-->
শিরোনাম

বাড়ছে নারী নেতৃত্ব ও শিক্ষার হার

জহির রায়হান, বরিশাল ব্যুরো
বাড়ছে নারী নেতৃত্ব ও শিক্ষার হার
রাজনৈতিক মিটিংয়ে বরিশালের নারীরা

ধান-নদী-খাল এই তিনে বরিশাল। একসময় জেলাটিতে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অধিকার আদায়ের আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রভাগে নারীদের তেমন দেখা যেত না। কিন্তু গত এক দশক ধরে বরিশালের এ চিত্র পাল্টেছে।

সামাজিক, রাজনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বরিশালের নারীরা অগ্রণীয় ভূমিকা পালন করছেন। নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন স্থানীয় নির্বাচন, সভা-সেমিনার ও রাজনৈতিক মিছিলে। চাকরি করছেন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থায়ও।বরিশালে বাড়ছে নারী শিক্ষার হারও। গত কয়েক বছর ধরে বরিশাল বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় পাস এবং জিপিএ-৫ ফলে ছেলেদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা।

বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে বরিশাল বোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে পাসের হার ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। পাস করা ৬৩ হাজার ৯৬৪ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেয়ে ৩৩ হাজার ৬৭৫ জন। আর মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৯৭১ জন। এর মধ্যে ৬ হাজার ৪৯০ জন মেয়ে। ২০২১ সালের এসএসসি ফলে মধ্যে মেয়েদের পাসের হার ৯১ দশমিক ২৫ শতাংশ।

বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ কুমার গাইন দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘বরিশাল বোর্ডে গত কয়েক বছর ধরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় পাস ও জিপিএ-৫ ফলে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে।’

বর্তমান সরকার নারীবান্ধব হওয়ায় বরিশালে নারী নেতৃত্ব ও শিক্ষার হার কয়েক গুণ বাড়ছে বলে মনে করেছেন স্থানীয়রা।

বরিশাল জেলা বাসদের সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘বরিশালে গত এক দশকে নারী নেতৃত্ব আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আরো বাড়ত সরকার যদি নারী নেতৃত্ব দেওয়ার নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করত। তারপরও নারীরা আজ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করছেন।’

এনজিও আভাসের নির্বাহী পরিচালক রহিমা সুলতানা কাজল বলেন, ‘এক সময় নারীদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে খুঁজে পাওয়া যেত না। এখন সামাজিক, রাজনৈতিক, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও বিচার-সালিশিতে নারী নেতৃত্ব বেড়েছে।’

বরিশালের নারীদের সঙ্গে বৈঠকে জেলা বাসদের সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী

তিনি আরো বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে দেশের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ে নারীরা আজ নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী আজ নারীর উন্নয়ন-বিকাশ ও নারীদের সামনে আনার লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। নারীদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও স্বীকৃতির জন্য বঙ্গমাতা, জয়িতা ও বেগম রোকেয়াসহ বিভিন্ন পদক প্রদান চালু করেছে সরকার।’

‘শুরুতে এনজিও আভাসে ৩৫ শতাংশ নারী কাজ শুরু করে। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৫ শতাংশে। কেননা নারীরা আজ শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন’ যোগ করেন তিনি।

বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর নিগার সুলতানা হনুফা বলেন, ‘৮০-এর দশক থেকে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছি। তখন ১০-১২ জন সক্রিয়ভাবে কাজ করেছি। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০-৪০ শতাংশের ওপরে।’

 

বরিশাল দক্ষিণ জেলা মহিলা দলের সভাপতি ফারহানা তিথি বলেন, ‘২০০৩ সাল থেকে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ৩০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ দেখা যায়। এখন তা বেড়ে প্রায় ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে নারী নেতৃত্ব। তবে পদ অনুযায়ী নারীদের মূল্যায়ন দেয়া হয় না।’

বরিশাল মহিলা অধিদপ্তরের উপপরিচালক দিলারা খানম বলেন, ‘জেলায় ৫২ হাজার নারী সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন। পাশাপাশি তাদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তা তৈরি করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’

মন্তব্য

Beta version