-->
শিরোনাম

ঝুঁকিতে শহর রক্ষা বাঁধ

পার্থ হাসান, পাবনা
ঝুঁকিতে শহর রক্ষা বাঁধ
সাঁড়া ইউনিয়নে পদ্মার ভাঙন শুরু হয়েছে

পাবনার ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নে পদ্মার ভাঙনরোধে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে দুই দফা জিও ব্যাগ ফেলা হয়। এরপরও রক্ষা হচ্ছে না নদী পাড়ের মানুষদের। আবারো এই ইউনিয়নে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে ১০ বিঘা ফসলি জমি। কৃষকদের কোটি টাকার ফসল নদীগর্ভে চলে গেছে।

অসময়ে এমন ভাঙন শুরু হওয়ায় নদীপাড়ের মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নতুন করে ভাঙন দেখা দেওয়ায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদী রক্ষা বাঁধও পড়েছে হুমকির মুখে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে পদ্মানদীর সাঁড়াঘাটের থানাপাড়ার পয়েন্টে ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

জানা গেছে, গত বছরের শেষদিকে ব্যাপক ভাঙন শুরু হলে নদীর ভাঙন প্রতিরোধে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়। ২৫০ কেজি ওজনের জিও ব্যাগ ফেলানো হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এক কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে জরুরিভিত্তিতে ভাঙনকবলিত এলাকায় বালুবোঝাই এসব জিও ব্যাগ সাঁড়ার বিভিন্ন স্পটে ডাম্পিং করা হয়। পরে আরো এক কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, দুই দফায় সেখানে আটটি প্যাকেজের পাউবোর জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়। প্রথমে পাঁচটি প্যাকেজে এবং দ্বিতীয় ধাপে তিনটি প্যাকেজে ডাম্পিং করা হয়। এতে ব্যয় হয় প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তবে অপরিকল্পিতভাবে ব্যাগ ফেলানো হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

তারা জানায়, তুলনা অনুযায়ী জিও ব্যাগের সংখ্যা অনেক কম ছিল। ফলে এসব জিও ব্যাগ ভাঙনরোধে খুব একটা কাজে আসছে না। কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও দায়সারাভাবে প্রকল্পের কাজ হয়েছে। মাঝেমধ্যে ভাঙন হবে আর কিছু জিও ব্যাগ ফেলানো হবে এটা আমরা চাই না। কাজের মান নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তারা। স্থায়ীভাবে নদী রক্ষার করণীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন তারা।

স্থানীয় ইকবাল হোসেন নামের একজন বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই এখানে ভাঙন দেখা দেয়। যার জন্য এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ঘর ওঠাতে পারি না। সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। সরকারের কাছে নদীভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান দাবি করেন তিনি।’

আম্বিয়া খাতুন নামে এক গৃহবধূ বলেন, নদী পাড়ে ৩০ থেকে ৪০ বছর বসবাস করছি। এ পর্যন্ত ৫ থেকে ৬ বার বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। সন্তানাদি নিয়ে বড় কষ্টে দিনাতিপাত করি। অন্যত্র জমি কিনে বাড়ি করার সামর্থ্য নেই। তাই সন্তানাদি নিয়ে রাত-দিন আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছি। সরকার যদি আমাদের অন্য কোথায় কোনো বসবাসের উপযোগী জায়গা করে দিত তাহলে ভালো হতো।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা নদীভাঙনের বিষয়টি শুনেছি। শিগগির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ’

ঈশ্বরদীর উপজেলার সাঁড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক রানা সরদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জিও ব্যাগ ফেলানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান।

স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস নতুন করে ভাঙনের জন্য নদী রক্ষা বাঁধকেই দুষলেন। জিও ব্যাগের ডাম্পিং নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জিও ব্যাগের কোনো অনিয়ম হয়নি। সেখান থেকে ভাঙনও শুরু হয়নি। হয়তো আশপাশ থেকে শুরু হয়েছে। নদী রক্ষায় যে বাঁধ দেওয়া হয়েছে, সেখানে অনিয়ম হয়েছে। আমার ধারণা, সেই বাঁধের কিছু জায়গা ভেঙে পড়ায় সেখান দিয়ে পানি প্রবেশ করে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে।’

মন্তব্য

Beta version