-->
শিরোনাম
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত

চাকায় পিষ্ট সামুদ্রিক প্রাণী, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য

আহসান সুমন, কক্সবাজার
চাকায় পিষ্ট সামুদ্রিক প্রাণী, হুমকিতে জীববৈচিত্র্য
‘পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ১২০ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ স্থাপনা হয়েছে। সৈকতের ওপর দিয়ে হ্যাচারির শোষিত বর্জ্য যাচ্ছে সমুদ্রে। বিভিন্ন হোটেলের বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে সৈকতে।’ ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে অবৈধভাবে চলছে বিচ বাইক, জিপ ও কারসহ বিভিন্ন যানবাহন। এসব গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে লাল কাঁকড়া, সামুদ্রিক কাছিম, শামুক, ঝিনুকসহ উপকূলীয় বিভিন্ন প্রাণী। ফলে চরম হুমকির মুখে পড়েছে সৈকতের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ প্রতিবেশ।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত, ২০১০) অনুযায়ী, কক্সবাজার-টেকনাফ পেনিনসুলাকে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ওই আইন অনুযায়ী, এ এলাকায় সামুদ্রিক প্রাণীর ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করা (যানবাহন পরিবহণ) নিষিদ্ধ। এছাড়া বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সংরক্ষণ জরুরি।

সরেজমিনে দেখা যায়, রামু উপজেলার পেঁচারদ্বীপ সৈকত ও হিমছড়ি পাড়ার ব্লক এলাকার কাঁকড়া বিচ সমুদ্রসৈকতে অবৈধভাবে বিচ বাইক, জিপ ও কারগাড়ি চালানো হচ্ছে। এতে কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক, জলচর পাখিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর প্রজনন, আবাসস্থল ও বিচরণ স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ঝাউবনের ভেতর দিয়ে গাড়ি চালানোয় বনের গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া ওই এলাকায় রাতে আলো জ্বালানো ও গাড়ি চালানোর কারণে সামুদ্রিক কচ্ছপ ডিম পাড়তে আসছে না।

হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের হিমছড়ি সহব্যবস্থাপনা নির্বাহী কমিটির সদস্য সচিব রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা বলেন, ‘সৈকতে পেঁচারদ্বীপ এলাকায় হক কোম্পানির মালিক এবং হিমছড়িপাড়ায় কক্সবাজার বিচ বাইক মালিক সমবায় সমিতির তত্ত্বাবধানে এসব গাড়ি চলছে। এ কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে মৌখিকভাবে আইনের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও তারা আইন অমান্য করে গাড়ি চালাচ্ছেন।’

হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের সহব্যবস্থাপনা নির্বাহী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান বলেন, ‘কক্সবাজারের রামু উপজেলায় খুনিয়াপালং ইউনিয়নের পেঁচারদ্বীপ ও হিমছড়িপাড়ার কাঁকড়া বিচ এলাকা সামুদ্রিক কাছিম, কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক, জলচর পাখিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর প্রজনন, আবাস্থল ও বিচরণ স্থান। এসব এলাকার পরিবেশ প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।’

তিনি আরো বলেন, ‘হিমছড়ি সমুদ্রসৈকতে বিচ বাইক ও গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে জেলা প্রশাসক, বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সারোয়ার আলম জানান, ঝাউবাগান ও সৈকতে কিছু যানবাহন চলাচলের খবর পেয়েছেন তিনি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ ইসলাম বলেন, ‘সমুদ্রসৈকতের কলাতলী পয়েন্ট থেকে দরিয়ানগর পর্যন্ত বিচ বাইক চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্য যেকোনো সৈকত পয়েন্টে বিচ বাইকসহ যেকোনো যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ।’ তিনি আরো বলেন, ‘এসব যান চলাচলের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে। সৈকতের পরিবেশ সুরক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, ‘পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ১২০ কিলোমিটার সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ স্থাপনা হয়েছে। সৈকতের ওপর দিয়ে হ্যাচারির শোষিত বর্জ্য যাচ্ছে সমুদ্রে। বিভিন্ন হোটেলের বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে সৈকতে।’

এভাবে পরিবেশ দিন দিন বিপর্যয় হতে থাকলে কক্সবাজারের সুন্দর প্রকৃতি আর রক্ষা করা সম্ভব হবে না বলে তিনি মনে করেন।

মন্তব্য

Beta version