-->
শিরোনাম

দ্বন্দ্বে স্তিমিত জাতীয় পার্টি

কামরুল ইসলাম মাহি, সিলেট
দ্বন্দ্বে স্তিমিত জাতীয় পার্টি
প্রতীকী ছবি

একসময় জাতীয় পার্টির দুর্গ সিলেট হলেও এখন সমর্থন তলানিতে। কঠিন সংকটে পড়া দলটির নেই কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা। অভিযোগ রয়েছে, জাতীয় কিংবা স্থানীয় বিষয়ে কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায় না জেলার দলীয় নেতাকর্মীদের। মূল কারণ নেতৃত্ব কেন্দ্রীক জটিলতা। এর মধ্যে কুনু-উছমান দ্বন্দ্ব এখন চরম আকার ধারণ করেছে। মতানৈক্য ও নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধে দলটির ভবিষ্যৎ এখন ঘোর অন্ধকারে।

কুনু মিয়া সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আর উছমান আলী কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পাশাপাশি দায়িত্বে রয়েছেন জেলার সদস্য সচিব হিসেবে। কুনু-উছমান দ্বন্দ্ব বিগত দিনে শীতল থাকলেও তা প্রকাশ পায় সদ্যসমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে। এর জেরে বিরোধ তুঙ্গে ওঠে উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠনে। সদস্য সচিব ছাড়া আহ্বায়ক নিজে একা বিভিন্ন উপজেলা কমিটি অনুমোদন দেন।

অন্যদিকে আহ্বায়কের মতামত ছাড়া সদস্য সচিব বিভিন্ন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের এমন কর্মকাণ্ডে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও বিব্রতবোধ করছেন। এ নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ কথাও বলতে পারছে না।

সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এ দলের রাজনীতি বোঝা খুব কঠিন বিষয়। কেন্দ্র থেকে কোনো সময় কাকে নেতা বানানো হয়, আবার কার চেয়ার কোন সময় কেড়ে নেয় এটা বোঝা খুব মুশকিল। এজন্য উপজেলাসহ তৃণমূলের কর্মীরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন।’

তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতারা টাকার বিনিময়ে কমিটি করছেন, মনোনয়ন দিয়েছেন। সিলেটের অনেককে টাকার বিনিময়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ দেওয়া হচ্ছে। জেলার জাতীয় পার্টির দায়িত্বশীলদের দলের প্রতি মনোযোগ নেই। মহাজোটের শরিক হিসেবে আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে সংসদ সদস্য হওয়াই নেতাদের লক্ষ্য।’

এসব বিষয়ে শুনে অনেকটা আপসোস নিয়ে সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘গত সাত বছরে সিলেটে কেউ তৃণমূল শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়নি। আমি দায়িত্বে থাকাকালে পদে দলীয় প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু এখন দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে সিলেটে জাতীয় পার্টির অবস্থান দিন দিন দুর্বল হচ্ছে।

‘গত ইউপি নির্বাচনে সিলেট জেলার ১০৫টি ইউপির মধ্যে মাত্র ৩৬টিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী দিতে পেরেছে। এর মধ্যে পাস করেছেন মাত্র দুজন।’

দলীয় একটি সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলনে কুনু মিয়াকে সভাপতি ও প্রয়াত নেতা সৈয়দ আবুল কাশেম মন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয় পার্টির কমিটি ঘোষণা করেছিলেন জাপার প্রয়াত চেয়ারম্যান এরশাদ।

২০০৬ সালে কুনু মিয়া দলীয় সভাপতি পদ থাকা অবস্থায় বিএনপিতে যোগদান করেন। দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার পর ২০২০ সালের নভেম্বরে বনানী কার্যালয়ে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের হাতে ফুল দিয়ে আবার দলে ফের যোগ দেন কুনু। জেলার আহ্বায়কের পদও পান।

এ বিষয়ে কুনু মিয়া বলেন, আমি দলে ফিরেছি। দলকে চাঙা করতে কেন্দ্রে থেকে নির্দেশনা পেয়ে মাঠে কাজ করছি।

দলের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সম্প্রতি কুনু মিয়াকে আহ্বায়ক ও উছমান আলীকে সদস্য সচিব করে ১০১ সদস্যের কমিটির অনুমোদন দেন দলটির বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের। এ দুজনকে প্রধান দুই পদে দায়িত্ব দেওয়ার পর রাজনীতির মোড় পাল্টে যায়। তাদের দ্বন্দ্বে বিব্রত হয়ে ওঠেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

একদিকে একক সিদ্ধান্তে উছমান আলী যেমন কমিটি ভাঙছেন; ঠিক পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে একক সিদ্ধান্তে কমিটি দিচ্ছেন কুনু মিয়া। একক সিদ্ধান্তে কানাইঘাট উপজেলা ও পৌরসভা এবং জকিগঞ্জ পৌর ও উপজেলা কমিটি মেয়াদোর্ত্তীণ হওয়ায় বিলুপ্ত ঘোষণা করেন দলটির জেলার সদস্য সচিব উছমান আলী। এর জবাব হিসেবে সম্প্রতি গোলাপগঞ্জ উপজেলা ও পৌর কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক কুনু মিয়া।

এ বিষয়ে জাপার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলার সদস্য সচিব উছমান আলী ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর আহ্বায়ক কুনু মিয়া পার্টি অফিসে না এসে বয়স বিবেচনায় প্রায়ই আমাকে তার বাসায় ডাকতেন। তিনি আমার সিল ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করেছেন। আমি কেন্দ্রকে বিষয়টি জানিয়েছি।’ উছমান আলী আরো বলেন, ‘সদস্য সচিবের বাইরে আমি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছি। আর যে তিনটি কমিটি আমি বিলুপ্ত করেছি, তা কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তেই।’

আহ্বায়ক কুনু মিয়া বলেন, ‘সদস্য সচিবের সঙ্গে আমার কোনো দূরত্ব নেই। কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে দুজনেই একসঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু জকিগঞ্জে ইউনিয়ন নির্বাচনের একদিন আগে তিনি (উছমান আলী) কমিটি বিলুপ্ত করেন। একই দিন কানাঘাট পৌর ও উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত করেন। আমার মতামত ছাড়া কমিটি বিলুপ্ত করায় বিষয়টি কেন্দ্রকে জানিয়েছি।’

সদস্য সচিবের সিল ও স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এসব সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’

এদিকে সাংগঠনিক ব্যর্থতার দায়ে সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির কমিটি বিলুপ্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ একজন কেন্দ্রীয় নেতা।

নাম প্রকাশ না করে তিনি রোববার বিকেল ৩টার দিকে ভোরের আকাশকে বলেন, ‘সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার কথা কেন্দ্রে চলছে। হয়তো আজ অথবা কালই এ সিদ্ধান্ত হতে পারে।’

বিষয়টি নিয়ে সিলেট জেলা কমিটির সদস্য সচিব উসমান আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিষয়টি আমিও শুনেছি। আজ (রোববার) রাতে প্রেসিডিয়াম কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’

আরো পড়ুন: ভেঙে গেল সিলেট জেলা-মহানগর জাপার কমিটি

মন্তব্য

Beta version