শফিকুল ইসলাম শিমুল নামে হত্যা মামলার এক আসামিকে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর কারাগার থেকে ওই আসামিকে প্রাইভেটকারে করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। তবে থানার গেটের ভেতরে পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে নিজের সমর্থকদের উদ্দেশ্যে নাড়ালেন হাত, দিলেন বক্তব্য। নিজেকে দাবি করলেন নির্দোষ বলে। তার হাতে ছিল না পুলিশের কোনো হ্যান্ডকাফও।
ঘটনাটি ৮ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানার। আর আসামি শফিকুল ইসলাম শিমুল হলেন সদ্য শেষ হওয়া ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ১০নং বগুড়া ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং ঝিনাইদহ জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। তার গ্রামের বাড়ি শৈলকুপার বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামে, বাবার নাম কুবাদ আলী।
জানা গেছে, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ১০নং বগুড়া ইউনিয়নে পঞ্চম ধাপে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বিশ্বাস ও ঝিনাইদহ জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ বেশ কয়েকজন। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন শফিকুল ইসলাম শিমুল। নির্বাচনের পর থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগে নানা বিরোধ আর দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
এসবের জেরে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি প্রকাশ্যে পেঁয়াজের ক্ষেতে হাতুড়িপেটা ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় কল্লোল খন্দকার নামে এক যুবককে। তিনি বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামের মৃত আকবর খন্দকারের ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মিল্টন খন্দকার বাদী হয়ে গত ১২ জানুয়ারি ৮২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা (মামলা নং ৩) করেন।
মামলায় নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলকে করা হয় হুকুমের আসামি। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রথম থেকেই মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অনীহাসহ নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে থানা পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয় বাদীর পরিবার। করা হয় সংবাদ সম্মেলনও।
তবে ওই মামলায় আফান ও সজিব নামে মাত্র দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। আর শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাসির বিশ্বাস, ফরিদ মুন্সি, আতিয়ার মিয়া, আখির মুন্সি নামে মামলার পাঁচজন আসামি গত বুধবার আত্মসমর্পণ করেন। ওই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পাঁচদিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। তবে বিজ্ঞ আদালত তাদের বিরুদ্ধে একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার হুকুমের আসামি শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ পাঁচজনকে মঙ্গলবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যায় শৈলকুপা থানায় রিমান্ডের জন্য আনা হয়।
তবে ওই রিমান্ডের আসামিদের পুলিশের গাড়িতে নয়, বরং রাজকীয় স্টাইলে ব্যক্তিগত গাড়ি বহরে করে থানায় আনা হয়। সংবর্ধনার স্টাইলে আসামিদের সমর্থক-কর্মীরা আগে থেকে থানার ভেতর-বাইরে ভিড় জমায়। তারা থানার ভেতরেও স্লোগান দিতে থাকে, মুক্তি দাবি করে। এ সময় শৈলকুপা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মহসীন হোসেনসহ অন্যান্যদের আনাগোনা দেখা যায়। তবে বহিরাগতদের হঠাতে কোনো তৎপরতা ছিল না।
এক পর্যায়ে পুলিশ পরিদর্শক মহসীন হোসেন তার হ্যান্ডমাইক তুলে দেন রিমান্ডের আসামি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলের হাতে। তখন শফিকুল ইসলাম শিমুল পুলিশ বক্সে দাঁড়িয়ে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। তার হাতে ছিল না কোনো হ্যান্ডকাফও। তিনি হ্যান্ডমাইকে বক্তব্য দেন। নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
এদিকে রিমান্ডের আসামিদের নিয়ে পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডে হতাশা আর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হত্যা মামলার বাদী নিহতের ছোট ভাই মিল্টন খন্দকার। তিনি বলেন, ‘এমন ঘটনা নজিরবিহীন। আমরা ন্যায় বিচার পাব বলে মনে করছি না।’ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আস্থাহীনতার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
হত্যা মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) এসআই তৌফিক বলেন, ‘আসামিদের ব্যক্তিগত গাড়িতে আনা হয়নি। গাড়িগুলো ভাড়া করা।’
আসামিদের হাতে হ্যান্ডকাফ না থাকা ও পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করা প্রসঙ্গে শৈলকুপা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মহসীন হোসেন বলেন, ‘হাজার হাজার লোক সমাগম ছিল। উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে, তাই পরিস্থিতি শান্ত করতে আসামির হাতে হ্যান্ডমাইক তুলে দেওয়া হয়।’
ঝিনাইদহ জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘রিমান্ডের আসামির সঙ্গে কখনো কখনো দেখা করতে পারেন স্বজনরা। তবে অন্য কোনো বিধান নেই।’
মন্তব্য