-->

খরচ কম, লাভ বেশি

কামরুজ্জামান মিন্টু, ময়মনসিংহ ব্যুরো
খরচ কম, লাভ বেশি
সূর্যমুখী ফুল দেখতে এসেছে দর্শনার্থীরা

সূর্যের দিকে মুখ করে হাসছে সূর্যমুখী। কিছুক্ষণ পরপর বাতাসে দুলছে ফুলগুলো। বেশিরভাগ ফুল বড় হওয়ায় গাছের মাথা নিচের দিকে হেলে পড়েছে। তবে নজরকাড়া মনোরম দৃশ্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন নানা বয়সি লোকজন। হলুদ ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত সবাই।

উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হাসান রতন ও মামুন মিয়া। গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখীর এক কেজি করে বীজ বপন করেছিলেন তারা। খরচ বাদে অর্ধেক লাভ হওয়ায় এবারো চাষ করেছেন সূর্যমুখীর। দৃষ্টিনন্দন সূর্যমুখী ফুলের এ বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন স্থানীয় অনেক কৃষক।

জানা যায়, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনে থেকে পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত ৯৫ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুবার সেচ দিতে হয়। অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে খরচ কম, লাভও বেশি।

সূর্যমুখী ফুলচাষি জাহাঙ্গীর হাসান রতন দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘গত বছর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি সূর্যমুখী চাষের পরামর্শ দেন। এ সময় সরকারি প্রণোদনায় এক কেজি বীজ দিয়েছিলেন। বীজগুলো চাষ করে খরচ বাদে অর্ধেক লাভ হয়েছে। এ জন্য এবারো যোগাযোগ করে বীজ সংগ্রহ করে ২০ শতাংশ জমিতে চাষ করেছি। এবার আরো বেশি ফুল ফুটেছে।’

কৃষক মামুন মিয়া বলেন, ‘সূর্যমুখী চাষ সম্পর্কে কৃষকদের ধারণা না থাকায় এ ফুল চাষাবাদে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করেন না। কিন্তু আমরা প্রথম চাষ করায় স্থানীয় কৃষকরা বাগান দেখতে আসছেন। আমরাও তাদের চাষ সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছি। কৃষি কর্মকর্তাদের সঠিক পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা পেলে আগামীতে বহু কৃষক সূর্যমুখীর চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘সমস্যা হচ্ছে, সূর্যমুখীর তেল উৎপাদনের মেশিন এ অঞ্চলে নেই। ফলে সরিষা ভাঙানোর মেশিনেই সূর্যমুখী তেল উৎপাদন করতে হয়। যদি সূর্যমুখীর তেল উৎপাদনের মেশিন থাকত, তা হলে উপজেলায় প্রতিবছর সূর্যমুখী চাষ বাড়বে।’

সূর্যমুখী তেলের উপকারিতা সম্পর্কে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালাম জানান, সূর্যমুখীর তেলে রয়েছে ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ‘কে’র মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও মিনারেল। মুখের যত্নে দাঁতের জন্য উপকারী একমাত্র তেল এটি। হৃদরোগ, ডায়াবেটিসের রোগী, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, কিডনি রোগীর জন্যও সূর্যমুখীর তেল নিরাপদ। চমৎকার এনার্জির উৎসও সূর্যমুখীর তেল। অর্থাৎ সূর্যমুখীর তেল পুষ্টিগুণে অন্য সব তেল থেকে শ্রেষ্ঠ।

উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মুক্তাদির হাসান জানান, সূর্যমুখী ফুলের বীজের রঙ কালো। প্রতিটি মাথায় বীজের সংখ্যা থাকে ৫০০-৬৫০টি। এক একর জমিতে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমিতে প্রায় এক টন বীজ উৎপাদন হয়। এক টন বীজ ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপপরিচালক মতিউজ্জামান দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, জেলায় ২১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ হয়েছে। এর মধ্যে গৌরীপুর উপজেলায় মাত্র দুই হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। সূর্যমুখীতে রোগবালাই খুব কম হয়।

‘এটি চাষে লাভ বেশি হওয়ার ধারণা কৃষকরা জানে না বলে চাষে আগ্রহী হচ্ছে না’, বলেন মতিউজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘এ ফুলের বাগান যাতে আরো বৃদ্ধি পায়, সে জন্য চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হবে। প্রয়োজনে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করা হবে। আগামীতে আরও কয়েক হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ বাড়বে।’

মন্তব্য

Beta version