-->
শিরোনাম

কদর কমেছে মাটির ব্যাংকের

কামরুজ্জামান মিন্টু, ময়মনসিংহ
কদর কমেছে মাটির ব্যাংকের
বিক্রির জন্য থরে থরে সাজানো আছে মাটির তৈরি ব্যাংক

মাটির তৈরি জিনিসপত্র বা মৃৎশিল্প আবহমান গ্রামবাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য। মাটির তৈরি জিনিসপত্রের মধ্যে অন্যতম মাটির ব্যাংকে টাকা জমানোর স্মৃতি কমবেশি সবারই আছে। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের বিবর্তনে মাটির তৈরি তৈজসপত্রের সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে মাটির ব্যাংক। কদর কমায় মৃৎশিল্পীরা ঐতিহ্যবাহী এই পেশা বাদ দিয়ে যোগ দিচ্ছেন অন্য পেশায়।

কয়েকজন বয়োবৃদ্ধের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে যেকোনো মেলায় গেলে মাটির জিনিস পাওয়া যেত। বিভিন্ন মাটির জিনিসের মধ্যে মাটির ব্যাংক ছিল উল্লেখযোগ্য।

নানা আকৃতির রং-বেরঙের সেই মাটির ব্যাংক নজর কাটত সবার। অনেক কিছু কেনার মধ্যে এ ব্যাংকটিও কেনা হতো। পরে টাকা জমানো হতো ব্যাংকে।

ষাটোর্ধ্ব বয়সী রবীদ্রনাথ পাল ময়মনসিংহ শহরের গাঙ্গিনাড়পাড় এলাকার ইলেকট্রনিক ব্যবসায়ী। বাল্যকালে মাটির ব্যাংকে টাকা জমানোর স্মৃতি মনে করে দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, মাটির ব্যাংক নামটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক স্মৃতি। বছর শেষে নতুন ক্লাসে ওঠার সময় কয়েকটি পুরাতন বই বিক্রি করে দিতাম। পরে এই টাকা মাটির ব্যাংকে জমা রাখতাম।

তিনি আরো বলেন, এ ছিল অন্যরকম এক আনন্দ। তবে, এখনো গ্রামাঞ্চলের ছেলেমেয়েসহ পরিবারের লোকজন মাটির ব্যাংকে টাকা জমা রাখলেও শহরের ছেলেমেয়েরা এসব চিনে না। ফলে হাতেগোনা কয়েকটি গ্রামাঞ্চলে মাটির ব্যাংকে টাকা জমানোর রীতি এখনো প্রচলিত আছে।

হাশেম আলী নামে আরেক বয়োবৃদ্ধ বলেন, ঈদের সেলামি, স্কুলের টিফিনের টাকা, বাবার পকেটের খুচরা টাকা ব্যাংকে জমা রাখতাম। ব্যাংকটি পয়সা আর খুচরা টাকা দিয়ে পরিপূর্ণ হলে ভেঙে ফেলতাম। পরে এই টাকায় শখের বিভিন্ন জিনিস কিনতাম।

ছায়ানট ময়মনসিংহের সভাপতি আপেল চৌধুরী দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘মাটির তৈরি জিনিসপত্র বা মৃৎশিল্প আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য। এক সময় বাংলাদেশে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের ব্যাপক ব্যবহার ও চাহিদা ছিল। আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের বিবর্তনে মাটির তৈরি অনেক নিপুণ হাতের তৈরি তৈজসপত্র হারিয়ে যেতে বসেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘মাটির তৈরি তৈজসপত্র টিকিয়ে রাখতে মৃৎশিল্পীদের সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা প্রয়োজন। কারণ মাটির তৈজসপত্র তৈরির কাজে শিল্পীদের দুর্দিন শুরু হয়েছে। তারা যদি এই পেশা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়, তাহলে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে। ফলে এমন একদিন আসবে, মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র জাদুঘরে গিয়ে দেখবে আগামী প্রজন্ম।’

মন্তব্য

Beta version