-->

অস্তিত্ব সংকটে সিলেটের নদ-নদী

কামরুল ইসলাম মাহি, সিলেট
অস্তিত্ব সংকটে সিলেটের নদ-নদী
কারখানার বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে নদী

বাংলাদেশের চারদিকে নদ ও নদী রয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা সিলেটেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য নদ ও নদী। কিন্তু এগুলো এখন দখল আর দূষণে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। এছাড়াও পানিপ্রবাহ স্বল্পতা আর বালু উত্তোলনেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, সুরমা-কুশিয়ারা বিধৌত শত নদীর বিভাগ হচ্ছে সিলেট। তবে এখানে নদী ধ্বংসের অপকর্ম কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। যার প্রভাবে এখানকার জীবন-জীবিকা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও প্রাণ-প্রকৃতি বিপন্ন হচ্ছে। দখল, দূষণ ও ভরাটের কারণে সিলেটের অনেক নদী আজ মুমূর্ষু। এই নদীগুলো রক্ষা করা না গেলে সিলেটের অস্তিত্ব সংকট হবে।

আর এসবের মধ্যেই আজ (১৪ মার্চ) সারাদেশের মতো সিলেটেও পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস।

সরকারি হিসেবে বলছে, সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা-কুশিয়ারাসহ আটটি নদীর প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার তীর নদী খেকোদের দখলে রয়েছে। দখলের সঙ্গে শতাধিক ব্যক্তি ও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জড়িত। তবে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেট জেলা প্রশাসন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের যুগ্ম সম্পাদক ছামির মাহমুদ জানান, নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে প্রশাসনের চরম উদাসীনতা রয়েছে। শুধু সিটি করপোরেশন এলাকা ছাড়া এর বাইরে কোনো অভিযান হয় না। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নদীর অবৈধ দখলদারদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তা সঠিক নয়। এর বাইরে অনেক দখলদার রয়েছে। প্রতিটি নদী পরিদর্শন করে এই তালিকা প্রকাশ করা দরকার।

সারি নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবদুল হাই আল হাদী জানান, পিয়াইন, ডাউকী, ধলাই, লোভা, সারি নদী, উতমাছড়া নদী থেকে পাথর উত্তোলন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি। প্রশাসনের অভিযানে ধ্বংস হয় মাত্র দুই শতাংশ বোমা মেশিন। তাই বোমা মেশিন বিরোধী অভিযান অবিরাম পরিচালনা করতে হবে।

বিজ্ঞান সম্মতভাবে বালু উত্তোলন নিশ্চিত করতে হবে এবং ধলাই সেতুর নিচসহ যে সকল স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে সেগুলো বন্ধ করতে হবে।

খোয়াই রিভার ওয়াটার কিপারের প্রতিনিধি জাকির হোসেন সোহেল জানান, হবিগঞ্জের মাধবপুর ও চুনারুঘাটের অপরিকল্পিত শিল্পাঞ্চল এই মুহূর্তে সিলেট বিভাগের নদ-নদীর জন্য একটি বড় হুমকি। গত দেড় দশকে এ অঞ্চলে স্থাপন করা বিভিন্ন শিল্পকারখানা বর্জ্যশোধনাগার ব্যবহার করা হচ্ছে না।

এর বিপরীতে কারখানার বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। সুতাং নদীর অবস্থা এখন ঢাকার বুড়িগঙ্গা বা তুরাগের মতো। কুচকুচে কালো পানি ও রাসায়নিক দ্রব্যের গন্ধে সুতাং নদী অন্ধকার ভবিষ্যতের বার্তা দেয়। এ বার্তা গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করে দূষণ বন্ধে সিলেট বিভাগ জুড়ে গণআন্দোলন শুরু করা প্রয়োজন।

বাঁচাও বাসিয়া নদী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. ফজল খান বলেন, দখল-দূষণের কারণে বাসিয়া নদী আজ মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে। এটিকে বাঁচাতে হবে। বাসিয়া নদীর উৎসমুখ খনন করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম জানান, সিলেটের নদ-নদীগুলো ভালো নেই। দখল-দূষণ চলছে অবিরাম। নদীগুলো নানা কারণে একে একে মারা যাচ্ছে। ভারত থেকে আসা আন্ত:সীমান্ত নদীগুলো প্রাপ্য পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, আর দেশে মানুষদের দখল দূষণে নদীগুলো বিপন্ন হচ্ছে। নদী দূষণ বন্ধ করা এখন সবচেয়ে জরুরি। তাই নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস ২০২২ উপলক্ষে সিলেট বিভাগের নদ-নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে আগামী ২২ মার্চ ‘গণশুনানির’ আয়োজন করেছি।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে সবসময়ই অভিযান চলে। তবে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আনোয়ার সাদাত দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনও গঠন করা হয়েছে। নদীগুলো যাতে দখলমুক্ত থাকে সে ব্যাপারে এই কমিশন বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে থাকে। সে মোতাবেক আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অবৈধভাবে দখল যাতে না হয় সে বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা আছে। পাশাপাশি উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে। নদীতে চর পড়বে এটা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে আমাদের দেখতে হবে এই চর পড়ার কারণে চলাচলে সমস্যা হচ্ছে কিনা। নদী বাঁচাতে সরকার কর্তৃক অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।’

মন্তব্য

Beta version