-->
শিরোনাম

‘প্রতিশ্রুতি দেয়, সেতু দেয় না’

অরণ্য জুয়েল, রাঙামাটি
‘প্রতিশ্রুতি দেয়, সেতু দেয় না’
সেতু না থাকায় নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার করছেন দুর্গম করল্যাছড়ি এলাকার মানুষরা

আব্দুর রহমান। রাঙামাটি লংগদু উপজেলার আটারকছড়া ইউনিয়নের বাঁশের সাঁকোর দুর্ভোগ বন্ধে একটি পাকা সেতু চেয়ে আসছেন তিনি। ৪০ বছর ধরেই ধর্ণা দিয়ে যাচ্ছেন মেম্বার-চেয়ারম্যান, নেতা-প্রশাসন, এমপি-মন্ত্রীর সবার দুয়ারে। শুধু আশ্বাসই মিলেছে সেতু মেলেনি।

সেতু বানানোর জেদ ধরে নিজেই হয়েছেন ওয়ার্ড মেম্বার। কিন্তু একা ‘ক্ষমতার বলয়’ ভাঙতে না পারলেও সম্প্রতি সাঁকো থেকে পড়ে ভেঙেছেন বুকের হাঁড়। এখন ‘কিছু করতে না পারার ব্যর্থতার আক্ষেপে পুড়ছেন। ওই এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের এ মেম্বার আব্দুর রহমান বলেন, ‘আল্লাহ চাইলে সেতু হবে একদিন, ততদিন হয়ত বেঁচে থাকব না।’

একটি পাকা সেতুর অভাবে বছরের পর বছর নানান দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এখানকার মানুষদের। করল্যাছড়ি বাজারের ওপর নির্ভরশীল কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের একজন আব্দুর রহমান ।

দুর্গম পাহাড়ি এই জনপদের জীবনমান, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য যেন থমকে আছে বাজারটির সঙ্গে যুক্ত নড়বড়ে একটি বাঁশের সাঁকোয়। গ্রীষ্মকালে হেঁটে পার হওয়া গেলেও বর্ষায় নৌকা অথবা বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা। পারাপার চলছে ঝুঁকি নিয়েই। শেষ নেই ভোগান্তিরও। ক্ষেত-খামারে উৎপাদিত ফসল ও রোগী পরিবহণ করা যায় না সময় মতো।

চার দশকেও দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই সেতু নির্মাণে। সম্প্রতি সাঁকো থেকে পড়ে দুই শিশুর মৃত্যুতেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। নির্বাচনের সময় পাকা সেতুর প্রতিশ্রুতি দিলেও মনে রাখেনি কেউ। চলতি বছরেই সেতু নির্মাণ কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। তবে আর প্রতিশ্রুতি নয়, এবার বাস্তবায়ন দেখতে চান দুর্গম এ এলাকার মানুষ।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা গেছে, করল্যাছড়ি বাজারের মুখেই ওই বাঁশের সাঁকো। তবে দুইপাশে নৌ চলাচল অব্যাহ রয়েছে। বাজার প্রান্তে সাঁকো নির্মাণ না করে খালি রাখা হয়েছে। ফলে পা ভিজিয়েই এ বাঁশের সাঁকো পার হয়ে বাজারে আসতে হয় আলুটিলা, মধ্যম আলুটিলা, ডাইনেছড়া গ্রাম, রেইনকাজ্যা আনসার ক্যাম্প, আটারকছড়াসহ আশপাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে।

কিন্তু হেঁটে সাঁকো পার হওয়া গেলেও কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য, মৌসুমি ফল-ফসল, সবজি করল্যাছড়ি বাজারে নিতে নৌকার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে পরিবহণ খরচ দিয়ে পণ্যের বিক্রিতে লোকসানে পড়ছেন কৃষক। এছাড়া স্থানীয় মাদরাসা ও করল্যাছড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকেও দৈনন্দিন যাতায়াত করতে হয় সাঁকো দিয়েই। প্রসূতি ও রোগী পরিবহণ, নারী ও শিশুসহ বয়স্কদের সাঁকো পারাপারে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে হয়।

‘সাঁকো থেকে পড়ে দুই বাচ্চা মারা যাওয়ায় ভয়টা আরো বেশিই লাগে’, নিজের শংকার কথা বলছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ রহিমা বেগম। বলেন, ‘ছেলেমেয়েকে মাদরাসা-স্কুলে পাঠাতে ভয় লাগে- পানিতে পড়ে ডুবে যায় কিনা।’

করল্যাছড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলী বলেন, ‘বিদ্যুৎ, সড়ক, গাড়ি থাকায় করল্যাছড়ি বাজার থেকে সড়কপথে কৃষিপণ্য ঢাকায় যায়। কিন্তু বাঁশের সাঁকো দিয়ে পণ্য সরাসরি বাজারে নিতে না পারায় নৌকা ভাড়া আর শ্রমিকের বাড়তি মজুরি দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।’

‘নির্বাচনের সময় সবাই পাকা সেতুর প্রতিশ্রুতি দিলেও পরে মনে রাখে না কেউ’ বলছিলেন আবুল হাসেম লিডার। বলেন, ‘রাঙামাটির মন্ত্রী-এমপি, ডিসি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান-সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান-ইউএনও করল্যাছড়ি বাজারে এসে বহুবার সেতু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কার দোষে যে হয় না, আল্লাহই ভালো জানে।’

করল্যাছড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতি সভাপতি নুর মিয়া বলেন, ‘এত প্রতিশ্রুতির পরও আমরা পাকা সেতুতে ওঠতে পারছি না! বাঁশের সাঁকোতেই পড়ে মরতেছি’।

জনদুর্ভোগ লাঘবে কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের। লংগদু উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু বলেন, ‘এমপি মহোদয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। সে তালিকায় ওই ব্রিজটা এক নম্বরে রেখেছেন।’

চলতি বছরেই সেতু নির্মাণ কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন, লংগদু উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আব্দুল বারেক সরকার। বলেন, ‘করল্যাছড়ি বাজার সেতু নির্মাণে আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। করোনার কারণে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। অনুমোদন পেলেই এবছরই কাজ শুরু হবে।’

 

মন্তব্য

Beta version