-->
শিরোনাম
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

জনবল সংকটে কাজে লাগানো যাচ্ছে না আধুনিক যন্ত্রপাতি

আহসানুর রহমান রাজীব, সাতক্ষীরা
জনবল সংকটে কাজে লাগানো
যাচ্ছে না আধুনিক যন্ত্রপাতি
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

সুসজ্জিত হাসপাতাল। চিকিৎসাসেবা নিয়ে রয়েছে সুনাম; রয়েছে আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। তবে জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। জনবল না থাকায় চালু করা যায়নি বার্ন ইউনিট, ক্যান্সার ইউনিট,

নিউরো মেডিসিন ও নিউরো সার্জারি। এতে করে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। বলছি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালের কথা।

সাতক্ষীরার সাত উপজেলার ২২ লাখ মানুষের আধুনিক চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসা করোনা ডেডিকেটেড সামেক হাসপাতাল। গত দুই বছর করোনার মধ্যেও ভালো সেবা দিয়ে সুনাম অর্জন করেছে এ

হাসপাতাল। বর্তমানে এখানে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পাশের জেলা থেকেও আসছেন রোগী। হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও সব পরীক্ষা করাতে হয় বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক

সেন্টারে। হাসপাতালে ভেতরে দুর্গন্ধ ও নোংরা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রোগীর চাপ বাড়ায় গত বছর তড়িঘড়ি করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সর্বাধুনিক সুবিধাসংবলিত এ

হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। অথচ এখনো বাড়ানো হয়নি লোকবল। হাসপাতালের প্রশাসনিক দপ্তরের তথ্য মতে, সামেক হাসপাতালে বর্তমানে সৃজিত পদ সংখ্যা ১৬৫। এর মধ্যে ৬৩টি

চিকিৎসক পদ শূন্য। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারী পদ খালি রয়েছে ৭৬টি। বর্তমানে ৯৯ চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩৬ চিকিৎসক। তবে নার্সের কোনো সংকট নেই।

দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া থেকে অসুস্থ মাকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে সামেক হাসপাতালে এসেছেন রুহুল আমিন। তিক্তাভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বৃদ্ধ মা কয়েকমাস ধরে অসুস্থতায় ভুগছেন।

অবস্থার অবনতি হলে কয়েকদিন আগে তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছি। কিন্তু এখানে নিয়মিত ডাক্তার দেখতে আসেন না। মাঝে মাঝে ইন্টার্ন চিকিৎসক এসে দেখে যায়। রক্ত

পরীক্ষা হাসপাতালের প্যাথোলজি বিভাগে করা গেলেও বাকি পরীক্ষাগুলো বাইরে থেকে করতে হয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘হাসপাতালের কর্মচারীরা টাকা ছাড়া কোনো কাজ করতে চায় না। রক্ত

পরীক্ষার সময় ১ হাজার টাকা নিলেও আমাকে কোনো রসিদ দেওয়া হয়নি।’

চোখের সমস্যা নিয়ে বহির্বিভাগে এসেছেন কালীগঞ্জ উপজেলার হামিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এর আগেও একদিন এসে ফিরে গিয়েছি। আজ রোগীর অনেক লম্বা সিরিয়াল। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে ভেতরে

গিয়ে দেখি, যাকে দেখাতে চেয়েছিলাম তিনি নেই।’ ‘একজন ইর্ন্টান চিকিৎসক রোগী দেখছে। বাধ্য হয়ে আজও ফিরে যেতে হচ্ছে। এখানে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বাকি চিকিৎসকদের দেখা পাওয়া যায়

না। তবে প্রাইভেট ক্লিনিকে গেলেই তাদের পাওয়া যায়।’ করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা এক রোগীর স্বজন মো. সোহেল বলেন, ‘সুনাম শুনে যশোর থেকে এখানে এসেছি। ভালো সেবা পাচ্ছি। কিন্তু ওষুধ বাইরে

থেকে কিনতে হচ্ছে। হাসপাতালে বাথরুমগুলো নোংরা ও আবর্জনায় ভর্তি। অধিকাংশ টয়লেট ব্যবহার অনুপযোগী। পুরো হাসপাতালে মাত্র দু-তিনজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছে।’

জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক আনিছুর রহিম জানান, ‘জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৭ সালে মেডিকেল কলেজ

হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে ২৫০ শয্যা নিয়ে চালু হওয়া হাসপাতালে বর্তমানে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও পর্যাপ্ত জনবল না থাকার কারণে রোগীরা এখান থেকে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না।

অথচ সরকার এখানে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে অপারেশন থিয়েটারসহ আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ক্রয় করে ফেলে রেখেছে। এগুলো চালু হলে সল্প খরচে আধুনিক সেবা পাবেন সাধারণ মানুষ।’

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও প্রকল্প পরিচালক ডা. এস জেড আতিক বলেন, ‘২০১৭ সালে এ হাসপাতালে জন্য ১ হাজার ২৮২টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। ৪ বছর পর মাত্র

১৬৫টি পদ সৃষ্টি হয়েছে। এত কম জনবল দিয়ে হাসপাতাল পরিচালনা দুরূহ ব্যাপার।’ ‘হাসপাতালটি আইসিইউ, সিসিইউ, সর্বাধুনিক অপারেশন থিয়েটারসহ বিশ্বমানের সব যন্ত্রপাতি দ্বারা সজ্জিত। কিন্তু

ইনস্ট্রুমেন্ট কেয়ারটেকার, ইটিজি টেকনিশিয়ান, ইসিজি, ইকো টেকনিশিয়ান, ডায়ালাইসিস টেকনিশিয়ানসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য কোনো জনবল নেই। দীর্ঘদিন পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে

কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি’, বলেন তিনি।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. কুদরত-ই-খোদা বলেন, ‘বর্তমানে সিনিয়র, জুনিয়র এবং সহকারী সার্জনসহ মোট ৯৯ চিকিৎসক কর্মকর্তা পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র

৩৬ চিকিৎসক। কর্মচারীর শূন্য পদ ৭৬টি। আউটসোর্সিং কর্মচারী রয়েছেন মাত্র ৭৬ জন। এত অল্পসংখ্যক জনবল দিয়ে এত বড় হাসপাতালে সেবা দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়।’ ‘গত বছর জরুরি

বিভাগ চালু করা হয়েছে। কিন্তু বার্ন ইউনিট, ক্যান্সার ইউনিট, নিউরো মেডিসিন, নিউরো সার্জারি শুধু জনবল না থাকায় চালু করা যায়নি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার মৌখিক ও লিখিতভাবে

জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আশা করছি, দ্রুত এ সংকট নিরসন হবে’, বলেন তিনি।

মন্তব্য

Beta version