-->
শিরোনাম

বউ হারানো ভয়ে...

কামরুজ্জামান মিন্টু, ময়মনসিংহ ব্যুরো
বউ হারানো ভয়ে...
স্ত্রীকে রশি দিয়ে বেঁধে ভিক্ষা করছেন নুর ইসলাম

সংসার সাজানোর আশায় ১৫ বছর আগে বিয়ে করেন ভিক্ষুক নুর ইসলাম। তবে মারা যান তার স্ত্রী। এরপর একে একে ৯টি বিয়ে করেন তিনি। যদিও তার সংসারের আশা পূরণ হয় না। সবাই তাকে ছেড়ে চলে যায়।

তবে নুর ইসলামের সংসারের আশা শেষ হয় না। ফের বিয়ে করেন নুর ইসলাম। ১১তম স্ত্রীকে হারানোর ভয়ে তাকে রশি দিয়ে বেঁধে ভিক্ষাবৃত্তি করেন তিনি।

ঘটনাটি ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার ভাইটকান্দি ইউনিয়নের। ওই ইউনিয়নের ধারাকপুর উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ৭০ বছরের নুর ইসলাম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিক্ষা করতে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে বেড়ান নুর ইসলাম। ১৫ বছর আগে মারা যান তার প্রথম স্ত্রী। এই ১৫ বছরে এ পর্যন্ত ১০ জনকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের মধ্যে ১০ স্ত্রীই মানসিক ভারসাম্যহীন। প্রথম ৯ জনই তাকে রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। সবশেষে বছরখানেক আগে বিয়ে করেন মানসিক ভারসাম্যহীন নারী জান্নাত বেগমকে (৩৫)।

জান্নাতকে বিয়ে করার পর থেকেই হারানোর শঙ্কা জাগে তার মধ্যে। এ কারণে তাকে সারাক্ষণ একটি মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে নিজের সঙ্গে নিয়েই ঘুরে বেড়ান তিনি। এমনকি গৃহস্থালির কাজ ও ঘুমানোর সময়ও জান্নাতকে বেঁধে রাখেন নুর। এমন অদ্ভুত কাণ্ডের জন্য নুর ইসলামকে নিয়ে এলাকায় চলছে আলোচনা ও সমালোচনা।

ফারুক হোসেন নামে স্থানীয় একজন দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, প্রায় এক বছর আগে ফুলপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের আমুয়াকান্দা এলাকায় জান্নাত বেগমের সঙ্গে নুর ইসলামের পরিচয় হয়। পরে জান্নাতকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। এ সময় এলাকার লোকজন দুজনের মতামত নিয়ে বিয়ে করিয়ে দেন।

তিনি আরো বলেন, ‘আমার দুই শতাংশ জমির পাশে একটি ছাপড়া ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন নুর ইসলাম। কলাপাতা, সুপারি পাতা, ছেঁড়া কাপড়, বস্তা ও কুড়িয়ে পলিথিন দিয়ে ঘরটি নির্মাণ করেছেন তিনি। জান্নাত ঠান্ডা প্রকৃতির। সে রান্নাসহ স্বামীর সেবাযত্ন করে।’

নুর ইসলাম বলেন, ‘বাঁধন ছেড়ে দিলে যে কোনো সময় আগের স্ত্রীদের মতো জান্নাত নিরুদ্দেশ হয়ে যেতে পারে। পরে আর খুঁজে পাব না। এ জন্য সব সময় তাকে নিজের সঙ্গে বেঁধে রাখি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার ঘরটা ভাঙাচোরা। অনেক কষ্ট করে থাকতে হয়। বৃষ্টি হলে বুকের ওপর পানি পড়ে। সরকারিভাবে একটি ঘর করে দিলে অনেক উপকার হতো।’

এ বিষয়ে ভাইটকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকেই নুর ইসলাম নিজেও কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যান। এরপর তিনি নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীদের নিজের বাড়িতে নিয়ে আসতেন। এক বাড়িতে বসবাস করা অশোভন বলে স্থানীয় মানুষ বিয়ে করিয়ে দিতেন। কিন্তু আগের ৯ স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। তাই বর্তমান স্ত্রীকে তিনি সঙ্গে নিয়েই ঘোরেন।

তিনি আরো বলেন, ভিক্ষুক নুর ইসলাম এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। ঘরের জন্য তার আবেদন করা আছে। বরাদ্দ এলে তাকে ঘর দেওয়া হবে। তারা যেন সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়, সেদিকে নজর থাকবে।

মন্তব্য

Beta version