-->

সিসার বিষে মরছে গরু

বিজন কুমার দাস, দিনাজপুর
সিসার বিষে মরছে গরু
অবৈধ ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির কারখানা

দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলার ৯নং ভিয়াইল ইউনিয়নের নানিয়াটিকর গ্রাম। সবুজে ঘেরা এই গ্রামের মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির কারখানা। এর বিষাক্ত গ্যাসে ওই এলাকার অনেক গরু-ছাগলের মৃত্যু হয়েছে। সেসঙ্গে গ্রামবাসীর অনেকের মধ্যে দেখা দিয়েছে শ্বাসকষ্ট। এ অবস্থায় দ্রুত কারখানাটি বন্ধের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

জানা যায়, গত ৮ মাস আগে উপজেলার পাঁচবাড়ী ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির কারখানাটি তৈরি করেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা। আর গত চার মাস থেকে এখন পর্যন্ত কারখানার বিষাক্ত গ্যাসে নানিয়াটিকর এলাকায় ১৬টি গরু মারা গিয়েছে।

সম্প্রতি এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়- আনুমানিক ৮ থেকে ৯ মাস আগে ১০ থেকে ১২ জন কর্মী দিয়ে নির্মাণ করা হয় এই সিসা তৈরির কারখানা। যে কারখানার চুলায় গভীর রাতে এসিড ব্যাটারি পোড়ান হয়। যার নির্গত গ্যাস বায়ুদূষণ করে। যার ফলে আশেপাশের গবাদিপশুসহ মানুষ মারাত্মক শ্বাস কষ্টে ভুগছে।

এ কারণে গত চার মাস আগে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে মারা যায় গবাদিপশু। কারখানাটি গড়ে ওঠার পর গত দুই মাসে সকাল রায়ের তিনটি, বিমল রায়ের একটি, বাবুল রায়ের একটি, পরেশ রায়ের একটি, সুবাশ রায়ের দুটি, আশুতোষ রায়ের দুটি, আলতাফ হোসেনের দুটি, আনোয়ার হোসেনের একটি, সুশিলা রায়ের একটি ও শাহ আলমের দুটি গরু মারা গেছে। এছাড়াও এই গ্রামের ৮ থেকে ১০টি গরু অসুস্থ অবস্থায় আছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, চিরিরবন্দর সীমান্তের আত্রাই নদী অংশে নানিয়াটিকর গ্রামের আম ও লিচুর বাগানের ভেতরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য আব্দুল মালেক অবৈধভাবে ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির কারখানা গড়ে তোলেন। কারখানাটির ফলে আশপাশের অনেক আম, লিচু ও কাঁঠালের গাছ পুড়ে গেছে।

প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ভোররাত পর্যন্ত কারখানার কার্যক্রম চালায় কর্তৃপক্ষ। এই কারখানায় পুরাতন ব্যাটারি এনে পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হয়। এরপর সেই সিসাগুলো ট্রাকে ঢাকার বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে পাঠানো হয়।

নানিয়াটিকর এলাকার দুঃখিনী রানী রায় ভোরের আকাশকে বলেন, এই কারখানার এসিডের গ্যাসে আমার গরু মারা গেছে। এই কারখানার আশেপাশে গরুকে ঘাস খাওয়ানোর পর একদিন সকাল থেকেই গরুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে সন্ধ্যায় গরুটি মারা যায়। কারখানা বন্ধ না হলে সমস্যা হতেই থাকবে।

একই এলাকার সূর্য বালা জানান, এই কারখানার জন্য তার গোয়াল শূন্য রয়েছে। কারখানার গ্যাসে তার তিনটি গরু মারা গেছে। এতদিন তো এমন ক্ষতি হয়নি। এই কারখানার বিষাক্ত গ্যাসের জন্যই এমন হচ্ছে। এই ক্ষতিপূরণ কে দেবে? এ সময় তিনি এই কারখানা বন্ধের দাবি জানান।

৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কমল রায় বলেন, ‘কারখানার কারণে আমার ওয়ার্ডের গ্রামের অনেক গরু মারা গেছে। এলাকার লোকজন এর আগে কারখানা ভাঙে দিয়েছিল। তারপরে আবার করছে। আমি এলাকাবাসীকে অভিযোগ দিতে বলছি।’

এই বিষয়ে কারখানার মালিক আব্দুল মালেকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর আমাকে আগামী ৫ মার্চের মধ্যে কারখানা সরিয়ে নিতে বলেছে। আমি সেই সময়ের মধ্যে কারখানা সরিয়ে নেব।’

গ্রামের কিছু লোক কারখানার জন্য চাঁদার দাবি করেছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।

চিরিরবন্দর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা সারফরাজ হোসেন বলেন, ‘নানিয়াটিকর গ্রামে একাধিক গরুর মৃত্যুর খবর শুনে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। এছাড়া অসুস্থ গরুগুলোকে চিকিৎসা দিয়েছি। ব্যাটারি পোড়ানোর কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ার ফলে গরুগুলো মারা গেছে। কারখানা বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে মানুষের জন্য ক্ষতি হতে পারে।’

চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। তারা (কারখানা কর্তৃপক্ষ) কাজটি ঠিক করেনি। আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে কারখানাটি বন্ধের বিষয়ে পদক্ষে নেব।’

দিনাজপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক একেএম ছামিউল আলম কুরশি বলেন, ‘এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই কারখানাটি বন্ধের জন্য কর্তৃপক্ষকে বলেছি। যদি তারা কারখানা বন্ধ না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

 

মন্তব্য

Beta version