বিভিন্ন শিল্পকারখানার কার্গো জাহাজের যত্রতত্র নোঙরে ভরে উঠেছে শীতলক্ষ্যা নদীর মুন্সীগঞ্জ অংশের প্রবেশমুখ। ফলে নৌপথটিতে এখন ভয় ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে চলছে যাত্রীবাহী লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযান।
বেশি প্রতিবন্ধকতা ও বিপদের মুখে মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ এবং চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী ছোট লঞ্চগুলো। অভিযোগ রয়েছে, বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি।
বিআইডাব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ নৌরুটে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ২৪টি লঞ্চ চলাচল করে। এ ছাড়াও চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটে ১৬টি লঞ্চসহ শতশত নৌযান এই নৌপথ ব্যবহার করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী থেকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর প্রবেশমুখে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে যত্রতত্র নোঙর করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শতাধিক কার্গো জাহাজ। বিশৃঙ্খলভাবে নোঙর করা জাহাজের কারণে প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হচ্ছে এ রুটে চলাচলকারী লঞ্চসহ অন্য নৌযানকে।
নোঙর করা জাহাজগুলোর ফাঁক-ফোকর দিয়ে যাতায়াতকালে পড়তে হচ্ছে বিপত্তিতে। অন্যদিকে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে। ফলে সবসময় বিপদের চিহ্ন নিয়ে থাকতে হচ্ছে লঞ্চযাত্রীদের। সন্ধ্যা নামলে অন্ধকারে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে বহুগুণ।
বিষয়টি বারবার জানানোর পরও বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ যাত্রী-চালকদের। এই নৌপথ নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে যাতায়াত উপযোগী করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তাদের।
কয়েকজন যাত্রী বলেন, এমনিতেই বড় নদী, চলে ছোট লঞ্চ। ঢেউ এলে লঞ্চ দোল খেতে থাকে। তার ওপর এ সমস্যা, যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আকলিমা নামের এক লঞ্চ যাত্রী বলেন, ‘একবার জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা খেতে নিয়েছিল। কোনো রকমে বাঁচছি। কয়দিন আগে এই কার্গো জাহাজের কারণে একটা লঞ্চ ডুবল। দেখার কি কেউ নেই?’
মিথুন সাহা অপু নামের আরেক লঞ্চ যাত্রী বলেন, ‘এই নৌপথে আমাদের নিয়মিত যাতায়াত। দিন যত যাচ্ছে অবস্থা খারাপ হচ্ছে। নদীতে কার্গোর সংখ্যা বাড়ছে। এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
মোহাম্মদ মনির নামের এক লঞ্চচালক বলেন, ‘আমরা মালিকপক্ষের মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিএকে বিষয়টি বারবার জানিয়েছি। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেউ। একটি দুর্ঘটনা ঘটলে লঞ্চ চালকদের দোষ দেওয়া হয়, তবে যেভাবে মাঝ নদীতে জাহাজ কোস্টার রাখা আমাদের ভয় আতঙ্ক নিয়ে চলতে হয়। যাত্রীরাও বিপদে থাকে আমরাও বিপদে থাকি।’
এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি না হলেও জনবলসংকটে সমস্যা নিরসন করা যাচ্ছে না বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ’র মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রাজীব চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কার্যালয়কে জানিয়েছি। আমি একা মানুষ, একা কি সব করা সম্ভব। আমার ম্যান পাওয়ার, লজিস্টিক সাপোর্ট কিছু নেই।’
বিআইডব্লিউটিএ’র নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের নৌনিরাপত্তা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক বাবু লাল বৈদ্য বলেন, ‘নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, নৌপরিবহণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন সবার একটাই উদ্দেশ্য নৌপথ নিরাপদ রাখা। জাহাজ নোঙরে যেন সমস্যা না হয় সেজন্য শীতলক্ষ্যা মুখে লাল বয়া দিয়ে লঞ্চ চলাচলের পথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। এই নৌপথে নদীর ধারণক্ষমতার ঊর্ধ্বে নৌযান চলাচল করে। আমরা যতটুকু পারছি মনিটরিং করছি। যারাই নিয়ম মানছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে নিয়মিত মামলাও করা হচ্ছে।’
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসিব সরকার বলেন, ‘এ নৌপথে যেসব নৌযান চলাচল করে তাদের মালিকদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। নদীপথে চলাচলে প্রচলিত যে নিয়ম-কানুন আছে সেটি যেন মেনে চলে এবং নিরাপদ একটি নৌপথ যেন আমরা উপহার দিতে পারি সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশেই বিভিন্ন শিল্প কারখানা, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের কার্গো জাহাজগুলো যেন তারা নির্দিষ্ট স্থানে নোঙর করে সে ব্যাপারে তাদের সচেতন করা হবে।’
মন্তব্য