-->
শিরোনাম

কৃষি বিপ্লবে বিনা

কামরুজ্জামান মিন্টু, ময়মনসিংহ ব্যুরো
কৃষি বিপ্লবে বিনা

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) দেশের কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে। উন্নতজাতের ধানের জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি গম, ডাল, তৈলবীজ, মসলাসহ উন্নতজাতের দুটি সবজিও উদ্ভাবন করা হয়েছে। এছাড়া ফল নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি বিভিন্ন ফসলের রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন, ফসল সংগ্রহ পরবর্তী লোকসান কমিয়ে আনাসহ নানা কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা যায়, গবেষকরা এ পর্যন্ত ১৮টি ফসলের উচ্চ ফলনশীল ১১৯টি জাত উদ্ভাবন করেছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ জাত কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে পাঁচ বছর গবেষণার পর সফলতা এসেছে। এছাড়া বর্তমানে আরো তিন শতাধিক জাত গবেষণাধীন। এগুলো আগামী তিন বছরের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় বীজ বোর্ডের ছাড়পত্র নিয়ে উন্মুক্ত করার পর্যায়ে রয়েছে।

উদ্ভাবিত জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিনাশাইল (ধান), বিনাধান ৪ থেকে ২৪, বিনাগম-১, এটমপাট-৩৮, বিনা দেশি পাট-২, বিনা পাটশাক-১, সফল (সরিষা), অগ্রণী (সরিষা), বিনা সরিষা-৩ থেকে ১০, বিনা চীনাবাদাম-১ থেকে ১০, বিনাতিল-১ থেকে ৪, বিনা সয়াবিন-১ থেকে ৬, বিনামসুর ১ থেকে ১১, বিনামুগ-১ থেকে ১০, হাইপ্রোছোলা (ছোলা), বিনা ছোলা-২ থেকে ১০, বিনামাষ-১ (মাষকালাইয়ের জাত), বিনা খেসারি-১, বাহার (টমেটো), বিনা টমেটো-২ থেকে ১৩, বিনালেবু-১ ও ২, বিনা রসুন-১, বিনা মরিচ-১ ও ২, বিনা পেঁয়াজ-১ ও ২, বিনা হলুদ-১।

গবেষকরা জানান, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন জাতের সঙ্গে সংকরায়ণ ও গামা রশ্মি প্রয়োগের মাধ্যমে মিউট্যান্ট লাইন উদ্ভাবন করা হয়। এরপর মিউট্যান্ট লাইনটি ফলন ও উন্নত বৈশিষ্ট্যের হলে অনুমোদন দেওয়া হয়।

বিভিন্ন ফলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জাতের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে গবেষণার মাধ্যমে উন্নত জাত উদ্ভাবন করা হয়। প্রত্যেকটি জাত অন্য জাতের চেয়ে অনেক বেশি ফলন দেয়। এছাড়া রোগ সহিষ্ণুসহ বিভিন্ন গুণাগুণ রয়েছে এসব জাতের।

বিনা’র উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম মিঠু বলেন, ‘দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা বিনার কাছে এই মুহূর্তে তিনশ’র বেশি জাতের ১৩শ মাতৃ গাছ রয়েছে। এগুলো নিয়ে গবেষণা চলছে। এই মুহূর্তে ১৯টি দেশের ৩৬ রকমের বিদেশি ফল রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, কানাডা, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশের ফলের জাত আমাদের সংগ্রহে আছে। ভিয়েতনাম থেকে আমরা কাজুবাদাম ও কফি সংগ্রহ করেছি। গবেষণাধীন রয়েছে উন্নত জাতের ডালিম, জাম, পেয়ারা, সফেদা, কদবেল।’

‘এছাড়া বাজারে যে বরইগুলো সাধারণত এখন পাই সেগুলো মার্চ-এপ্রিলেই শেষ হয়ে যায়। এজন্য দীর্ঘ ৫ বছরের গবেষণায় বিনা বরই-১ নামে টক-মিষ্টি স্বাদের একটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছি। নতুন জাতটি জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে লাগানো হলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ফুল আসবে এবং মার্চ-এপ্রিলে ফল তোলা শুরু হবে।’

বিনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কৃষিতে বিপ্লব ঘটানোর জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ উদ্ভাবিত জাত সারাদেশে চাষাবাদ হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন জাতের বীজ বিনামূল্যে ও অল্পমূল্যে কৃষকদের বিতরণ করছি। এতে কৃষকরাও আমাদের উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাত চাষে ব্যাপক আগ্রহী হচ্ছে।’

বিনার প্রশাসন ও সাপোর্ট সার্ভিসের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গবেষণার ধারাবাহিকতায় এ পর্যন্ত উচ্চ ফলনশীল ১১৯টি জাত করা হয়েছে। এরমধ্যে বেশিরভাগ জাত চাষ হচ্ছে। প্রতিনিয়ত উন্নত জাত উদ্ভাবনের জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জাত উদ্ভাবনের পাশাপাশি কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়নে প্রতিনিয়তই গবেষণা করছি। যার প্রভাবে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্ভাবিত লবণসহিষ্ণু বিভিন্ন জাতসহ অনেকগুলো জাত মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে এবং কৃষকরাও বেশ উপকৃত হচ্ছে। এছাড়া পাহাড়ের ফল সমতলে চাষ, শীত ও গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ায় চাষাবাদ, বারোমাসি বিভিন্ন ফলের জাত উদ্ভাবনের কারণে কৃষকরা আগ্রহ সহকারে চাষ করছে। তবে যেসব জাত এখনো পরিচিত পায়নি সেগুলো সব কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা চলছে।’

মন্তব্য

Beta version