-->
শিরোনাম

দিনাজপুরে টমেটো চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক

বিজন কুমার দাস, দিনাজপুর
দিনাজপুরে টমেটো চাষে
আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক
টমেটো ক্ষেতে কীটনাশক দিচ্ছেন একজন কৃষক

গত কয়েক বছর টানা লোকসান হওয়ায় দিনাজপুরে টমেটো চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন এখানকার কৃষকরা। উৎপাদন খরচ বেশি, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং অসময়ে শিলাবৃষ্টির কারণে টমেটো গাছ ঠিকমতো সংরক্ষণ করতে পারছেন না কৃষকরা। এ কারণে এবার স্বল্প জমিতে টমেটো রোপণ করেছেন চাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ তথ্যমতে, জেলায় সর্ববৃহৎ টমেটোর বাজার বসে সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের গাবুড়া হাটে। প্রতি বছর এই বাজারে টমেটো আমদানি হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টন। আর এসব টমেটো ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ীসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে।

ইউনিয়নের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টানা গত কয়েক বছর লোকসানের অঙ্ক গুণে গত বছর টমেটোতে সাময়িক লাভ হয়েছে। তাই চলতি বছর অনেক কৃষকই এই ফসলের আবাদ কমিয়ে দিয়েছেন।

কৃষকরা বলছেন, এই ফসলে উৎপাদন খরচ বেশি। পাশপাশি সংরক্ষণের অভাবকে দায়ী করে অনেক কৃষকই আবাদে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। চলতি বছর তাই স্বল্প টমেটো আবাদ করে স্বপ্ন বুনছেন এই জেলার কৃষকরা।

জেলার বীরগঞ্জ, বিরল, চিরিরবন্দরসহ আশপাশে উপজেলাগুলোতে আবাদ হয় টমেটো। এই জেলায় গত বছর রবি মৌসুমে টমেটোর আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে। আর হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩০ টনেরও বেশি।

এর পাশপাশি জেলায় নাবি জাতের টমেটোর আবাদ হয়েছে ১ হাজার ১১ হেক্টর জমিতে। আর হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৪০ টনেরও বেশি। চলতি মৌসুমে টমেটোর চারা রোপণের কার্যক্রম এখনো চলমান।

শেখপুরা ইউনিয়নের দিঘন এলাকার মোস্তাকিম নামে এক কৃষক জানান, আগে চার থেকে পাঁচ বিঘা (১ বিঘা সমান ৪৮ শতক) জমিতে টমেটোর আবাদ করতেন তিনি। এই বছর মাত্র দুই বিঘা জমিতে টমেটোর আবাদ করেছেন।

তিনি আরো জানান, গত কয়েক বছর টানা লোকসান হয়েছে তার। সমস্যা একটাই, গাছগুলো টিকে না। এছাড়া এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষে খরচ হয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এইবার যে কী হবে তা তিনি বলতে পারছেন না।

একই এলাকার আবদুর লতিফ নামে আরেক কৃষক বলেন, গতবার টমেটো আবাদ করছিলাম তিন বিঘা জমিতে। লাভ যেমন আশা করছিলাম তেমন হয়নি। আর তাছারা এই গাছে গোড়ায় পানি লেগে থাকলে গাছ বেশি দিন থাকে না, মরে যায়। টমেটোর সার ও বিষের দামও বেশি। তাই এ বছর টমেটো আবাদ করছি মাত্র এক বিঘা জমিতে।

গোপালপুর এলাকার মণিন্দ্র নাথ রায় নামে এক কৃষক বলেন, গত বছর তিন চার বিঘা করে টমেটো আবাদ করেছি। প্রতি বছর লোকসান হওয়ায় এবার মাত্র ১০ কাঠা (১২ শতক সমান ৫ কাঠা) জমিতে টমেটোর আবাদ করেছি।

তিনি আরো বলেন, ‘আলু রাখার হিমাগার আছে কিন্তু টমেটোর জন্য নেই। যদি হিমাগার থাকত তবে রেখে দেওয়া যেত। পরে দাম বাড়লে বিক্রি করা যেত। এই অল্প আবাদে যদি লাভ হয় তবে আগামীবার আবার আগের মতো টমেটো লাগাব।’

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) খালেদুর রহমান বলেন, ‘জেলায় অন্যান্য ফসলের পাশপাশি টমেটো আবাদ বেশ ভালো হয়। এ বছর অধিকাংশ জমিতে টমেটোর চারা রোপণ করেছেন কৃষকরা। টমেটো চাষের ব্যপারে কৃষকদের আমরা সবসময় সহযোগিতা করছি। আশা করি, এ বছর টমেটোর উৎপাদন বাড়বে।’

মন্তব্য

Beta version