-->

গাজরের গ্রাম সিংগাইর

আসাদ জামান, মানিকগঞ্জ
গাজরের গ্রাম সিংগাইর
কৃষকরা গাজর চাষ করছেন

মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার জয়মন্টপ ইউনিয়নের চর দূর্গাপুর গ্রামের কৃষক জাবেদ আলী। দুই যুগ ধরে তিনি গাজর চাষের সঙ্গে জড়িত। এ বছর আট বিঘা জমিতে তিনি গাজরের আবাদ করেছেন। দুই লাখ টাকা খরচ করে এবার তিনি পাঁচ লাখ টাকার গাজর বিক্রির আশা করছেন।

শুধু জাবেদ আলীই নন, উপজেলার প্রায় ১০ হাজার কৃষক এই গাজর চাষের সঙ্গে জড়িত। তিন দশক ধরে সিংগাইর উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকায় গাজরের আবাদ হচ্ছে। শুধু গাজর চাষ করেই এ অঞ্চলের অনেক চাষি পাল্টে ফেলেছেন নিজেদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা। দিন দিন আবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় সিংগাইর উপজেলার বেশিরভাগ গ্রামই এখন ‘গাজর গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ১১শ’ হেক্টর জমিতে গাজরের আবাদ হয়েছে। উপজেলার কিটিংচর, দেউলী, দশানী, ভাকুম, নয়াপাড়া, মেদুলিয়া, গাজিন্দা, লক্ষীপুর, নীলটেক, কানাইনগর, মোসলেমাবাদ, বিন্নাডাঙ্গী, আজিমপুর ও চর দূর্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি কৃষক গাজর চাষের সঙ্গে জড়িত। ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে বিঘাপ্রতি গাজর উৎপাদন হচ্ছে দেড়শ’ থেকে ২০০ মণ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এ অঞ্চলের গাজর যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে।

দূর্গাপুর গ্রামের কৃষক আমিনুর রহমান জানান, আট বছর ধরে গাজর চাষ করছেন তিনি। এবারো ৯ বিঘা জমিতে গাজরের আবাদ করেছেন। বিঘাপ্রতি সব মিলে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। মাত্র আড়াই থেকে তিন মাসে দ্বিগুণের বেশি লাভ হওয়ায় তাদের এলাকার অধিকাংশ জমিতে এই মৌসুমে কৃষকরা গাজরের চাষ করে থাকেন।

শায়েস্তা ইউনিয়নের কানাইনহর গ্রামের কৃষক আলী হোসেন বলেন, এবার বীজের দাম আগের বারের চেয়ে বেশি। গত বছর এক কেজি বীজের দাম নিয়েছিল ১২ হাজারের মতো। এবার দাম বেড়ে ১৬ থেকে ১৮ হাজারে বিক্রি হয়েছে। বীজের দাম কম হলে আমরা আরো বেশি লাভবান হতে পারতাম।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই মৌসুমে সিংগাইরে গাজর চাষ হওয়ায় অনেকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। তারা গাজর বপন, পরিচর্চা, উত্তোলন, ধৌতকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ করে থাকেন। এখানকার গাজর ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ টিপু সুলতান সপন বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাজরের বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি। বিগত সময়ে গাজর চাষ করে এ অঞ্চলের ১০ হাজারেরও বেশি কৃষকের আর্থিক উন্নয়নসহ ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।’

চলতি বছর ১১শ’ হেক্টর জমিতে গাজর চাষ হয়েছে। বিঘাপ্রতি গড় উৎপাদন ২শ’ মণের ওপরে। এ উপজেলা থেকে বার্ষিক প্রায় পাঁচ কোটি টাকার গাজর বিক্রি হয়। গাজর চাষে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য

Beta version