-->
শিরোনাম
কথা রাখেন না জনপ্রতিনিধিরা

সেতুর অভাবে দুর্ভোগে ৩০ হাজার মানুষ

কামরুজ্জামান মিন্টু, ময়মনসিংহ ব্যুরো
সেতুর অভাবে দুর্ভোগে ৩০ হাজার মানুষ
বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদী পারাপার

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নে বানার নদীর ওপর বাঁশ ও কাঠের নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো দিয়ে চার গ্রামের লোকজন চলাচল করছে। এতে চরম ঝুঁকিতে পড়েছেন গ্রামগুলোর অন্তত ৩০ হাজার মানুষ।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। কারণ, ফসল ঘরে তোলাসহ বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। এ ছাড়া অসুস্থ রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নিতেও সময় ব্যয় হয়। এতে রোগীদের জীবন সংশয়ের ঝুঁকি থাকে।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলা শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে বানার নদী। এ নদী পার হয়ে কাশিমপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর, রসুলপুর, কননাডা ও পাহাড় পাবইজান গ্রামের লোকজনকে পৌরশহরে প্রবেশ করতে হয়।

তিন কিলোমিটার দূরে বানার এলাকায় একটি কংক্রিটের সেতু থাকলেও দুই পাড়ের মানুষকে চার কিলোমিটার পথ ঘুরে আসতে হচ্ছে।এজন্য গ্রামবাসীর চাঁদার টাকায় ২০ বছর আগে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ৯০ ফুট দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। এক বছর পরপর সেতুটি নতুনভাবে নির্মাণ করতে হয়। ভোটের আগে জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও কার্যত ফলাফল শূন্য।

রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হাই নামে এক কৃষক দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘বেশিরভাগ লোক কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। উৎপাদিত ফসল বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে এ নদী পার হতে হয়। বাঁশের তৈরি সেতু দিয়ে ফসল নেওয়া সম্ভব হয় না। এ জন্য চার কিলোমিটার পথ ঘুরে বাজারে যাই। মাঝে মধ্যে যাতায়াত খরচ কমানোর জন্য শাকসবজি মাথায় নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতু পার হচ্ছি। এতে মাথার ঘাম পায়ে পড়লেও বাধ্য হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।’

কননাডা গ্রামের যুবক শামীম আহম্মেদ জানান, নির্বাচন এলেই জনপ্রতিনিধিরা ভোট নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তদবিরের মাধ্যমে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন। কিন্তু নির্বাচনের পর তারা কথা রাখেন না। এমনকি তাদের ছায়াও খুঁজে পাওয়া যায় না। এ জন্য গ্রামবাসীর কাছ থেকে চাঁদা তুলে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। মূলত বর্ষাকালে যৌবন ফিরে পায় নদীটি। তখন চারদিকে পানিতে টইটম্বুর থাকে। এ সময় বাঁশের সেতু নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় প্রতিবছর পুনরায় সেতু নির্মাণ করতে হয়।

তিনি জানান, মোটরসাইকেল ও সাইকেল পারাপারের সময় মাঝেমধ্যেই নিচে পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। কৃষক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছোট ছেলেমেয়েরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। এ পর্যন্ত অসংখ্য লোক সেতু পারাপারের সময় আহত হয়েছেন।

স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব সামাদ আলী বলেন, ‘সরকার এত উন্নয়ন করতাছে, তয় আমগর (আমাদের) উন্নয়ন নাই। একটা সেতু কইরা দিলে সবাই নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারত। জীবনমানের উন্নয়ন হইত। কিন্তু পোড়া কপাল আমগর। মরার আগে একটা সেতু নির্মাণের দাবি জানাই।’

শিক্ষার্থীদের অসুবিধা তুলে ধরে কাশিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দোলন রানী দাস বলেন, মাঝে মধ্যে বিদ্যালয়ে এসে ছেলেমেয়েরা বলে সাঁকো পারাপারের সময় ব্যথা পেয়েছে। এ ছাড়া বন্যার সময় অনেক পথ ঘুরে বিদ্যালয়ে আসে ছোট শিক্ষার্থীরা। এতে কষ্টের পাশাপাশি সময়ও ব্যয় হচ্ছে। সাঁকোর পরিবর্তে কংক্রিটের সেতু নির্মিত হলে সবার সুবিধা হতো।

স্থানীয় কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন তালুকদার বলেন, ‘সরকারিভাবে সেতু নির্মাণ না হওয়ার কারণে নদী পারাপারে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এই দুর্ভোগের কথা জানিয়েছি। তিনি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে বিষয়টি জানালে টেন্ডারের মাধ্যমে সেতু নির্মাণ হতে পারে। এ ছাড়া আমাদের উপজেলা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বর্তমান সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সেতু নির্মাণ বাস্তবায়ন করা হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মনসুর দৈনিক ভোরের আকাশকে জানান, বানার নদীতে সেতু নির্মাণ করলে অনেক টাকা ব্যয় হবে। তবুও ওই এলাকায় সেতু নির্মাণ জরুরি হলে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে জানানো হবে।

মন্তব্য

Beta version