-->
শিরোনাম

নম্বর লিখে রেখে চুরি, টাকা দিলেই ফেরত

রিপন দাস, বগুড়া
নম্বর লিখে রেখে চুরি, টাকা দিলেই ফেরত
প্রতীকী ছবি

প্রথমে পল্লিবিদ্যুতের মিটার চুরি করে একটি চক্র। মিটারের জায়গায় মুঠোফোন নম্বর রেখে যায় তারা। ওই নম্বরে যোগাযোগ করে চাহিদামতো টাকা পাঠালেই পাওয়া যায় চুরি হওয়া মিটারগুলো।

অভিনব প্রতারণার এ ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া, কাহালু, নন্দীগ্রাম, শাজাহাপুন ও গাবতলীর পাশাপাশি ধানপ্রধান এলাকাগুলোয়।

ভুক্তভোগীরা জানান, চুরি হওয়া মিটার পেতে একদিনের মধ্যে যোগাযোগ করতে হয় রেখে যাওয়া নম্বরে। আর টাকা দেওয়া নিয়ে দরকষাকষি করলে বন্ধ করে দেওয়া হয় মোবাইল ফোন। তবে চাহিদা অনুযায়ী টাকা পাঠানোর পরপরই তারাই জানিয়ে দেয় কোথায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে বৈদ্যুতিক মিটার।

বগুড়ায় এভাবেই রাতের অন্ধকারে কৃষিকাজে ব্যবহৃত মিটার চুরি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একদল চক্র। পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনো সহযোগিতা পাচ্ছে না বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

জেলার শাজাহানপুর উপজেলার পারতেখুর গ্রামের আব্দুল মান্নান। মোটরের মাধ্যমে পানি তুলে কৃষিজমিতে সেচ দেন তিনি। গত বছরও তার সেচযন্ত্রে ব্যবহৃত মিটার চুরি হয়। টাকা দিয়ে ফেরত নেন। সে কারণে চলতি বছরে অনেক সতর্ক ছিলেন মান্নান। তবে শেষ রক্ষা হয়নি।

দৈনিক ভোরের আকাশকে তিনি বলেন, ‘এ বছরও রক্ষা করতে পারিনি সেচকাজের মিটার। বাধ্য হয়ে ফেলে যাওয়া নম্বরে টাকা পাঠিয়েছি। পরপর দুবার চুরি করা মিটার পেতে খরচ করতে হয়েছে ১০ হাজারের বেশি টাকা।’

একই উপজেলার বীরগ্রাম এলাকায় একটি হ্যাচারি থেকে চুরি করা হয় মিটার। ওই মিটার ফিরে পেতে হ্যাচারির মালিককে গুনতে হয়েছে ৪১০০ টাকা। টাকা পাঠানোর পর ওই মালিককে জানানো হয়, হ্যাচারির পাশে ধানের জমিতে পুঁতে রাখা আছে সেই মিটার।

বীরগ্রামের কৃষক মতিউর রহমান জানান, তার সেচঘর থেকে মিটার খুলে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আর সেখানে একটি কাগজে মোবাইল নম্বর লিখে রেখে যায় তারা। ওই নম্বরে যোগাযোগ করলে তারা বিকাশে টাকা দাবি করে। পরে বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে ফেরত পেয়েছে সেই মিটার।

চলতি বোরো মৌসুমে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুরাদপুর, কেশরতা, হলুদগড় ও নশরতপুর ইউনিয়রের বরবরিয়া গ্রাম থেকে এক রাতেই পাঁচটি মিটার চুরি হয়। গত এক মাসে শুধু এ উপজেলার কয়েকটি গ্রাম থেকে ১৬-১৮টি মিটার চুরি হয়েছে।

আদমদীঘি উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের আবু মোছা মণ্ডল বলেন, ‘গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে পাঁচটি মিটার খুলে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। একটি মিটার ফেরত পেতে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করা হয়। কম দিলে তারা মিটার নষ্ট করে ফেরত দেয়। এ অবস্থায় এলাকার মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ জানায় তাদের কিছু করার নেই।’

কেশরতা গ্রামের পশ্চিমপাড়া একই ব্যক্তির পরপর তিনবার মিটার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়াও কুসুম্বি, নশরতপুর ও ছাতুয়াসিংড়ার পাশাপাশি বগুড়া-নওগাঁ সীমান্ত এলাকার কদমগাড়িতে মিটার খুলে নিচ্ছে চক্রটি।

আদমদীঘি থানার ওসি মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘বৈদ্যুতিক মিটার চুরির ঘটনায় একাধিক কৃষক থানায় অভিযোগ করেছে। তবে তারা টাকা পরিশোধ করে তারপর থানায় আসে। আর এ সময় অপরাধীরা ওই নম্বরগুলো বন্ধ করে ফেলে। এ ঘটনায় পুলিশ তৎপর রয়েছে।’

পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের থেকে পাওয়া তথ্যমতে গত দুই বছরে অন্তত ৩শটি মিটার চুরির ঘটনা ঘটেছে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘গভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক মিটার চুরি করে আবার টাকার বিনিময়ে ফেরত দিচ্ছে। এ বিষয়টি পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তাদের চিহ্নিত করতে পুলিশ কাজ করছে। রেজিস্ট্রিবিহীন ভিন্ন ভিন্ন ফোন নম্বর ব্যবহার করায় অপরাধীদের চিহ্নিত করতে সময় লাগছে।’

মন্তব্য

Beta version