জয়পুরহাটে চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকদের খরচ বেড়ে গেছে। গতবারের চেয়ে চলতি বোরো মৌসুমে ডিজেলের দাম লিটার প্রতি বেড়েছে ১৫ টাকা। ফলে ডিজেল চালিত গভীর ও অগভীর নলকূপে পানি সেচ ও পাওয়ার ট্রিলার ব্যবহার করতে গিয়ে কৃষকদের অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে।
ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জমি চাষের খরচও বেড়েছে। চলতি মৌসুমে বোরো ধান আবাদ করতে পানি সেচ ও জমি চাষে বোরো চাষিদের অতিরিক্ত খরচ হবে ২০ কোটি টাকার ওপর। কৃষকরা বলছেন, ডিজেলের দাম বাড়ায় বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি। এবার বোরো উৎপাদনে তাদের খরচ বেড়ে যাবে অনেক।
বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ মালিকরাও পানি সেচে গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে বিঘাপ্রতি ২০০ টাকা বেশি দাম বাড়িয়েছেন। গত মৌসুমে যা ছিল ১২০০ টাকা, এবার এক হাজার ৪০০ টাকা।
জেলার বোরো চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মৌসুমে এক লিটার তেলের দাম ছিল ৬৫ টাকা। এ মৌসুমে সেই ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ৮০ টাকা। আর কলের লাঙ্গলে (পাওয়ার ট্রিলার) এক বিঘা জমি চাষ করতে গত বছর জমির মালিককে দিতে হয়েছিল ৬০০ টাকা। এবার দিতে হচ্ছে ৯০০ টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার পাঁচ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯ হাজার ৪২৫ হেক্টর। এ পরিমাণ জমি থেকে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় তিন লাখ টন। জেলায় বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ রয়েছে এক হাজার ৭৯৭টি। বিদ্যুৎচালিত অগভীর নলকূপ রয়েছে দুই হাজার ২৬০টি।
ডিজেল চালিত গভীর নলকূপ ১৪টি এবং ডিজেল চালিত অগভীর নলকুপ (শ্যালো মেশিন) রয়েছে তিন হাজার ২৮৬ টি। চলতি বোরো মৌসুমে ডিজেল চালিত গভীর এবং অগভীর নলকূপের অধীনে বোরা ধান চাষ হয় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে (৫২ হাজার ৫০০ বিঘা)। এ পরিমাণ জমিতে সেচ দিতে ডিজেল প্রয়োজন হয় ১৫ লাখ ৭৫ হাজার লিটার। লিটারে ১৫ টাকা দাম বাড়ায় জেলায় ডিজেল চালিত গভীর অগভীর নলকূপে বোরো চাষিদের দুই কোটি ৩৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে।
বোরো চাষিরা জানান, বোরো আবাদে প্রকার ভেদে কোনো জমি তিন চাষ আবার কোনোটি চার চাষ দিতে হয়। আর আলু তোলার পর ওই জমি দুই চাষ দিয়ে বোরো চারা লাগানো হয়। ডিজেল তেলের দাম বাড়ায় গত বছরের তুলনায় হাল চাষে এবার বিঘাপ্রতি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা কৃষকদের বেশি দিতে হচ্ছে। বোরো জমি চাষে জেলায় ৬৯ হাজার ৪২৫ হেক্টর (৫ লাখ ৯৫ হাজার ৬৮৭ বিঘা) এবার শুধু হাল চাষে অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে ১৭ কোটি ৮৭ লাখ ৬১০ টাকা।
জেলায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বোরো চাষ হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে। কৃষকরা বোরো লাগানো অব্যাহত রেখেছেন। জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার জিয়াপুর গ্রামের ডিজেল চালিত অগভীর নলকূপের মালিক বীরেন চন্দ্র জানান, গত বোরো মৌসুমের চেয়ে এবার ডিজেলের দাম বাড়ায় হাল চাষে পানি সেচের দাম বেড়েছে। বিঘাপ্রতি তিন ৪০০ টাকা বেশি। তিনি আরো বলেন, বিদ্যুৎচালিত গভীর অগভীর নলকূপ মালিকরাও বিঘাপ্রতি পানি সেচের দাম বাড়িয়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা।
আক্কেলপুর উপজেলার চক্রঘোনা গ্রামের কৃষক বীরেন চন্দ্র মন্ডল বলেন, তিনি আড়াই বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। গত বছর বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ থেকে পানি সেচের জন্য বিঘাপ্রতি এক হাজার ২০০ টাকা দিতে হয়েছে। এবার নলকূপ মালিক বলেছেন সব জিনিসের দাম বেশি বিঘাপ্রতি ১৪০০ টাকা করে দিতে হবে। বোরো আবাদ করে ধান ১৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে না পারলে কৃষকের লাভ হবে না।
জেলা গভীর নলকূপ মালিক সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নৃপেন্দ্র নাথ মন্ডল বলেন, সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় নলকূপ পরিচালনায়ও খরচ বেড়েছে। এজন্য এবার ২০০ টাকা বেশি পানি সেচে নিতে হচ্ছে।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) শহিদুল ইসলাম জানান, কৃষকরা ধানের দাম ভাল পাওয়ায় কোনো জমি ফেলে রাখবে না। এতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আর জেলায় ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিনে বোরো চাষ খুব বেশি জমিতে হয় না। অধিকাংশ সেচযন্ত্র বিদ্যুৎচালিত। ডিজেল চালিত মেশিনে খরচ একটু বেশি হবে।
মন্তব্য