-->

শেবাচিমে চিকিৎসক সংকট, যন্ত্রপাতিও বিকল

জহির রায়হান, বরিশাল
শেবাচিমে চিকিৎসক সংকট, যন্ত্রপাতিও বিকল

দক্ষিণাঞ্চলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভরসার কেন্দ্রবিন্দু বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল। বরিশাল বিভাগ ছাড়াও পার্শবর্তী শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ আরো বিভিন্ন জেলার রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। অথচ এই হাসপাতালের অনুমোদিত চিকিৎসকের প্রায় অর্ধেক পদই শূন্য। এ ছাড়াও উন্নত চিকিৎসা দিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক মেশিন ও যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে আছে।

এতে দীর্ঘদিন ধরে কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অসহায় রোগীরা। আবার বেডের তুলনায় প্রতিদিন বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় প্রত্যাশা অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

শেবাচিম হাসপাতাল প্রশাসন সূত্র জানায়, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি ৫শ শয্যা থেকে এক হাজার শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে এর অনুকূলে প্রতিদিন ১ হাজার ৭শ থেকে ৮শ রোগী ভর্তি থাকে। এ ছাড়া বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন।

অপরদিকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনুমোদিত ২২৪ চিকিৎসক পদের বিপরীতে রয়েছেন ১২১ জন। প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি চিকিৎসকের পদ শূন্য। তাদের মধ্যেও কয়েকজন জুনিয়র কনসালটেন্টের বদলির আদেশ হয়েছে।

এই চিকিৎসকের মহাসংকটের মধ্যে রোগীদের সেবার মান বাড়তে হাসপাতালে আরও সাতটি নতুন ইউনিট চালু করা হয়েছে। এ নিয়ে হাসপাতালটিতে বর্তমানে অন্তর্বিভাগে ২০টি ও বহির্বিভাগে ২১টি ইউনিট রয়েছে।

আরও জানা গেছে, আগে হাসপাতালে অন্তর্বিভাগে ১৭টি এবং ১৭টি বহির্বিভাগ ছিল। কিন্তু ৩ ফেব্রæয়ারি বহির্বিভাগে নতুন চারটি ও অন্তর্বিভাগে তিনটি বিভাগ যুক্ত হয়েছে।

নতুন চারটি বহির্বিভাগ হচ্ছে ভাসকুলার সার্জারি, কার্ডিওলজি, ইউরোলজি ও গ্যাস্ট্রোলজি। এ ছাড়া তিনটি অন্তর্বিভাগ হচ্ছে নিউরোলজি, ডায়াবেটিক ও বার্ন ইউনিট।

এসব বিভাগে প্রতি রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার ইউরোলজি, হৃদরোগ, ভাসকুলার সার্জারির বহির্বিভাগে একেকজন করে চিকিৎসক রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন।

এ ছাড়া প্রতি শনি, সোম ও বুধবার গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ইনডোর থেকে পাঠানো চিকিৎসক দিয়ে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় রোগীদের উন্নত চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সীমিত এই চিকিৎসকদের। এদিকে হাসপাতালের আধুনিক যন্ত্রপাতিগুলোর বেশির ভাগই বিকল অবস্থায় পড়ে আছে। বিশেষ করে এনজিওগ্রাম, চোখের লেসিক, এমআরআই, সিটি স্ক্যান মেশিন দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। রেডিওথেরাপি, রেডিও টেলিথেরাপি, ব্রাকিথেরাপি মেশিনসহ অন্যান্য থেরাপির মেশিনও অচল অবস্থায় আছে।

এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের জন্য কোবাল্ট-৬০ মেশিন, দুই-তৃতীয়াংশ এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিনও জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। এতে স্বল্প খরচে উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অসহায় রোগীরা।

মাহেনুর নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘বাবার চিকিৎসার জন্য মাদারীপুর থেকে এই হাসপাতালে এসেছি। বাবার হার্টে বøক থাকার শঙ্কায় এনজিওগ্রাম করাতে বলেছেন চিকিৎসক। আর্থিক সমস্যার কারণে হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করাতে চাইলে কর্তৃপক্ষ জানায় মেশিন নষ্ট। এখন বাইরে বেশি টাকা দিয়ে এনজিওগ্রাম করাতে হবে।’

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালের মোট শয্যার অনুক‚লে প্রায় দেড় গুণের বেশি রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। হাসপাতালে সব ধরনের সেবা নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য, উদ্দেশ্য হলেও সক্ষমতা না থাকায় আমরা রোগী এলেই ঢাকায় স্থানান্তর করতে বাধ্য হই। আবার হাসপাতালের অনুমোদিত চিকিৎসক পদের বেশিভাগই শূন্য। তবু সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে রোগীদের উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের কম সময়ের মধ্যে কয়েকটি অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগ চালু করতে সক্ষম হয়েছি। এ জন্য প্রয়োজনীয় জনবলও চাওয়া হয়েছে। এমনকি দীর্ঘদিন অচল থাকা গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি সচল করার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসকশূন্যতার বিষয়টিও সংশ্লিষ্টদের কাছে জানানো হয়েছে।’

মন্তব্য

Beta version