-->
শিরোনাম
ঝিনাইদহে পাঁচ বছরে নিহত ১২৬, আহত ১৭ হাজার

‘পুলিশ ধরে-মামলাও দেয়, সিস্টেম করে চলি’

শাহারিয়ার রহমান রকি, ঝিনাইদহ 
‘পুলিশ ধরে-মামলাও দেয়, সিস্টেম করে চলি’
দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি

ঝিনাইদহে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোট-বড় সব দুর্ঘটনা। সড়ক-মহাসড়কগুলোয় নিষিদ্ধ তিন চাকার যানের অবাধ চলাচল, অন্যান্য যানবাহনের বেপরোয়া গতির প্রতিযোগিতা আর চালকের অদক্ষতাই এসব দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে মনে করছে সচেতন মহল।

জেলার ঝিনাইদহ-ঢাকা মহাসড়ক, ঝিনাইদহ-যশোর, ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়াসহ প্রতিটি আঞ্চলিক সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওই সব সড়কে অবাধে চলাচল করছে আলমসাধু, নসিমন, ভটভটি, ইজিবাইক, ইঞ্জিনচালিত ভ্যান। শহর ও সড়কের যেখানে-সেখানে দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা হচ্ছে। সিগন্যাল না মেনে ছোট যানগুলো সড়ক থেকে উঠে পড়ছে মহাসড়কে। ফলে গতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় দুর্ঘটনা হচ্ছে।

অথচ ২০১৪ সাল এবং এরপর থেকে কয়েক দফায় তিন চাকার যানকে মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ করে হাইকোর্ট ও সরকারের বিভিন্ন মহল। তবু সেই নিষিদ্ধ আদেশ আজো বাস্তবায়ন হয়নি।

এই তিন চাকার যানের পাশাপাশি বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেলগুলোও চলছে বেপরোয়া গতিতে, চলছে ফিটনেসবিহীন গাড়িও। এসবের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় কিংবা অগ্নিকাণ্ডে উদ্ধারে নিয়োজিত দ্রুতগামী ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্সের চালকদের গন্তব্যে পৌঁছাতে বেগ পেতে হয়।

ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের থেকে পাওয়া তথ্যে, ২০১৭ সালে জেলায় ২৩৩ সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও ৪৮৬ জন আহত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে ২৬৮ দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ও ৫০২ জন আহত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে ১১২ দুর্ঘটনায় ১৮২ জন আহত এবং ১৪ জন নিহত হয়েছিলেন।

২০২০ সালে ২৫৮ দুর্ঘটনায় ৪০৯ জন আহত এবং ২১ জন নিহত হয়েছিলেন। ২০২১ সালে ২৮৯ দুর্ঘটনায় ৩৮৫ জন আহত এবং ৪১ জন নিহত হয়েছিলেন। এ ছাড়া ২০২২ সালের বর্তমান সময় পর্যন্ত ১০টি দুর্ঘটনায় ১৭৬ জন আহত ও ১৩ জন নিহত হয়েছেন।

অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালগুলোতে ২০১৭ সালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৯৮৭ জন, ২০১৮ সালে ২২৫৫ জন, ২০১৯ সালে ৩০৮৯ জন, ২০২০ সালে ৩৭৪৫ জন, ২০২১ সালে ৪৭৩৮ জন এবং ২০২২ সালের বর্তমান সময় পর্যন্ত ১২২৯ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।

সব মিলিয়ে জেলায় গত ৫ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১২৬ জন আর আহত হয়ে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন ১৭ হাজার ৩৮ জন।

ঝিনাইদহ-যশোর সড়কের লাউদিয়া এলাকায় পথচারী শরিফুল ইসলাম জানান, সড়কের পাশ দিয়ে হাঁটা যায় না। ভয় লাগে কখন যেন গাড়ি চাপা দেয়। কারণ অত্যন্ত বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচল করে। এখন সড়ক যেন মানুষের কাছে একটা আতঙ্কের নাম।

অপর পথচারী শাহীন বিশ্বাস বলেন, ‘যেখানে-সেখানে ছোটগাড়িগুলো যাত্রী ওঠানামা করায়। এদের নিয়ন্ত্রণে কেউ নেই। বারবার সড়ক নিরাপদ করতে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন, তিন চাকার যানের চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও তার কোনো বাস্তবায়ন নেই। আমাদের সড়কগুলো যেন অভিভাবকহীন। এই অভিভাবকহীন সড়কে দুর্ঘটনা তো ঘটবেই। তাই বারবার এমন আশ্বাস না দিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের উচিত কাজের বাস্তবায়ন করা, সড়কগুলো নিরাপদ করা।’

শৈলকুপা এলাকার আলমসাধুর চালক ইমন জোয়ারদার বলেন, ‘মহাসড়কে আলমসাধু চলাচল নিষিদ্ধ তা জানি। কিন্তু রোজগারের আশায় আলমসাধু চালাই। সংসার তো চালাতে হবে। আমাদেও তো কেউ এসে বাড়িতে খাবার দিয়ে যায় না।’

নসিমন চালক হামজা বিশ্বাস বলেন, ‘মহাসড়কে ভাড়া বেশি পাওয়া যায়। গ্রামে একটি ভাড়া মারলে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পাওয়া যায়, সেখানে গ্রাম থেকে একটি ভাড়া নিয়ে শহর এলাকায় গেলে দুই শত টাকা পাওয়া যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কম-বেশি হয়। তাই আসি। মাঝে মাঝে পুলিশ ধরে, মামলা দেয়। আবার কিছু চা খরচ দিলে ছেড়েও দেয়। এভাবেই সিস্টেম করে চলি।’

ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক শামিমুল ইসলাম জানান, মোট দুর্ঘটনার ৩০ থেকে ৪০ ভাগই তিন চাকার যানের কারণে ঘটে। ৪০ ভাগ মোটরসাইকেল আর বাকি ২০ ভাগ বড় যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে তাদের অদক্ষতা আর দ্রুতগতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা গেলে কমে আসবে দুর্ঘটনা। একই সঙ্গে চালকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বরত বাহিনীকেও আরো দায়িত্বশীল হতে হবে।

ঝিনাইদহ ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন জানান, মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধে ও দ্রুতগতি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত পুলিশের অভিযান চলছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার পাশাপাশি চালকদের সতর্কতা অবলম্বনের জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে।

মন্তব্য

Beta version