রাজবাড়ী বালিয়াকান্দি নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম। গত বছর নিজের ৬০ শতাংশ জমিতে রসুনের চাষ করেন তিনি। তবে এতে লোকসান গুনতে হয়েছে তাকে। চলতি বছর কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে নিজের জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। এখন পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। সূর্যমুখী চাষে লাভবান হবেন বলে আশাবাদী তিনি।
শুধু সিরাজুল নন চলতি মৌসুমে বালিয়াকান্দি উপজেলার আরো অনেক কৃষক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। তাদের বিনামূল্যে বীজ দিয়েছে কৃষি অধিদপ্তর।
পদমদী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সূর্যমুখী গাছগুলো বেশ বড় হয়েছে। ফুলও ধরেছে বাহারি। ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত যেমন দর্শণার্থীরা, তেমনি ফলন ভালো হওয়ায় খুশি কৃষক। এসব দেখে অন্য কৃষকরাও উৎসাহী হয়ে ওঠেছেন। কৃষি কর্মকর্তারা আশাবাদী সূর্যমুখী ফুলের চাষ নিয়ে।
শিক্ষক দম্পতি স্বপন সোম ও রিক্তা সোম তাদের এক একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। গাছগুলো ছয় থেকে সাত ফুট লম্বা হয়ে গেছে। গাছে ফুটে আছে ফুল। এর সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। সূর্যমুখী দেখতে প্রতিদিনই আসছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ।
শিক্ষক স্বপন সোম জানান, তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজের জমিতে কৃষিকাজও করেন। তার বাড়ির কাছে এক একর জমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করে থাকেন। কিন্তু ওইসব ফসল থেকে তিনি লাভের মুখ দেখেন না। পরে কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি এক একর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন।
কৃষি অফিস থেকেই স্বপন সোমকে বীজ দেওয়া হয়েছিল। চাষাবাদে তার সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে মাত্র ১২ হাজার টাকা। এর ফলন খুবই ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন সূর্যমুখী চাষে লাভবান হবেন।
স্বপন সোমের স্ত্রী রিক্তা সোম বলেন, ‘আমিও শিক্ষকতা করি। স্বামীকে দেখে কৃষিকাজে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। যতটা পারি তাকে সহযোগিতা করি। সূর্যমুখী ফুল দেখে খুবই ভালো লাগছে। মনে এক ধরনের প্রশান্তিও অনুভব করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘ফুলের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই মানুষ আসছে। তবে অনেক সময় কেউ কেউ ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যায়। এটাই একটু খারাপ লাগে। সার্বিকভাবে সূর্যমুখী যে ফলন হয়েছে তাতে আমি খুশি। সূর্যমুখীর তেল রান্না করে খাওয়ার পাশাপাশি গাছগুলো জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এখন থেকে প্রতি বছর সূর্যমুখী ফুলের চাষ করব।’
সূর্যমুখী ফুল দেখতে রাজবাড়ী শহর থেকে এসেছেন রোজা আক্তার। তিনি বলেন, ‘ফুল আমার খুব পছন্দের। এখানে ফুলের চাষ হয়েছে শুনে ছুটে এসেছি। এসে খুবই ভালো লাগছে। সুন্দর সূর্যমুখী ফুল ফুটেছে। আশা করব যারা এটার চাষ করেছে তারা যেন আগামীতেও এই ধারা অব্যহত রাখে।’
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি বছর বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৩৩ একর জমিতে ১০০ কৃষক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছে। তাদের সবাইকে বিনামূল্যে বীজ বিতরণ করা হয়েছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে ভোজ্যতেল হিসেবে সাধারণত সয়াবিন ব্যবহার হয়ে থাকে। এর ওপর থেকে নির্ভরতা কমাতে সূর্যমুখী চাষের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সূর্যমুখী চাষ করে কৃষকরা উন্নতমানের তেল পাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে যে জাতের সূর্যমুখী চাষ হচ্ছে তা আগের চেয়ে অনেক ভালো। আগে যে সূর্যমুখী চাষ হতো তা সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকায় টিয়া পাখির খেতে সুবিধা হতো। ফলে নষ্ট হতো। এবার যে জাতের সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে তা নিচের দিকে থাকে। ফলে পাখি নষ্ট করতে পারে না।’
আনোয়ার হোসেনের দেওয়া তথ্য মতে, সূর্যমুখী বীজ তিন হাজার টাকা মণ। এক একর জমিতে চাষ করলে ২২ মণ ফল পাওয়া যায়। তা থেকে তিনশ কেজির বেশি তেল উৎপাদন হয়।
মন্তব্য