-->
শিরোনাম

মিলছে পাতকুয়ার সুফল

তারেক মাহমুদ, রাজশাহী ব্যুরো
মিলছে পাতকুয়ার সুফল
রাজশাহী বরেন্দ্র অঞ্চলে জমিতে স্থাপন করা হয়েছে পাতকুয়া

অতীতে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে যে সকল জমিতে একবার ফসল চাষ হতো, এখন সেখানে পাতকুয়ার মাধ্যমে সেচ দিয়ে একাধিক বার ফসল চাষ করছেন কৃষকরা। বিনা খরচে পাতকুয়ার মাধ্যমে এই সেচের সুবিধা পাচ্ছেন ২৩ হাজার ১০২ জন কৃষক।

মূলত হাতকল আসার আগে এ অঞ্চলের কৃষি ও সুপেয় পানির নির্ভরযোগ্য আধার ছিল ‘পাতকুয়া’ তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাবমার্সিবল পাম্প, গভীর নলকূপসহ নানা প্রযুক্তির কাছে হারিয়ে যায় পাতকুয়া। তবে দীর্ঘদিন পর আবারো কৃষি কাজসহ অন্য কাজের জন্য পাতকুয়ার প্রয়োজন অনুভব করছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) প্রকৌশলীরা। এতে করে বরেন্দ্র আঞ্চলে সেচকাজসহ বহুমুখী ব্যবহার শুরু হয় পাতকুয়ার।

সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রতিদিন পানির স্তর নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকরা। কিন্তু বর্তমানে পাতকুয়া ব্যবহারের ফলে খুব সহজে সেচের সুবিধা পাচ্ছেন কৃষকরা।

বিএমডিএ অফিস সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী আঞ্চলের পবা উপজেলাসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা, নাচোল, গোমস্তাপুর ও নওগাঁ জেলার সাপাহার, পোরশা, ধামাইরহাট, পত্নীতলা, নিয়ামতপুর এবং মহাদেবপুরের ৯ উপজেলায় পাতকুয়া রয়েছে।

এখান থেকে পাঁচ হাজার ৩৪৮ দশমিক ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সৌরশক্তি চালিত ৪২০টি পাতকুয়া নির্মাণ করা হয়। এসব পাতকুয়ার মাধ্যমে এক হাজার ৩৭৮ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। যার মাধ্যমে বছরে ২৫ কোটি টাকার স্বল্প সেচের ফসলের আবাদ সম্ভব হয়েছে।

কৃষক ও প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা বলছেন, পাতকুয়ার ফলে তাদের দৈনন্দিন জীবনমান পাল্টে গেছে।

মহাদেবপুরের উপকারভোগী কৃষক আজিজুর রহমান জানান, গত মৌসুমে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে ফসলে সেচ দেওয়ায় পানির সমস্যার সমাধান হয়েছে। ধান, গম, আখসহ নানা ফসলের পাশাপাশি এখন জমিতে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, লাউ, মরিচ চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, টমেটো, আলু চাষের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেন। সম্পূর্ণ বিনা খরচে পানি পাওয়ায় আজিজুলের মতো অনেক কৃষক খুশি।

রাজশাহীর পবা উপজেলার আরেক কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানান, পাতকুয়াগুলো সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে চলার কারণে বিদ্যুৎ বা ডিজেল ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া ইচ্ছেমতো পানি তোলা যায়।

পোরশা উপজেলার মাজেদুল ইসলাম জানান, গত রবি মৌসুমে অন্য কৃষকদের পাশাপাশি তিনি নিজেও পাঁচ বিঘা জমিতে সবজির আবাদ করে বেশ লাভবান হয়েছেন। সেই সঙ্গে অন্যরাও এর মাধ্যমে সবজি চাষে লাভবান হয়েছেন।

বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ বলেন, বরেন্দ্র এলাকায় স্বল্পসেচে ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় পাতকুয়া নির্মাণ করা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বিএমডিএ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শুরু হয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এর কার্যকারিতা অব্যাহত রয়েছে। আর এসব পাতকুয়ার মাধ্যমে সুবিধাভোগ করছেন ২৩ হাজার ১০২ জন কৃষক।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান জানান, পাতকুয়ার সুবিধা হল- এখানে কোনো কৃষকের কাছ থেকে পানি খরচ নেওয়া হয় না। শুষ্ক মৌসুমে এটা অনেক কার্যকর। পাতকুয়া ব্যবহার নিয়ে বর্তমানে এলাকার কৃষকদের মাঝে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।

মন্তব্য

Beta version