কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকার রেললাইনের ওপর দিয়ে তৈরি হওয়া পাকা সড়ক পথে নেই কোনো গেট এবং গেটম্যান। জনসাধারণের জন্য গুরুতপূর্ণ এমন অনেক সড়ক রেললাইনের ওপর দিয়ে গেছে যেগুলো এখন পথচারীদের জন্য মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এসব রেলক্রসিং পারাপারের সময় প্রতিনিয়তই সেসব এলাকায় ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। এতে প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটলেও অরক্ষিত এসব রেলক্রসিংয়ে রেলগেট স্থাপনের কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। রেল কর্তৃপক্ষের আওতাভুক্ত বা ট্রাফিকিং ব্যবস্থার মধ্যে থাকা রেলক্রসিংগুলোতে গেটসহ গেটম্যান নিয়োগ আছে। এর বাইরে রেলগেট অথবা গেটম্যান নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে কোনো কিছুই তাদের জানা নেই।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ থেকে হালসা এবং পোড়াদহ থেকে খোকসা পর্যন্ত প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার রেলপথ আছে। এ রেলপথে ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক রেললাইনের ওপর দিয়ে পাকা সড়ক পথ আছে। এরমধ্যে মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি রেলক্রসিংয়ে গেট এবং গেটম্যান থাকলেও বেশিরভাগই নেই। আর এসব অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে মাঝেমধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা।
গত বছরের শুরুতে কুষ্টিয়ার কাঠদহচর এলাকায় শ্যালো ইঞ্জিন চালিত একটি ইট টানা পটাং গাড়ি ওঠে পড়ে রেললাইনের ওপর। এ সময় খুলনা থেকে ছেড়ে আসা মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেন সজোরে ধাক্কা দেয় পটাং গাড়িটিকে। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যায় গাড়িটি। ফলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় দুই শ্রমিক।
এতে লাইনচ্যুত হয় ট্রেনটির কয়েকটি বগি। এ কারণে কয়েক ঘণ্টা খুলনার সঙ্গে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলায় ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ থাকে। ওই স্থানে রেলক্রসিংয়ে শুধু কোনো গেট এবং গেটম্যান না থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় স্থানীয় এলাকাবাসী সেখানে রেলগেট স্থাপনের দাবি জানালেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের গেটপাড়া গ্রামে রেলক্রসিং। গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের সঙ্গে মিরপুর থানা শহরে যাওয়ার একমাত্র সড়ক পথ এই রেলক্রসিংটি। বড় কোনো যান এখান দিয়ে চলাচল না করলেও নছিমন, করিমন, অটোরিকশা এবং ছোট ট্রাকসহ অনেক যানবাহন এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে।
কিন্তু এ সড়কে রেলক্রসিংয়ে নেই কোনো গেট বা পথচারীদের সাবধান করার মতো কোনো ব্যবস্থা। শুধু সামনে রেলগেট চলাচল নিষিদ্ধ এমন একটি ভাঙাচোরা, অস্পষ্ট সাইনবোর্ড ছাড়া আর কিছুই নেই।
জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা মামুনুর রহমান বলেন, এ জায়গা দিয়ে আমরা প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করি। একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ সড়ক এটি। প্রতিদিন শত শত মানুষ এ সড়কে চলাচল করে। কিন্তু এখানে কোনো রেলগেট নেই। এ রেলক্রসিংয়ে গেটসহ গেটম্যান থাকা জরুরি।
একই উপজেলার ধুবাইল গেটপাড়া এলাকার অবস্থা আরো ভয়াবহ। এখানে রেলক্রসিংয়ের সড়কটির দুইপাশে এত ঢালু যে একপাশ থেকে আরেকপাশের কোনো কিছুই দেখা যায় না। সেইসঙ্গে সড়ক থেকে রেললাইনের একেবারে কাছে না আসা পর্যন্ত ট্রেন আসছে কিনা সেটাও দেখা যায় না। গত এক মাসে এই স্থানেই ঘটেছে কমপক্ষে তিনটি দুর্ঘটনা।
শরিফুল ইসলাম নামের একজন পথচারী বলেন, এখানে মাঝেমধ্যেই দ্রুতগতির ট্রেনের ধাক্কায় পথ চলতি মানুষ আহত হয়। বেশ কয়েকবার প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়াও ভ্যান, সাইকেলসহ বেশ কিছু ছোটখাটো যান ট্রেনের নিচে পড়ে দুমড়ে মুচড়ে গেছে। এসব বিষয়ে আমরা রেল কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
এ বিষয়ে মিরপুর স্টেশনের স্টেশন মাস্টার মীল ইসলাইল হোসেন বলেন, ‘রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের আওতাভুক্ত বা ট্রাফিকিং ব্যবস্থার মধ্যে থাকা রেলক্রসিংগুলোতে গেটসহ গেটম্যান নিয়োগ আছে। এর বাইরেও অনেক জায়গায় অরক্ষিত রেলক্রসিং আছে এবং অনেক জায়গায় নতুন সড়ক নির্মাণের কারণে নতুন নতুন ক্রসিং তৈরি হচ্ছে। এসব এলাকার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ে পাকশী অঞ্চলের ডিআরএম-১ বীরবল মন্ডল বলেন, ‘এই অবৈধ রেলক্রসিংয়ের জন্য যেসব সড়কগুলো দায়ী সেসব ক্রসিংগুলো একটাও রেলের সৃষ্টি না। দেশে সড়ক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে, তারা আমাদের কোনো অনুমতি না নিয়েই এগুলো করে থাকে। যার কারণে এসব প্রশ্নগুলো তাদেরকে করা উচিত।’
তিনি আরো বলেন, ‘তারপরও আমরা দ্বিপাক্ষীকভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি, যেসব গুরুত্বপূর্ণ রেলক্রসিং আছে সেগুলোর বৈধতা দিতে আমরা একটা চিন্তাভাবনা করছি। কিন্তু আসলে যেভাবে সড়ক তৈরি হচ্ছে এ সড়ক তৈরির ক্ষেত্রে রেলপথের ওপরে সড়ক নির্মাণের আগে অবশ্যই আমাদের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন।’
মন্তব্য