অভাব-অনটনের সঙ্গে প্রতিদিন যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন মুক্তিযোদ্ধা সারোয়ার আলম দুলাল (৬৮)। থাকার জন্য নেই নিজের কোনো বাড়ি। স্বজন বলতেও কাছের তেমন কেউ নেই।
এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থেকেও এতোদিন বঞ্চিত ছিলেন সারোয়ার আলম দুলাল। এ কারণে সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী তার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা স্থগিত হয়ে যায়। এরপর অভিমানে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেতে কোনো দপ্তরেই আবেদন করেননি তিনি।
তবে সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা সারোয়ার আলম দুলালের কথা জানতে পারেন শেরপুরের নকলা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আজিজ। তিনি নিজ উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে যান এবং মুক্তিযোদ্ধা সারোয়ার আলম দুলালের নাম এনআইডি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন।
মূলত মুক্তিযোদ্ধা সারোয়ার আলম দুলাল বর্তমানে শেরপুরের নকলা পৌরসভার ধুকুড়িয়া গ্রামের মামা মৃত আতর আলী মাস্টারের বাড়িতে থাকেন। তিনি পাশের নালিতাবাড়ী পৌরসভার সিটপাড়া এলাকার মৃত আশকর আলী ও মৃত শামছুন্নাহার দম্পতির সন্তান। নালিতাবাড়ী পৌরসভা থেকে দেওয়া জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট আনুযায়ী সারোয়ার আলম দুলালের জন্ম ১৯৫৪ সালের ৮ অক্টোবর। তার জন্ম নিবন্ধন নম্বর: ১৯৫৪৮৯২৩৩০৪০৩১৩৮৩। আর মুক্তিযোদ্ধার লাল মুক্তিবার্তা তালিকা নম্বর: ০১১৪০৫০৩৬০।
২০১৮ সালের দুই আগস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুযায়ী প্রকাশিত গেজেটে ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকাশিত নামের তালিকায় ক্রমিক নম্বর ১৩৪০-এ সারোয়ার আলম দুলালের নাম নথিভুক্ত আছে। তিনি ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহের উপেন্দ্র বিদ্যাপীঠ হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন।
জানা গেছে, গত দুই মার্চ চতুর্থ জাতীয় ভোটার দিবস-২০২২ উপলক্ষে নকলা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার ঠিকানায় তিনঘণ্টা অবস্থান করে এনআইডি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৪ সালে পৌরসভা কর্তৃক প্রদত্ত জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে সারোয়ার আলম দুলাল মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করতেন। পরবর্তীতে সরকারি বিধান অনুযায়ী এনআইডি না থাকায় সারোয়ার আলমের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা স্থগিত হয়ে যায়। ওই বিধান জারির পর থেকে গত দুই বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছিলেন না সারোয়ার আলম দুলাল। সম্প্রতি এ বিষয়ে জানতে পারেন স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তা। পরে তিনি সঙ্গীয় লোকবল ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ নিয়ে সারোয়ার আলম দুলালের বাড়িতে হাজির হন। এ সময় তার ফিঙ্গার প্রিন্ট, স্বাক্ষর সংগ্রহ ও ছবিসহ অন্যান্য সব কাজ শেষ করা হয়। এ ঘটনায় ওই নির্বাচন কর্মকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দা আইয়ুব আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ধুকুরিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে একটি কক্ষে একাকি বসবাস করছেন সারোয়ার আলম দুলাল। তিনি নিজে রান্না করে খাবার খান। কখনো অসুস্থ হলে এক দিনের রান্না করা খাবার তিন-চারদিন ধরে খান। সবসময় চুপচাপ থাকতে পছন্দ করেন। বাড়ির বাইরেও খুব একটা বের হন না। তবে মামা মৃত আতর আলী মাস্টারের বাড়ির পাশে প্রতিষ্ঠিত আফজালুন নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি অনুষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন। পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে দেশের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করে।
তিনি আরও জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা সারোয়ার আলম দুলাল স্কুল জীবনে একজনের প্রেমে পড়েন। পরে ৭১’এর যুদ্ধ শেষে এলাকায় ফিরে এসে তার প্রিয়তমাকে আর খুঁজে পাননি। সেই কষ্টে তিনি আর বিয়ে করেননি।
নকলা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তারেক আজিজ বলেন, ‘জাতীয় ভোটার দিবসে দেশের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে সহযোগিতা করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এই ভোটার আইডির ফলে তার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আর কোনো ঝামেলা রইল না।’
মন্তব্য