-->

৯ ঘণ্টা শ্রমের মূল্য ৩০০ টাকা

কামরুল ইসলাম মাহি, সিলেট ব্যুরো
৯ ঘণ্টা শ্রমের মূল্য ৩০০ টাকা
পুরুষদের সঙ্গে মাটিকাটার কাজ করছেন নারীরা

সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকার রোজিনা বলেন, ‘করোনায় কাজ বন্ধ থাকায় মাঝে মাঝে এক বেলা খেয়েছি। মেম্বার-চেয়ারম্যানরা কিছুই দেননি। তাই অভাবের সংসারে একটু ভালো থাকতে এখন মাঠে কাজ করি।’

রোজিনার কথা শেষ না হতেই পাশে বসে থাকা মাটিকাটা শ্রমিক নুরবানু বিবি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেক দিন কাজ করতে হয়। কাজ না করলে আমরা খাব কী? নারী দিবস কী আমরা জানি না। কেউ আমাদের কিছু জানায়নি। আর দিবস দিয়ে কী হবে, যদি সারা দিন কাজ করে ন্যায্য মজুরিই না পাই।’

মূলত প্রতিদিন মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন সিলেট জেলার নারী শ্রমিকরা। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায় জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়েই এসব নারীরা হাজিরাভিত্তিক মজুরিতে কাজ করেন। তবে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত অসহায় এসব নারীর ন্যূনতম ধারণা নেই নারী দিবস কিংবা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে। অথচ সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে এসব নারীরা প্রতিদিন রাজমিস্ত্রি, মাটিকাটা, গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার, মিল-চাতাল, কৃষিকাজসহ নানা কাজ করেন।

এ বিষয়ে আক্ষেপ নিয়ে সিলেট সদর উপজেলার ছালিয়া গ্রামের বাসিন্দা রফনা বেগম বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৯ ঘণ্টা কাজ করি। আমরা হাজিরা পাই সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা। একই কাজ করে পুরুষ শ্রমিকরা হাজিরা পান ৫০০ টাকা।’

সচেতন মহলের নাগরিকরা বলছেন, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ স্থান পর্যন্ত নারীদের পদচারণা রয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও নারী শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্য মজুরি থেকে। পুরুষদের পাশাপাশি সমানতালে কাজ করেও কম বেতন ও মজুরি বৈষম্যের কারণে এখানকার নারীরা সাফল্যের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না। শ্রম আইন মানার কোনো বালাই নেই।’

সিলেট শহরতলির বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় রাজমিস্ত্রি, মাটিকাটা, গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার, মিল-চাতাল, কৃষিকাজসহ বিভিন্ন ছোট-বড় কারখনায় নারী শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না তারা।

নগরের শহরতলির শাহপরান এলাকার নারী শ্রমিক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘করোনাকালে খুব কষ্ট হইছে। অনেকে কাজে নিতে চায়নি। তাই এক প্রকার জোর করেই কাজ করতে হয়েছে। কাজ না করলে তো আমাদের চলবে না। সরকারি-বেসরকারিভাবে কেউ আমাদের খোঁজ নেয় না। টাকা-পয়সা, খাদ্য কোনোটাই আমরা পাই না।’

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহিনা আক্তার বলেন, ‘টেকসই আগামীর জন্য জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। সরকার নারীর সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। নারীদের অধিকার ও ন্যায্য মজুরি প্রাপ্তির বিষয়টি সময়ের ব্যবধানে থাকবে না। বিশেষ করে নারীদের শিক্ষা, সচেতনতা বাড়লে একসময় এসব সমস্যা দূর হবে। নারী শ্রমিকদের মজুরি কম দিলে তারা যদি আমাদের অভিযোগ করেন, তবে আমরা অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’

মন্তব্য

Beta version