ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিশখালী নদীতে থামানো যাচ্ছে না বালু সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। সম্প্রতি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান হওয়ায় ‘দুষ্টচক্রের’ বাণিজ্যের হিসাব পাল্টে যেতে বসেছে। ফলে এ বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে সিন্ডিকেট সদস্যরা নড়েচড়ে বসেছে। অভিযান বন্ধে তারা এবার নেমেছেন তদবিরে।
অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ বালুর বাণিজ্য করে শহরের বেশ কয়েকজন বৈভবের মালিক হয়েছেন। ফুটপাত থেকে একাধিক ড্রেজার এবং ট্রলার মালিক হয়েছেন অনেকে। রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বৈভবের মালিক হয়েছেন বালু সিন্ডিকেটের সদস্যরা। অবৈধ ড্রেজারগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র না থাকায় অভিযান চালিয়ে এগুলো জব্দ করার দাবি নদীভাঙনকবলিত এলাকাবাসীর।
জানা যায়, ড্রেজারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় হুমকির মুখে পড়েছে ঝালকাঠি শহর রক্ষাবাঁধ। অন্যদিকে নদী তীরের আবাদি জমি, বসতঘর সবকিছু হারিয়ে সর্বহারা হচ্ছে শত শত পরিবার। অথচ বালু সিন্ডিকেটের সদস্যরা চড়া দামে নদীর বালু বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
প্রতি মাসে কোটি টাকার এই অবৈধ বাণিজ্যের কমিশন বিভিন্ন স্থানে দিয়ে ম্যানেজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চালানো হচ্ছে বালু বাণিজ্য। ইতিপূর্বে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে সিন্ডিকেটের অবৈধ বালু উত্তোলন দিনের বেলায় বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু তাতেও থেমে নেই সিন্ডিকেট। এরপর হয়েছে রাতের বাণিজ্য।
নির্বিঘ্নে একটানা মাসের পর মাস রাতে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি ঝালকাঠিতে বদলি হয়ে আসেন জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বশির গাজী। তিনি ঝালকাঠির কর্মস্থলে যোগ দিয়েই গত এক মাসে তিনবার রাতে সুগন্ধা নদীতে অভিযান পরিচালনা করেন। এসব অভিযানের মাধ্যমে সিন্ডিকেট সদস্যদের বড় অংকের জরিমানা, কারাদণ্ড করেছেন। যা ছিল সাধারণ মানুষের কল্পনাতীত।
অভিযানের সময় ধরা পড়ার পর এ কাজ থেকে বিরত থাকার হলফনামা দিলেও থেমে নেই বালু উত্তোলন। ফাঁকে ফাঁকে তারা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করেই যাচ্ছে। নদীভাঙনে সর্বহারা মানুষের দাবি যতদিন এদের ড্রেজার যন্ত্রপাতি জব্দ করে মামলা দেওয়া না হবে ততদিন এই অবৈধ কার্যক্রম থামানো যাবে না। যদিও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বশির গাজী জানিয়েছেন এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বশির গাজী এ বছরের গত ২৪ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন শ্রমিককে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এছাড়া গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাত পৌনে ৮টার দিকে গোপন সংবাদে সুগন্ধা নদীতে অভিযান চালিয়ে ড্রেজারে বালু উত্তোলন করায় তিনজনকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন একই বিচারক।
তৃতীয় অভিযান চালানো হয় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে। অভিযানে পাঁচ ড্রেজার ও বাল্কহেডের মালিককে মোট দুই লাখ ৫৫ হাজার ৮৬০ টাকা জরিমানা করা হয়।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠির রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বশির গাজী বলেন, ‘সুগন্ধা নদী থেকে প্রায় সময়ই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে একটি অসাধু মহল। প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে একটি চক্র রাতের আঁধারে বালু উত্তোলন করছে। এতে সুগন্ধার বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
‘আমরা বিভিন্ন সয়য় একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। তাদেরকে প্রমাণসহ ধরে আইন অনুযায়ী অর্থদণ্ড দেয়া হচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নদীর মাঝখান থেকে বালু উত্তোলনের কারণে ঝালকাঠি লঞ্চঘাট থেকে কাটপট্টি পর্যন্ত বেড়িবাঁধটি ভেঙে যাচ্ছে। তীব্রতর হচ্ছে নদীভাঙন। তাই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে আমরা আরো কঠোর অভিযান পরিচালনা করব।’
দীর্ঘ বছর ধরে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে দিনে ও রাতে অবৈধভাবে একটি সিন্ডিকেট ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছে। এতে নদী তীরের শত শত মানুষ প্রবল ভাঙনের কারণে আবাদি জমি এবং বসতবাড়ি হারিয়ে সর্বহারা হচ্ছে। ঝালকাঠি শহর রক্ষা বাঁধও এখন ভাঙনের হুমকির মুখে। বালু উত্তোলন এবং বন্ধের প্রতিবাদে এলাকার মানুষ মানববন্ধনসহ লিখিত অভিযোগ করেও কোনো সুফল পাননি।
মন্তব্য