ভালো জাত আর চাষ পদ্ধতির উন্নয়নের কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন পাচ্ছেন কৃষকরা। সেই সঙ্গে বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় দামও মিলছে ভালো। তাই অন্যান্য ফসলের তুলনায় ঝিনাইদহ জেলায় পেঁয়াজের চাষ বাড়ছে।
চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের চারা রোপণ করেছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাড়তি ফলনের আশায় এখন ক্ষেত পরিচর্যায় সময় পার করছেন তারা। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষেতে ছুটছেন। বিকেল অবধি একটানা চলে পরিচর্যার কাজ।
জেলার শৈলকুপা উপজেলার কৃপালপুর, ফটিকতলা, আবাইপুর, মীনগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় মেলে এমন চিত্র। কেউ পেঁয়াজ গাছের গোড়া কুপিয়ে দিচ্ছেন, আবার কেউ আগা পরিষ্কার করছেন। অনেক কৃষক আবার ক্ষেতে সার ছিটিয়ে দিচ্ছেন।
সাধারণত ঝিনাইদহ জেলায় বারি পেঁয়াজ-১ এবং লাল তীর কিং জাতের পেঁয়াজের আবাদ বেশি হয়ে থাকে। আর বীজ থেকে চারা তৈরি করে তা ক্ষেতে রোপণ করা হয় বলেও বর্তমানে আবাদকৃত পেঁয়াজ স্থানীয়ভাবে চারা পেঁয়াজ নামেও পরিচিত।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৮১১ হেক্টর জমিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫১ হেক্টর বেশি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪৮৫ হেক্টর, শৈলকুপায় ৯ হাজার ৩৩৭ হেক্টর, হরিণাকুণ্ডতে ৩৯০ হেক্টর, কালীগঞ্জে ২৬০ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ১৩২ হেক্টর ও মহেশপুরে ১২০৭ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে পেঁয়াজের। আর জেলায় বছরে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ৪৫ হাজার টন।
এদিকে গেল ২০২০-২১ মৌসুমে জেলায় ১০ হাজার ৪৭২ হেক্টর জমিতে চাষের বিপরীতে পেঁয়াজের ফলন হয়েছিল ১ লাখ ৯০ হাজার ৭৬৮ টন। এর মধ্যে জেলার চাহিদা মিটিয়ে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৮ টন পেঁয়াজ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়েছিল।
শৈলকুপা উপজেলার ফটিকতলা এলাকার কৃষক মিঠু ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা পেঁয়াজের সারির মাঝে কুপিয়ে দিচ্ছি। ফলে গাছের গোড়া মাটি দিয়ে বাধা হচ্ছে। এতে পেঁয়াজের আকার বড় হবে, ফলনও হবে বেশি। আর কয়েকদিনের মধ্যেই কিছু ওষুধ স্প্রে করা হবে।’
একই এলাকার কৃষক মতি বিশ্বাস বলেন, ‘ক্ষেতের প্রায় এক মাস হলো পেঁয়াজ লাগিয়েছি। ক্ষেতে কিছু আগাছা হয়েছে। সেগুলো নিড়ানি দিয়ে পরিষ্কার করে দিচ্ছি।’
বাঘিণী গ্রামের কৃষক পিকুল মুন্সী বলেন, ‘বেশ কিছুদিন পেঁয়াজ লাগানো হয়েছে। খাদ্য সংকটের গাছের জোর কমে গেছে। তাই ইউরিয়া সার দিচ্ছি। এই সার পেলে পেঁয়াজ গাছে শক্তি বৃদ্ধি পাবে। পেঁয়াজও অনেক বড় হবে।’
তিনি আরো জানান, ফলন ভালো হলে বিঘাপ্রতি ৯০ থেকে ১০০ মণ পেঁয়াজ পাওয়া যায়। গতবার লাভ ভালো হওয়ায় এ মৌসুমে অনেকেই জমি লিজ নিয়ে বাড়তি চাষ করছেন।
‘গেলবারের তুলনায় এবার প্রকারভেদে পেঁয়াজ বীজের দাম কমেছে কেজিতে গড়ে ছয় হাজার টাকা। তাই আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সব মিলিয়ে পেঁয়াজের ভালোই ফলন পাওয়া যাবে’, বলেন পিকুল মুন্সী।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজগর আলী জানান, পেঁয়াজ চাষের বিষয়ে নিয়মিত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের ও মাঠের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভালো ফলন পেতে সালফার কনটেন্ট জাতীয় সার ব্যবহার করার জন্য কৃষকদের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য