-->
শিরোনাম
রুমায় একই পরিবারের পাঁচজনকে হত্যা

কুসংস্কারেই কী প্রাণ গেল পাড়াপ্রধান ও তার চার ছেলের?

বান্দরবান প্রতিনিধি
কুসংস্কারেই কী প্রাণ গেল পাড়াপ্রধান ও তার চার ছেলের?
নিহতদের মরদেহ

বান্দরবানের রুমা উপজেলার গ্যালেংগ্যা ইউনিয়নের দুর্গম আবুপাড়ার লোকজনকে মন্ত্রের বাণে প্রাণে মেরে ফেলার অভিযোগ তুলে পাড়াপ্রধান ও তার চার ছেলেসহ পাঁচজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে পাড়াবাসীরা। পরে লাশগুলো পাড়ার পার্শ্ববর্তী একটি ঝরনার খাদে ফেলে দেওয়া হয়।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রুমার গ্যালেংগার সাত নম্বর ওয়ার্ডে আবুপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- আবু পাড়াপ্রধান কারবারী লকরুই ম্রো (৬০) ও তার বড় ছেলে রুমতুই ম্রো (৪৫), লেনঙি ম্রো (৪২), মেনওয়াই ম্রো (৩৭) ও রিংরাও ম্রো (৩৫)।

নিহতের পরিবারের লোকজন জানান, পাড়াপ্রধান লকরুই ম্রোসহ তিন ছেলেকে তার বাড়িতে কুপিয়ে প্রাণে মারা হয়। সেজ ছেলে মেনওয়াইকে তার বাড়িতে কুপিয়ে মারা হয়।এ হত্যার ঘটনায় পাড়ার প্রতিপক্ষ ১৫ জনের বেশি অংশ নিলেও স্বজনরা জড়িত থাকা পাঁচজনের নাম বলেছেন। এরা হলেন- রুইতুই ম্রো (৬৩), পালে ম্রো, কাইনপ্রে ম্রো, থংওয়ে ম্রো ও ত্লাসাই ম্রো।

পাড়ার নারীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে রুমা উপজেলার গ্যালেংগা ইউনিয়নের আবুপাড়ার পাড়াপ্রধান কারবারি লকরুইয়ের সঙ্গে স্থানীয়দের মধ্যে জুম দখল নিয়ে বিরোধ চলছিল। হঠাৎ পাড়ায় কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েন। পাড়াবাসীর সন্দেহ, কারবারি লকরুইয়ের পরিবারের সদস্যরা গোপনে জাদুমন্ত্র করার কারণে পাড়ার লোকজন রোগাক্রান্ত হচ্ছেন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে পাড়ার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে পাড়াপ্রধান কারবারি লকরুইয়ের বাসায় যান। ওই সময় তারা লকরুইকে বলেন, মন্ত্রের বাণ ও তাবিজ কবজ দিয়ে যাদের অসুস্থ করে রেখেছেন, সবাইকে সুস্থ করে সেওে তুলুন। পাড়াবাসীর এ কথায় লকরুই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং তিনি যে তাবিজ-কবজের সঙ্গে জড়িত তা পাড়াবাসীকে প্রমাণ করতে বলেন। এ নিয়ে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে মারপিট শুরু হয়। ঘটনাস্থলেই লকরুইসহ একই পরিবারের চারজনকে মেরে ফেলেন পাড়াবাসীরা।

পরে আরেকটি ঘরে গিয়ে লকরুইয়ের সেজ ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করেন তারা। এ ঘটনায় কারবারি (পাড়াপ্রধান) ও তার বড় ছেলেসহ পাঁচজন মারা যায়।

পাড়াপ্রধানের স্ত্রী তুনকং ম্রো জানান, ওই রাতের ঘটনার পর থেকে তার চতুর্থ সন্তানকে খুঁজে পাচ্ছেন না। তাকেও মেরে ফেলা হয়েছে কিনা বলতে পারছেন না কেউ।

রুমা থানার এসআই আতিক জানান, ওই রাতে গুম করার জন্য লাশগুলো একটি ঝরনার খাদে ফেলে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ পাঁচটি লাশ উদ্ধার করে রুমা থানায় নিয়ে আসে।

অন্যদিকে অভিযুক্ত রুইতুই ম্রো হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘পাড়াপ্রধান মন্ত্রের জাদুর বাণ দিয়ে পাড়াবাসীকে অনেক কষ্ট দিয়ে মেরেছে। এটা অনেক দিন ধরে চলছে। তিন বছর ধরে আমার ছেলে অসুস্থ। তাই তিনি নিজ হাতে মেরেছি। এ হত্যার ঘটনায় অনেকেই অংশগ্রহণ করেছে।’

বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) কাজী রকিব উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবাই এ হত্যার দায় স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। গতকাল শনিবার ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো জেলা সদরের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

মন্তব্য

Beta version