-->
শিরোনাম

ভালো নেই কুড়িগ্রামের রবিদাসরা

সুজন মোহন্ত, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
ভালো নেই কুড়িগ্রামের রবিদাসরা
জুতা সেলাই করছেন শ্রী রয়েল রবিদাস

কুড়িগ্রাম পৌর শহরের একতা পাড়া, নিমবাগান ও চামড়ার গোলার রবিদাসরা ‘মুচি’ ভালো নেই। নিজেদের আদি পেশাকে আগলে ধরে কোনোরকমে টিকে আছে তারা। আয় কমে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন এই সম্প্রদায়ের লোকজন।

জানা গেছে, কুড়িগ্রাম শহরজুড়ে ১৫০ থেকে ২০০ রবিদাস সম্প্রদায়ের পরিবার বসবাস করছে। এসব পরিবারের সদস্যরা শহরের বিভিন্ন বাজারে, শপিংমলের সামনে ও রাস্তার মোড়গুলোতে বসে জুতা সেলাই করেন।

গত শুক্রবার সকালে কুড়িগ্রাম পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের একতাপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, এখানে ১১টি রবিদাস পরিবার বসবাস করছে। যাদের মধ্যে শ্রী রয়েল রবিদাস একজন। রয়েল রবিদাসের পরিবারে রয়েছে সাতজন সদস্য। প্রতিদিন তার রোজগার হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এই টাকা দিয়েই কোনোরকমে খেয়ে না খেয়ে তাদের জীবন চলে। থাকার ঘরটিও জরাজীর্ণ। পান না কোনো সরকারি সহায়তা।

রয়েল রবিদাসের মতো একই অবস্থা তার সম্প্রদায়ের বাকি পরিবারগুলোর।

এই এলাকার শ্রী মহেশ রবিদাস বলেন, ‘২০ বছর ধরে জুতা সেলাই করি। আগে দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা রোজগার হতো। এখন প্রতিদিন গড়ে ১৫০-২০০ টাকা আয় হয়। আবার মাঝে মাঝে সেটিও হয় না।’

মহেশ রবিদাসের ভাই শ্রী মতিচান বলেন, ‘আগে মুচির কাজ করতাম। তবে ছয় বছর হলো নিজ পেশা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ লোকজন আগের মতো জুতা ছিঁড়ে গেলে সেলাই করতে আসেন না। সংসারে তিন ছেলে ও স্ত্রী আছে। তাই সংসার বাঁচাতে ফেরি করে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করি।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, রবিদাস সম্প্রদায়ের পুরনো এই পেশার কারণে যেন সমাজে তারা ব্রাত্যজন, অস্পৃশ্য। প্রতিবেশীরা তাদের নিচু জাত বলে ঘৃণা করে। তাদের সঙ্গে বসা কিংবা খাওয়া এড়িয়ে চলে।

বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলনের কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্রী কৈলাশ রবিদাস বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে আমরা আমাদের পেশার কারণে সমাজে অবহেলা আর বঞ্চনার শিকার হচ্ছি। আমাদের রবিদাস সম্প্রদায়ের লোকজন আগে বিভিন্ন বিয়েবাড়িতে কাজ পেত।

‘ফ্রিতে কোরবানির পশুর ও পুজোর পাঠা বলির চামড়া পেত। যা আমাদের জুতা ও বেল্ট তৈরিতে কাজে লাগত। এর মাধ্যমে আমাদের একটা বাড়তি আয় হতো। এসব এখন বন্ধ হয়ে গেছে। যারা এ পেশাকে ধরে রেখেছেন তারা খুব কষ্টে দিন অতিবাহিত করছেন।’

এদিকে রবিদাসদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে ভাতা, খাদ্য, ঘর প্রদানসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেদুল হাসান।

তিনি বলেন, ‘এই সম্প্রদায়ের লোকজন সরকারিভাবে নানা কর্মসূচির আওতায় এসে সহায়তা পেতে পারে। হতদরিদ্র পরিবারগুলো যদি আমাদের কাছে সহায়তার আবেদন করে, আমরা সেটি যাচাই করে সহায়তা কর

মন্তব্য

Beta version