-->
শিরোনাম

চালের সঙ্গে আর্থিক অনুদান চান জেলেরা

আল আমিন হোসাইন, চাঁদপুর
চালের সঙ্গে আর্থিক অনুদান চান জেলেরা

জাটকা রক্ষায় চাঁদপুরের চার উপজেলায় মঙ্গলবার থেকে দুই মাস সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ সময়ে নদীতে মাছ ধরা রুখতে স্থানীয় প্রশাসন, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও মৎস্য বিভাগ দফায় দফায় মিটিং করেছে। জাটকা রক্ষায় অভিযান চালাতে প্রস্তুত তারা।

মাছ ধরার এ নিষিদ্ধের সময় প্রত্যেক জেলেকে দেওয়া হয় ৪০ কেজি করে চাল। তবে তারা সঠিকভাবে চাল পান না বলে অভিযোগ রয়েছে। আর যতটুকু চাল পান তা সংসারের জন্য পর্যাপ্ত নয় বলেও জানিয়েছেন জেলেরা। এ সময়ে চালের সঙ্গে আর্থিক অনুদান দেওয়ার দাবি তাদের।

চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের গোবিন্দিয়া গ্রামের জেলে বাসু রাঢ়ি (৪২)। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্য আট জন। ৪০ কেজি চাল দিলেই কী সংসার চলবে? এর সঙ্গে খেতে তেল, নুন ও শাকসবজিও লাগে। তাই সরকার যদি নিষেধাজ্ঞার সময় চালের সঙ্গে কিছু আর্থিক অনুদানও দিত তাহলে উপকার হতো।’

পাকিস্তান আমল থেকে নদীতে মাছ ধরেন রণাগোয়াল এলাকার আবদুর জব্বার হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় ৪০ কেজি চাল পাওয়ার কথা থাকলেও তা পাই না। আমাদের ৩৫ থেকে ৩৬ কেজির বেশি চাল দেয় না। এমনকি প্রকৃত জেলেদের বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে দোকানদার, রিকশাচালকরাও জেলের কার্ড পেয়ে যাচ্ছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘চাঁদপুরের জেলেরা জাটকা ধরে না। পাশের জেলা শরীয়তপুরের জেলেরা এখানে এসে ধরে। তাদের জন্য চাঁদপুরের জেলেদের বদনাম হয়।’

বহরিয়ার জেলে রকমান বেপারি (৫৫) বলেন, ‘মাছধরা বন্ধ থাকলেও ঋণের কিস্তি কি বন্ধ থাকবে? সরকার যদি এই সময় কিস্তি নেওয়া লোকদের বলে দেয় কিস্তি না নিতে, তাহলে আমরা একটু স্বস্তি পেতাম।’

জেলে সাদ্দাম ছৈয়াল (৩২) বলেন, ‘সরকারি আইন মেনে আমাদের এখানকার জেলেরা নৌকা ইতোমধ্যে ওপরে তুলে ফেলেছেন। কিন্তু মোহনপুর এলাকার বহু জেলে জাটকা ধরার জন্য আমাদের এদিক দিয়ে যায়। মোহনপুরের জেলেরাই জাটকা বেশি ধরে।’

জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চাঁদপুরের চার উপজেলায় ৪৪ হাজার ৩৫ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। আগামী সপ্তাহ থেকে তারা সরকারি অনুদানের চাল পাবে। ইতোমধ্যে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের চাল বরাদ্দ দিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে ডিও দেওয়া হয়েছে। সামনের সপ্তাহ থেকেই জেলেরা চাল পাবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসানের দেওয়া তথ্য মতে, গেলো বছর অভিযানে ৩০০ এর মতো মামলা হয়েছিল। এসব মামলায় ৩১০ জেলেকে আমরা সাজা দেওয়া হয়।

নৌ পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, চাঁদপুর অঞ্চলে আমাদের নৌ পুলিশের ১২টি স্টেশন রয়েছে। ১৭৫ জনের মতো পুলিশ সদস্য কর্মরত রয়েছেন। আমরা সব মিলিয়ে ২৪টা টিম দিনে-রাতে কাজ করব।

অভিযানের কর্মকৌশল প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘এই দুমাস আমরা চিহ্নিত কিছু খালের মুখ ইউপি চেয়ারম্যানদের তত্ত্বাবধানে বন্ধ রাখব। যাতে জেলেরা খাল থেকে নৌকা নিয়ে বের হতে না পারেন। তাছাড়া এ সময়ে নদীতে কোনো প্রকার স্পিডবোট চলবে না। আমরা কিছু স্পিডবোট রিকুইজিশন কওে নেব কাজের জন্যে এবং বাকি সব বন্ধ থাকবে।’

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, ‘অভয়াশ্রমের এই সময়ে কার্ডধারী জেলেদের জনপ্রতি দুমাসে ৪০ কেজি করে মোট ৮০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অনিয়ম রোধে ট্যাগ অফিসারদের উপস্থিতিতে এই চাল জেলেদের মাঝে বিতরণ করতে নির্দেশনা দিয়েছি। ২৪ ঘণ্টায় নদীতে অভিযান চলবে।’

মন্তব্য

Beta version