নিতে আসেন এখানে। ফিরে যাবার পথে সঙ্গে নিয়ে যান এই রসগোল্লা। রসগোল্লা কিনতে আসা চট্টগ্রামের নাজনীন সুলতানা জানান, সিলেটে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। ফেরার পথে রসগোল্লা নিয়ে যাচ্ছেন। সিলেটে বেড়াতে আসলেই এখানকার রসগোল্লা নিয়ে যান তিনি।

হবিগঞ্জ থেকে বন্ধুদের নিয়ে বড়লেখার মাধবকুন্ডে আসা পর্যটক সৌরভ হাসান বলেন, ‘শুনেছি এখানের রসগোল্লা নাকি খুবই প্রসিদ্ধ। খেয়ে দেখলাম ভালো লাগলো।’

এই রসগোল্লা তৈরির জন্য ৪৫ বছর ধরে বিভিন্ন গোয়ালপাড়া ও দুগ্ধ খামার থেকে দেশি গরুর দুধ সংগ্রহ করেন রজত ঘোষসহ আরো দুই-তিনজন। রজত ঘোষ জানান, দুপুরে দুধ নিয়ে এসে জ্বাল দিয়ে ছানা তৈরি করে দেন তারা।

কারিগর সুজিত বাবু জানান, প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তিনিসহ চারজন কারিগর এই রসগোল্লা তৈরি করেন।

ম্যানেজার স্টলের কর্ণধার সুমেশ দাস যীশু বলেন, ‘মৌলভীবাজারের বিভিন্ন স্থান থেকে দেশি গরুর দুধ গোয়ালারা সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। আমাদের এখানে ওই দুধ নিয়ে এসে প্রথমে ছানা তৈরি করে দেন তারা। পরে কারিগররা রসগোল্লা তৈরি করেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের রসগোল্লা গণভবন, বঙ্গভবন, সচিবালয়সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। প্রবাসীরা দেশে আসলে কিংবা প্রবাসীদের আবদার রক্ষায় আত্নীয়-স্বজনরা বিশেষ ব্যবস্থায় বিদেশেও এই রসগোল্লা নিয়ে যান।’

মন্তব্য

Beta version