-->

ব্যাংকার থেকে চা উদ্যোক্তা মাহমুদ

সোহেল রানা, ঠাকুরগাঁও
ব্যাংকার থেকে চা উদ্যোক্তা মাহমুদ
মাহমুদ হাসান

করতেন প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি। কিন্তু এতে তার ভালো লাগছিল না। নিজের কিছু করার ইচ্ছে জেগে বসে তার। তাই তো ছেড়ে দিলেন চাকরিটি। এরপর নিজের জমিতে গড়ে তুললেন চা বাগান। আর এতেই স্বপ্ন দেখছেন এই উদ্যোক্তা। বলছি ঠাকুরগাঁও সদরের আকচা ইউনিয়নের মাহমুদ হাসানের কথা।

ওই ইউনিয়নের কোল ঘেঁষে বয়ে গেছে শুক নদী। সেই নদীর পাশে নিজস্ব সাড়ে তিন বিঘা জমিতে চা চাষ করছেন মাহমুদ। শুরুটা পরীক্ষামূলক হলেও শুরুতেই বাজিমাত করেছেন তিনি।

মাহমুদ হাসান জানান, একটি প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করতেন তিনি। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেন চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার। তিন বছর আগে পঞ্চগড়ের আটোয়ারি মির্জাপুরের একটি টি স্টেট থেকে ১০ হাজার চায়ের চারা কিনেন তিনি। চা চাষে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সেখান থেকে। দ্বিতীয় বছরে একবার ও তৃতীয় বছরে সাতবার চা পাতা কেটেছেন মাহমুদ। দুই বছরেই চা পাতা বিক্রি করেছেন সাড়ে তিন লাখ টাকা।

তিনি বলেন, ‘চা বাগান করতে একটু বেশি দামে চারা কিনতে হয়েছে। এখন দাম কম। বাগানটি করতে তিন বছরে ধাপে ধাপে আমার আট লাখ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এ বছর আরো চার লাখ টাকার চা পাতা বিক্রির আশা করছি।’

লাভবান হলেও চা বাগানটি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন মাহমুদ। এর প্রধান কারণ তার চা বাগানের চার-পাঁচ কাঠা জমি নদীতে চলে গেছে। তিনি বলেন, ‘নদীভাঙন নিয়ে আমি শঙ্কিত। কারণ চা বাগানটি নদীর তীরে। এরই মধ্যে আমার চার-পাঁচ কাঠা জমি নদীতে চলে গেছে। বাঁধ দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর উদ্যোগ নিলে এ অঞ্চলে চা বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। নদীভাঙনের ভয়ে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও অনেকে চা বাগান করছেন না।’

‘ঠাকুরগাঁওয়ে চা ফ্যাক্টরি হলে চা চাষিরা আরো লাভবান হতেন। বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করলে চা চাষি অনেক বাড়বে। এ ছাড়া এ অঞ্চলে চা বোর্ডের নজর দেয়া খুব প্রয়োজন। শুধু প্রশিক্ষণের অভাবে চা চাষে সম্ভাবনাময় এই জেলা এগোতে পারছে না’ যোগ করেন তিনি।

উদ্যোক্তা মাহমুদ হাসানের কাছে চা চাষে আগ্রহীরা পরামর্শ নিতে বাগানে আসেন। এ সময় কথা হয় আজিজুল হাসানের সঙ্গে। আজিজুল বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে চা চাষ একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। এসেছি পরামর্শ নিতে। আমিও চা চাষ করতে চাই।’স্থানীয় দিনমজুর হাসেন আলী বলেন, ‘আমরা মাঠের ধান, গম ভুট্টাসহ নানারকম ফসলের কাজ করতে পারি। কিন্তু চা বাগানের কাজ করতে পারি না। এখানকার বাগান মালিকেরা বাইরে থেকে শ্রমিক নিয়ে আসে। আমরা তখন কাজ পায় না। আমাদেরও যদি প্রশিক্ষণ দিত আমরাও চা বাগানের কাজ শিখতে পারতাম।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, ‘ঠাকুরগাঁওয়ের আবহাওয়া চা চাষের জন্য উপযুক্ত। এখন পর্যন্ত জেলায় ১৩০ হেক্টর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। এখানকার মাটি বেলে দোআঁশ। প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় তবে পানি জমে না এমন জায়গায় চা বাগান করতে হয়।’

পোকা ও মাকড়শা যেন চা গাছের কোনো ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্য সার ও কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার করতে হবে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা আবু হোসেন।

মন্তব্য

Beta version