-->
শিরোনাম
কুষ্টিয়া পৌরসভা

পানি না পেয়েও দিতে হয় বিল, পৌরসভার বিরুদ্ধে মামলা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
পানি না পেয়েও দিতে হয় বিল, পৌরসভার বিরুদ্ধে মামলা
প্রতীকী ছবি

পৌরসভাটি ৪২ দশমিক ৭৯ বর্গ কিলোমিটারের। প্রায় ৮৬ হাজার পরিবারে আড়াই লাখ মানুষের বসবাস এখানে। পৌরসভার মোট হোল্ডিং সংখ্যা ৩৬ হাজার ৩০২টি। এর মধ্যে পানির গ্রাহক ১০ হাজার ৬৫৩টি হোল্ডিং। অর্থাৎ ৪০ শতাংশ হোল্ডিং পানি পায়। তবে বিল দেয় পৌরসভার শতভাগ হোল্ডিং। এ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন পৌরবাসী। ঘটনাটি কুষ্টিয়া পৌরসভার।

এর থেকে প্রতিকার চেয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে পৌর এলাকার অর্ধশত নাগরিক। তাদের পক্ষে গত ৮ ডিসেম্বর প্রতিকার ও টাকা আদায়ে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে মামলা করেন অ্যাডভোকেট নওশের আলী। ওই মামলায় বিবাদী করা হয়েছে কুষ্টিয়া পৌসভার মেয়র, নির্বাহী প্রকৌশলী, সচিব, সহকারী প্রকৌশলী (পানি) এবং বিবাদী করা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসককে।

মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কুষ্টিয়া সদরের জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতের বিচারক রাশেদুর রহমান অভিযোগটি আমলে নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেন। পৌরসভার পানি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ৪ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য সময় চান। ওই আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২০ এপ্রিল সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দাখিলের আদেশ দেন আদালত।

ওই মামলায় বলা হয়, কুষ্টিয়া পৌরসভার নাগরিকদের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহে সক্ষমতাবহির্ভূত এলাকার মানুষ জীবনধারণের জন্য নিজ নিজ উদ্যোগে টিউবওয়েল, সাব-মার্সিবল বোরিং করে বাসাবাড়িতে নিত্যপ্রয়োজনের পানি সংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। অথচ কুষ্টিয়া পৌরসভার পানি বিভাগের লোক বলে পরিচয় দিয়ে প্রতিনিয়ত নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে পানির বোরিং বন্ধ করার কিংবা অপসারণ করে নেওয়ার হুমকি দিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করে আসছে।

এজাহারে আরো বলা হয়, পৌর কর্তৃপক্ষের এই ‘অন্যায়’ ও ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ বিরুদ্ধে বিচারিক প্রতিকারসহ নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন মামলার বিবাদীরা।

মামলার বাদী নওশের আলী বলেন, ‘আমি ও আরো ৪৯ জন, যাদের বাসায় পৌরসভা পানি দেয় না। কিন্তু আমাদের ৫শ টাকা করে দিতে বাধ্য করে তাদের পক্ষে আমি মামলাটি করেছি। আদালত পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন।’

মামলার বাদীদের একজন কুষ্টিয়া উপজেলা সড়কের বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌস। তার বাসায় পৌরসভার লাইন নেই; কিন্তু তিনি পানিসেবা কর দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘পৌরসভার আচরণ হচ্ছে ভাত দেওয়ার ভাতার না, কিল মারার গোসাইয়ের মতো। সোজা কথা হচ্ছে, আপনি আমাকে সেবা দিবেন, আমার কাছ থেকে সেবার কর নিবেন। পানি দিবেন না, আবার অন্যায়ভাবে জুলুম করে টাকা নেবেন কেন? কোথাও এটা নাই। সে জন্য আমরা বাধ্য হয়ে প্রতিকার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’

কুষ্টিয়া পৌর মেয়র আনোয়ার আলী বলেন, ‘পৌর এলাকায় নাগরিক সেবার গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো পানি সরবরাহ। দীর্ঘদিন ধরেই এখানে চাহিদার তুলনায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় সক্ষমতার ঘাটতি আছে। ঘাটতি পূরণে বিভিন্ন এলাকায় সাব-মার্সিবল বোরিং স্থাপনসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাতে শুষ্ক মৌসুমে শতভাগ না হলেও একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরিবারের মধ্যে পানির জোগান দেওয়া সম্ভব হবে।’

কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘পৌরসভায় প্রতিদিন ১০ হাজার ৪০০ ঘনমিটার পানি উৎপাদন ও সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া ৩ হাজার ৫০০ হস্তচালিত চাপকল, ১ হাজার ৩৬৫টি সাব-মার্সিবল মোটর এবং ২৮৯টি জেড-টাইপ মোটর (চাপকল বোরিংয়ের সঙ্গে সংযুক্ত) অনুমোদন দিয়েছে পৌরসভা।’

‘তবে বাস্তবে ধারণা করা হচ্ছে, পৌরসভার অনুমোদন ছাড়া আরো অন্তত সহস্রাধিক সাব-মার্র্সিবল এবং জেড-টাইপ পাম্প রয়েছে। তবে পৌরবিধি মতে, পৌর এলাকার যেখানেই বসবাস করেন না কেন, অবশ্যই পানিসেবা কর দিতে বাধ্য’, দাবি করেন এই নির্বাহী প্রকৌশলী।

পৌরসভার যে এলাকার মানুষ পানি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সংক্ষুব্ধ তার মধ্যে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড অন্যতম।

ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মীর রেজাউল ইসলাম বাবু বলেন, ‘আমাদের পৌরসভার পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা এখন পর্যন্ত চাহিদার তুলনায় একেবারেই সামান্য। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে আমার এলাকার জনগণ পানির সংকটের মুখে পড়েন।’

বিষয়টি অনেকবার পৌর পরিষদে উত্থাপন করেছেন জানিয়ে কাউন্সিলর বলেন, ‘ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাসও দিয়েছেন মেয়র। সেবা না দিয়ে ওই খাত থেকে টাকা আদায়ের বিষয়ে অনেকেই ক্ষুব্ধ, নানা অভিযোগ করেছেন। কিন্তু পৌরবিধি অনুযায়ী, এই পানি-ট্যাক্স আদায় করে পৌর কর্তৃপক্ষ।’

কুষ্টিয়া স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মৃণাল কান্তি দে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে পৌরসভা একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। স্থান-কাল বাস্তবতায় উন্নয়ন ও নাগরিক সেবার ক্ষেত্রে পৌর পরিষদের কিছু এখতিয়ার আছে; তবে এখতিয়ার বা ক্ষমতা যা-ই থাক না কেন, সেটা কোনোভাবেই জনস্বার্থবিরোধী হবে না। তেমন কোনো ঘটনায় কেউ সংক্ষুব্ধ হলে অবশ্যই তারা প্রতিকার চাইতে পারেন।’

মন্তব্য

Beta version