কুমিল্লার সদর দক্ষিণে ট্রেনে কাটা পড়ে তিন স্কুলছাত্রী নিহত হয়েছে। উপজেলার বিজয়পুর রেলক্রসিং এলাকায় বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মহানগর প্রভাতী ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতেরা হলেন- দুর্গাপুর গ্রামের মাসুম মিয়ার বড় মেয়ে রীপা সুলতানা মীম, একই গ্রামের রিপন মিয়ার মেয়ে রীমা আক্তার ও বরুড়া উপজেলার অর্জুনতলা গ্রামের ওমান প্রবাসী বুলু মিয়ার মেয়ে তাসপিয়া।
তারা সবাই দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, বিজয়পুর রেলওয়ে ক্রসিংয়ে পশ্চিম পাশে বিজয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়ার পথে রেলক্রসিংয়ে নামলে দুদিক থেকে দুটি ট্রেন আসে। এ সময় তারা ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতী ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যায়।
সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি দেবাশীষ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘মরদেহগুলো তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।’
এ দিকে দুর্ঘটনার পর পর নোয়াখালী-কুমিল্লা মহাসড়ক অবরোধ করে স্থানীয়রা। এতে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু এসে ক্রসিংয়ে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দিলে, স্থানীয়রা অবরোধ তুলে নেয়।
মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় নিহতের স্বজনদের কান্নায় দুর্গাপুরের আকাশ ভারী হয়ে উঠেছে। স্বজনের গগনবিদারী চিৎকারে স্তব্ধ করে দিয়েছে পরিবেশ।
নিহত মিমের মা রুপা কাজ করেন কুমিল্লা ইপিজেডের একটি তৈরি পোশাক কারখানায়। বাবা মানসিক রোগী হওয়ায় মিম ও তার ভাই ফরহাদের খাবার যোগাতে তিনি কাজ বেছে নেন। বুক চাপরিয়ে মিমের মা রুপা চিৎকার করে বলেন, ‘এ মেয়েকে আমি বড় করেছি। আমার মেয়ে কোরআনে হাফেজা ছিল। আল্লাহ আমার বুকের ধন কাইরা নিলো গো।’
দুপুরে নিহতের বাড়িতে আসেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘সত্যিই ঘটনাটি মর্মান্তিক। ক্রসিংয়ে একটি ফুটওভার ব্রিজ করা দরকার। প্রাথমিকভাবে নিহতের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হবে।’
জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমরা হয়তো মায়ের কোলে সন্তানকে ফিরিয়ে এনে দিতে পারবো না। তবে প্রশাসনিক সকল প্রকার সহায়তা করা হবে।’
মন্তব্য