-->

বাড়ছে চুইঝালের চাষ

আহসানুর রহমান রাজীব, সাতক্ষীরা
বাড়ছে চুইঝালের চাষ
চুইঝাল লতা জাতীয় গাছের কাণ্ড ধূসর বর্ণের ও পাতা পান পাতার মতো সবুজ রঙের। একটি গাছ বেয়ে চুইয়ের ডগা বড় হচ্ছে। ছবি: ভোরের আকাশ

এক দশক আগেও শুধু বাড়িতে খাওয়ার জন্য সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানের বরজ, ঘন বাগান ও বড় গাছের সঙ্গে চুইঝাল চাষ করা হতো। তবে বর্তমানে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চুইঝাল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন জেলার অনেক বেকার যুবক ও কৃষকরা।

জেলার সদর, তালা ও কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অনেকেই বাড়তি লাভের আশায় চুইঝাল চাষ করছেন। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার এ পর্যন্ত প্রায় ছয় হেক্টর জমিতে চুইঝালের চাষ হয়েছে।

সাতক্ষীরার বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি চুইঝাল বিক্রি হয় ৬০০ টাকা থেকে এক হাজার দুইশ টাকা পর্যন্ত।

সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর বড় বাজারের চুইঝাল বিক্রেতা মাজেদুর রহমান বলেন, ‘আমি গ্রাম থেকে চুইঝাল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করি। আগে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ কেজি চুইঝাল বিক্রি করতাম। এখন চাহিদা বাড়ছে, দামও বেড়েছে।

‘আগে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে চুইঝাল বিক্রি হতো। খুচরা বাজারে এখন এক কেজি চুইঝাল বিক্রি হয় ৬০০ থেকে ১২শ টাকায়। এছাড়া কোরবানি ঈদে এর দাম ও চাহিদা আরো বেড়ে যায়।’

কৃষকরা জানান, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মাগুরা, পাটকেলঘাটা, খলিশখালী ও কুমিরা এলাকাতে কম বেশি চুইঝালের চাষ হয়। চুই লতা জাতীয় গাছের কাণ্ড ধূসর বর্ণের ও পাতা পান পাতার মতো সবুজ রঙের। কাণ্ড বিশেষভাবে রোপণ করলে আবার সেটা থেকে নতুন গাছ জন্মায়।

এর কাণ্ডটি মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চারা সংগ্রহ করে জমিতে আগেই লাগানো আম বা অন্য যেকোনো ফলজ গাছের গোড়ায় চুইগাছের চারা রোপণ করতে হয়। এছাড়া পানের বরজে পান চাষের মতো করেও চুই চাষ করা যায়। মূলত আশ্বিন মাসে কমপক্ষে আট ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয় চুইঝালের চারা। চারা প্রতি খরচ হয় প্রায় ৪০০ টাকা।

এক বছর পর খরচের তুলনায় কয়েকগুণ লাভ করা যায়। এই গাছের লতার দাম কম। আর গাছের গোড়া ও শেকড়ের দাম সবচেয়ে বেশি।

বাজারে বিক্রির জন্য চুইয়ের পরিণত শেকড় সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ছবি: ভোরের আকাশ

 

সম্প্রতি চুইঝালের চাষ শুরু করেছেন তালা উপজেলার মাগুরা গ্রামের যুবক সুমন কর্মকার। চুইঝালের চাষ করে লাভবান হবেন এমন স্বপ্ন দেখছেন তিনি। তার মতো একই এলাকার প্রশান্ত সরকার, রনজিৎ কুমারসহ অনেক কৃষক পান বরজের সঙ্গে চুইঝালের চাষ শুরু করেছেন।

এ বিষয়ে সুমন সরকার বলেন, ‘লেখাপড়া শেষে চাকরি না পেয়ে বেকার বসেছিলাম। আগে বাড়িতে খাবার জন্য আমাদের এলাকায় বিভিন্ন গাছের সঙ্গে চুইঝালের গাছ লাগানো হতো। তখন বাজারে এত চাহিদা ছিল না। শহর থেকে দোকানিরা এসে কম দামে এসব চুইগাছ কিনে নিয়ে যেত।

‘এখন বাজারে এর চাহিদা বেড়েছে। দামও বেশ ভালো। চাষের খরচ খুব কম। এ বছর প্রায় ২০০টি চুইগাছের চারা রোপণ করেছি। দেড় থেকে দুই বছর পর এই চুইগাছ বিক্রি করে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা পাওয়া যাবে। আমার মতো এলাকার অনেকেই বাড়তি আয়ের জন্য পানের বরজ ও বিভিন্ন গাছে চুইঝাল চাষ করছে।’

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার সরুলিয়া গ্রামের কৃষক আইয়ুব আলী জানান, তিনি এবার পাঁচবিঘা জমিতে পানের বরজ করেছেন। এর মধ্যে সাথী ফসল হিসেবে চুইঝালের চাষও করছেন। এছাড়া বাড়ির আঙিনা ও বাগানেও চুইঝালের চাষ করেছেন। এসব স্থান থেকে সারাবছর চুইঝাল বিক্রি করবেন তিনি।

তিনি জানান, চুইগাছের চারা মাটিতে কাটিং করে লাগাতে হয়। কাটিং থেকে নতুন চারা বের হলে তা অন্য নতুন গাছ বা ডালের সঙ্গে লতার মতো ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। এক বছরের মধ্যে চুই খাওয়ার উপযোগী হয়। গাছের বয়স যত বাড়বে, স্বাদ ও দাম তত বেশি। চুইঝাল সাতক্ষীরার স্থানীয় বাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি বিদেশেও এর চাহিদা বেড়েছে।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম দৈনিক ভোরের আকাশকে জানান, চুইঝাল চাষে কেউ আগ্রহী হলে জেলা কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দেওয়া হবে।

মন্তব্য

Beta version