-->

সাইনবোর্ড-বিলবোর্ড, সবখানেই ইংরেজি

শরিফুল ইসলাম, নীলফামারী
সাইনবোর্ড-বিলবোর্ড, সবখানেই ইংরেজি
একটি দোকানের নাম ইংরেজিতে লেখা রয়েছে

মাতৃভাষা বাংলায় নামফলক লেখা বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। তবে নীলফামারীর অনেক প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে বাংলার পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে ইংরেজি। পরিবহন থেকে শুরু করে কথা-বার্তা সব জায়গাতেই বাংলার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে ইংরেজি।

নির্দেশনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ রয়েছে নীরব ভূমিকায়। হাইকোর্টের আদেশ পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে মাঠ পর্যায়ে সঠিক তদারকির অভাবকে দায়ী করেছেন বিশিষ্টজনেরা। তাদের মতে, বাঙালির হৃদয়ে বাংলা নিয়ে হারিয়ে যাওয়া চেতনাকে ফিরিয়ে আনতে কর্তৃপক্ষের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।

সূত্রমতে, ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেশের সব সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বরপ্লেট, দফতরের নামফলক বাংলায় লেখার নির্দেশ দেন আদালত। ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আদালত স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন।

পরে ২০১৪ সালের ২৯ মে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মাধ্যমে এটি কার্যকর করার সিদ্ধান্ত হয়। তারপরও বাংলা ব্যবহারে দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট আদালত কড়া ভাষায় মন্তব্য করেন।

নীলফামারী জেলা শহর ও কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় ইংরেজি ভাষার প্রভাব। তবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইংরেজিতে লেখা সাইনবোর্ডের পাশে ছোট করে বাংলায় প্রতিষ্ঠানের নাম টানিয়েছে।

একই চিত্র দেখা যায় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক ও জুতার শো-রুম, ব্যাংক-বিমা, কম্পিউটার ও খাবারের দোকানের সাইনবোর্ডেও; যেখানে নেই কোনো বাংলার ব্যবহার। কোথাও কোথাও আবার ব্যবহার করা হচ্ছে ভুল বানান। অনেক সময় বাংলা-ইংরেজি মিশ্রিত নামফলকও দেখা যায়।

আড্ডা, তর্কে এমনকি ভালোবাসা প্রকাশ করতে একটি প্রজম্ম চালু করেছে ‘বাংলিশ’ (বাংলা ও ইংরেজি মিশ্রিত শব্দ) প্রচলন।

ইংরেজিতে সাইনবোর্ড টানানো বিভিন্ন ধরনের অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকেই জানেন না বাংলায় সাইনবোর্ড লেখা নিয়ে আদালতের আদেশের বিষয়টি। তবে অনেকে ব্র্যান্ডের নাম ও লোগোর সঙ্গে মিল রেখে ইংরেজিতে সাইনবোর্ড তৈরি করেছেন বলে দাবি করেন। অথচ ব্যবসা সনদ বা ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার সময় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ থেকে সাইনবোর্ডে বাংলা ব্যবহারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহরের একটি শোরুমের ব্যবস্থাপক বলেন, ‘বিষয়টি এমন না যে, বাংলার প্রতি অবজ্ঞা থেকে এটি করা হয়েছে। নামটি ইংরেজিতে তাই সাইনবোর্ড ইংরেজিতে লেখা হয়েছে। আমাদের সচেতনতার অভাব আছে এটি সত্যি।’

নীলফামারী পৌরসভার মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ জানান, আদালতের নির্দেশে সাইনবোর্ডে ভিনদেশি ভাষার ব্যবহার পরিহার করার জন্য পৌর পরিষদ বদ্ধপরিকর। পরিষদের আগামী সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে খুব শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে। তবে পৌরবাসীকে এ ব্যাপারে সচেতন ও বাংলা ভাষার প্রতি দরদি হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জানতে চাইলে সৈয়দপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেন খোকন বলেন, ‘এটি দুর্ভাগ্যের বিষয়। শুধু প্রতিষ্ঠানের নাম নয়, সামাজিক অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রও ইংরেজিতে করা হচ্ছে। এগুলো সরকারের বা আদালতের আদেশেই কেন বাংলায় লিখতে হবে। এটি নাগরিকদের দায়িত্ববোধ থেকেই করা উচিত।’

তবে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে উপজেলা ও পৌর প্রশাসনের প্রচার-প্রচারণাসহ কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত মনে করেন তিনি।

মন্তব্য

Beta version