-->
শিরোনাম

নির্মাণের দু’বছরেই কোটি টাকার সড়কে ধস

আসাদ জামান, মানিকগঞ্জ
নির্মাণের দু’বছরেই কোটি টাকার সড়কে ধস
নির্মাণের দু’বছরেই ধসে পড়ল সড়ক

নির্মাণের দু’বছরের মধ্যেই ধসে গেছে মানিকগঞ্জ পৌরসভার প্রায় দেড় কোটি টাকা বাজেটের একটি সড়ক। ওই সড়ক ছাড়াও অপর আরেকটি সড়কে নিম্নমানের কাজ ও অনিয়মের অভিযোগে ঠিকাদারদের জামানতের টাকা আটকে দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (বিএমডিএফ) ১নং প্যাকেজের আওতায় ১০টি সড়ক ও একটি বক্স কালভার্ট নির্মাণের কাজ পায় মা ইঞ্জিনিয়ারিং ও হোসেন কনস্ট্রাকশন (জেভি) নামের দুটি প্রতিষ্ঠান।

ওই প্যাকেজের আওতায় পৌর এলাকার তিন নং ওয়ার্ডের নবগ্রাম মসজিদ থেকে নওখণ্ডা কালিখোলা পর্যন্ত ৭৫০ মিটার ও নবগ্রামের মন্টু ঘোষের বাড়ি থেকে বড়াই বাবর আলীর বাড়ি পর্যন্ত ৪৫০ মিটারের দুটি সড়ক নির্মাণ করে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সড়ক দুটির মোট বাজেট ছিল প্রায় দুই কোটি টাকা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌরসভার তিন নং ওয়ার্ডের নবগ্রাম মসজিদ থেকে নওখণ্ডা কালিখোলা পর্যন্ত ৭৫০ মিটারের আরসিসি রাস্তার বেশ কিছু অংশ দেবে ভেঙে গেছে। পুরো রাস্তার এক সাইডের মাটি সরে রাস্তার নিচে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে রাস্তার বেশ কিছু অংশ।

এছাড়া সম্পূর্ণ রাস্তায় গাইডওয়ালগুলোরও বেহাল দশা। গাইডওয়ালের পাশ থেকে মাটি নেয়ায় কিছু জায়গায় গাইডওয়ালও ধসে গেছে।

অপরদিকে নবগ্রামের মন্টু ঘোষের বাড়ি থেকে বড়াই বাবর আলীর বাড়ি পর্যন্ত ৪৫০ মিটারের কার্পেটিং রাস্তায়ও অনিয়ম দেখা গেছে। এই রাস্তার চওড়া চার মিটার হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান করেছে তিন মিটারের রাস্তা। আর রাস্তায় মাটি দিয়ে উঁচু করার কথা থাকলেও সেই কাজ করেনি ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নিম্নমানের কাজ ও অনিয়মের কারণে সড়কগুলোর এমন অবস্থা বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার এক নারী জানান, এই সাড়ে সাতশ’ মিটার রাস্তায় বাইরে থেকে মাটি এনে কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু যারা এই রাস্তার কাজটি করেছিলেন তারা রাস্তার পাশের খাদ থেকে মাটি কেটে কাজ করেছেন। যার কারণেই রাস্তার এই বেহাল দশা।

রাস্তা হওয়ার পর ওই ঠিকাদাররা দুইবার মাটি দিয়ে ভরাট করার পরও একই অবস্থা। রাস্তার নিচে মাটি নেই। যেকোনো সময় এই রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

৪৫০ মিটারের কার্পেটিং রাস্তা নিয়ে কথা হলে বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, এই রাস্তার চওড়া হওয়ার কথা ছিল চার মিটার। কিন্তু ঠিকাদাররা করেছেন তিন মিটারের রাস্তা। এতে করে রাস্তাটা অনেক চাপা হয়ে গেছে।

বর্ষার সময় যেন রাস্তাটি ডুবে না যায় তার জন্যই এখানে কাজ করা হয়। কিন্তু রাস্তায় মাটি ফেলে উঁচু করার কথা থাকলেও সেখানে নিয়মমাফিক কোনো মাটি ফেলা হয়নি। যার জন্য এবারের বন্যায়ও আমাদের রাস্তায় পানি উঠবে। এত টাকা খরচ করে কোনো লাভই হল না। আমাদের সেই কষ্টই করতে হবে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি শহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘নিয়ম হল ঠিকাদারের অধীনে এক বছরের মধ্যে রাস্তায় যদি কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয় তাহলে ঠিকাদার সেটা ঠিক করে দিবে। কিন্তু এক বছর পর যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে তার সমাধান করবে পৌর কর্তৃপক্ষ।’

তিনি আরো বলেন, ‘ওই এক বছরে সেই রাস্তায় ক্ষতি হবার পর আমরা তা ঠিক করে দিয়েছি। যার কারণে আমাদের জামানতের টাকা ফেরত দেওয়ার অনুমোদনও দেয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু একবছর পার হবার পরও তারা আমাদেরকে জামানতের এক টাকাও ফেরত দেয়নি।’

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. রমজান আলী বলেন, ‘স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জামানতের টাকা আটকে দেয়া হয়েছে। এই রাস্তার কাজ করা হয়েছিল সাবেক মেয়রের সময়কালে। কিন্তু একবছর হয়ে যাওয়ার পরও ঠিকাদাররা ওই সময়ে তাদের টাকাগুলো নেয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘যেহেতু রাস্তাটি হয়ে গিয়েছিল তাই আমি সেই টাকা দেয়ার অনুমোদনও করেছিলাম। পরে একদিন ওই এলাকার অনেক মানুষ আমার কাছে এসে অভিযোগ করেন ওই রাস্তাটি ঠিক করে দেয়ার। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি সেখানে যেয়ে দেখি রাস্তার বেহাল অবস্থা।’

মেয়র বলেন, ‘এই কাজের জন্য বিল না দেয়ার চেয়ে বিল দিলেই আমাদের জন্য বেশি সমস্যা হবে। যার জন্য বিল না দিয়ে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। বিল নিতে হলে অবশ্যই ওই বেহাল রাস্তার কাজ করে তা ঠিক করে দিতে হবে।’

মন্তব্য

Beta version