-->
শিরোনাম

অবৈধ ইটভাটা জ্বলছেই

রিজভী রাহাত, বান্দরবান
অবৈধ ইটভাটা জ্বলছেই
অবৈধ ঘোষণা করার পরও চলছে ইটভাটা

আদালতের নির্দেশে বান্দরবান প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ১৪টি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করেছিল। কিন্তু সেই ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম এখনো পুরোদমে চালু রয়েছে।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে ১২টি ও আলীকদমে ২টি ইটভাটা জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত বন্ধ করে দেয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাটা মালিকরা স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে আসছেন। পাহাড় কেটে মাটি এবং জ্বালানি হিসেবে বনের কাঠ ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছেন ইটভাটার কাজ।

এ ছাড়া এই মাসের ১০ ফেব্রুয়ারি ১৪টি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হলেও তা কখনোই বন্ধ হয়নি। জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত চলে যাওয়ার পরপরই আবার কার্যক্রম চালু করে ইটভাটা মালিকরা, যা এখন পুরোদমে চালু।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির সব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম সাতদিনের মধ্যে বন্ধের আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি প্রতিবেদন আকারে দাখিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১০ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কায়েসুর রহমান ও মামুনুর রশীদ। এ সময় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইউএমবি, এসকেবি, এসবিডব্লিউ, এফএসি, ইবিএম, এমবিএম, এসবিএম, এমএমবি, পাইভএমবি, এমবিআই, এনআরবি, ইউএমবিসহ ১৪টি ইটভাটা বন্ধ ঘোষণা করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন তারা।

এছাড়া প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯)-এর বিভিন্ন ধারায় অনুমতিবিহীন ইটভাটা স্থাপনের দায়ে ওই ১৪টি ইটভাটার মালিককে সর্বমোট ১৬ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল কাদের বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটা মালিক এতই প্রভাবশালী যে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা যায় না। স্থানীয় লোকজন প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করলে তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়। জেলা প্রশাসনের ১৪টি বন্ধ করে দিলেও ভাটার কাজ বন্ধ হয়নি। এ ঘটনা আমাদের বিস্মিত করেছে। আমরা আরো বেশি অসহায় বোধ করছি।’

বন্ধ ঘোষণার পরও ইটভাটা চালু রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে লামা ফাইতং ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কবির খান বলেন, ‘আগের তৈরি কাঁচা ইটগুলো পোড়ানো হচ্ছে। নতুন করে কোনো ধরনের ইট তৈরি করা হচ্ছে না। কয়েক কোটি টাকা লোকসান থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের এ নিষেধাজ্ঞা মানতে পারছে কেউ।’

ইউএমবি, এসকেবি, এসবিডব্লিউ, এফএসি, ইবিএম, এমবিএম ব্রিকসের মালিক সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কথা বলবেন না বলে জানান।

বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তর কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, ‘বান্দরবানে মোট ৬৩টি ইটভাটা রয়েছে। এর কোনোটিতেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। ফলে সব ইটভাটাই অবৈধ। আগামী সপ্তাহে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে পুনরায় ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেব।’

প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় পাহাড় কেটে গড়ে ওঠা অবৈধ এসব ইটভাটা বন্ধে অভিযান পরিচালনার কথা জানান পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মফিদুল ইসলাম।

তিনি আরো বলেন, ‘বান্দরবন জেলায় কোনো ইটভাটা বৈধ নয়। পরিবেশ আইন অনুযায়ী এ জেলায় কোনো ইটভাটা পরিচালনা যাবে না। হয় আইন পরিবর্তন করতে হবে, না হলে ইটভাটা উচ্ছেদ করতে হবে।’

বান্দরবান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কায়েসুর রহমান বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে বন্ধ ঘোষণা করা ইটভাটাগুলো যদি পুনরায় চালু হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

মন্তব্য

Beta version