-->
শিরোনাম

সবই আছে, শুধু পাঠক নেই

কামরুজ্জামান মিন্টু, ময়মনসিংহ
সবই আছে, শুধু পাঠক নেই
ফাঁকা পড়ে আছে ভাষাশহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে উত্তাল দেশ। সেই আন্দোলনে ২১ ফেব্রুয়ারি মায়ের মুখের ভাষার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে শহীদ আবদুল জব্বার একজন। এ ভাষাশহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে তার পৈতৃক নিবাস ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের পাঁচুয়া গ্রামে নির্মাণ করা হয় ভাষাশহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার । গণগ্রন্থাগারটিতে রয়েছে চার হাজারেরও বেশি বই। শুধু অভাব পাঠকের।

ফেব্রুয়ারি এলেই আবদুল জব্বারের স্মরণে অনেকেই আসেন গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে। তবে সারাবছরই থাকে সুনসান নীরবতা। পাঠাগারে মাঝে মধ্যে কেউ এলে বই পড়ার পরিবর্তে মোবাইলে বেশি সময় ব্যয় করেন। তাই প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্রন্থাগারটি ডিজিটালাইজেশন করার দাবি স্থানীয়দের।

এ ছাড়া ভাষাশহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর পর্যন্ত আসা সড়কটিও ভাঙাচোরা। ফলে কেউ আসতে চায় না। এখানে পাঠক ও পর্যটক আনতে হলে রাস্তাটির সংস্কারও জরুরি বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

গফরগাঁও উপজেলা সদর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে রাওনার পাঁচুয়া গ্রামে ভাষাশহীদ আবদুল জব্বারের পৈতৃক ভিটার পাশেই ৪০ শতক জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর। জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় স্থাপিত গণগ্রন্থাগারটিতে ৪ হাজার ১৩০টি বই রয়েছে। রয়েছে অনেক দামি ও দুর্লভ বইও।

ভাষাশহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর

সরেজমিনে দেখা যায়, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সোমবার অনেকেই এসেছেন এই গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে দেখতে। তবে এখানে আবদুল জব্বারের ব্যবহৃত কোনো স্মৃতি নেই। দর্শনার্থীরা আশপাশ ঘুরে জাদুঘরের সামনে শহীদ মিনার কিংবা ভাষাশহীদ জব্বারের ম্যুরালের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত। কিন্তু গ্রন্থাগারের ভেতরে এসে বইয়ের পাতা উল্টাতে দেখা যায়নি তেমন কাউকেই।

ময়মনসিংহ পৌর শহরের বাসিন্দা আসাদুল হক। গত সোমবার আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস উপলক্ষে এসেছেন ভাষাশহীদ আবদুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে।

তিনি দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘শহীদের ছবি ছাড়া কোনো স্মৃতি জাদুঘরে নেই। গণগ্রন্থাগারটিতে অসংখ্য বই থাকলেও, নেই পাঠক। আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাঠকস্বল্পতায় ধুঁকতে থাকা গ্রন্থাগারটি ডিজিটালাইজেশন করা দরকার।’

স্থানীয় যুবক ফরহাদ বলেন, ‘আমরা নতুন প্রজন্মরা দেশের জন্য জীবন দেওয়া জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের সম্পর্কে বইপুস্তকে পড়েছি। ভাষাসৈনিক আবদুল জব্বারের স্মৃতিবিজড়িত স্থানে আমার জন্ম হওয়ায় নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করি। এখানে পাঠক ও পর্যটকদের আকর্ষণ করতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’

গ্রন্থাগার দেখাশোনা ও পরিচালনার জন্য লাইব্রেরিয়ান, সহকারী লাইব্রেরিয়ান ও পিয়নসহ মোট পাঁচটি পদ থাকলেও এখানে কর্মরত আছেন একজন সহকারী লাইব্রেরিয়ান ও একজন কেয়ারটেকার।

কথা হয় লাইব্রেরিয়ান কায়সারুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘ছুটির দিন বাদে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই স্মৃতি গ্রন্থাগার ও জাদুঘর। অনেক মূল্যবান বইয়ের সমাহার রয়েছে গ্রন্থাগারে। ভাষার মাসজুড়ে দর্শনার্থীরা এলেও বই পড়ার জন্য পাঠক তেমন আসে না।’

ফাঁকা পড়ে আছে গ্রন্থাগার

তিনি আরো বলেন, ‘পাঠাগারে আগে নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা রাখা হতো। কিন্তু বর্তমানে পাঠক খুব কম আসায় পত্রিকাও রাখা হয় না। তবে আমরা নিয়মিত আসি।’

ভাষাশহীদ আবদুল জব্বারের চাচাতো ভাই মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘সরকার থেকে আমাদের সম্পর্কে কখনো খোঁজখবর নেওয়া হয় না। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসজুড়েই মানুষের সমাগম বাড়ে। ভাষাশহীদ আব্দুল জব্বারের নামে দীর্ঘদিন ধরে কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণের দাবি করেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এটি দুঃখজনক।’

এ বিষয়ে গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবিদুর রহমান বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। বইয়ের সংখ্যা ও মানের দিক থেকে বেশ সমৃদ্ধ একটি গ্রন্থাগার। কীভাবে পাঠকদের আকৃষ্ট করা যায়, এ বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে। আমরা চাই, এখানে পাঠকদের সমাগম ঘটুক।’

মন্তব্য

Beta version