-->
শিরোনাম
বেড়েছে মুরগির দাম

ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন পোলট্রি খামারিরা

আছাদুল ইসলাম আসাদ, জয়পুরহাট
ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন পোলট্রি খামারিরা

করোনার শুরুতে ব্যাপক লোকসানের সম্মুখীন হন জয়পুরহাটের পোলট্রি খামারিরা। তখন ছোট ও মাঝারি খামারিরা পুঁজি হারিয়ে পথে বসেন। তবে গত ৩ মাস ধরে মুরগির দাম বেড়েছে। এতে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন পোলট্রি খামারিরা।

জয়পুরহাট প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ছোট-বড় সোনালি ও ব্রয়লার মুরগির খামার ছিল ১১ হাজার ১২০টি। আর লেয়ার মুরগির (ডিম পাড়া) খামার ছিল ৩৭০টি। করোনার আগে এসব খামার থেকে প্রতি বছর মাংস উৎপাদন হতো এক লাখ ২৩ হাজার ২০০ টন। তখন জেলায় সাড়ে ৯ লাখ জনসংখ্যার জন্য মাংসের চাহিদা ছিল চার হাজার ২০০ টন। এর বিপরীতে জেলার উদ্বৃত্ত মাংসের পরিমাণ ছিল ৮১ হাজার ২০০ টন। যা জয়পুরহাট জেলার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হতো।

কিন্তু করোনার কারণে এই পোলট্রি ব্যবসায়ে ধস নামে। লোকসানের সম্মুখীন হন খামারিরা। তবে ধীরে ধীরে লোকসান কাটিয়ে ফের পোলট্রি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন খামারিরা।

বর্তমানে পোলট্রি শিল্পকে কেন্দ্র করে জেলায় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় দুই লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

সোনালি মুরগি উৎপাদনের খামার মালিকরা জানান, সোনালি জাতের এক দিনের বাচ্চা ১৭ টাকা থেকে ২০ টাকা দামে খামারিরা ক্রয় করে ৬০-৬৫ দিন পালন করেন। ৬৫ দিন পালন করে প্রতি কেজি মাংস উৎপাদনে তাদের খরচ হয় ২২০ টাকা থেকে ২২৫ টাকা। বর্তমানে পাইকারি বাজারে ২৪৫-২৫০ টাকা কেজি দরে সোনালি মুরগি বিক্রি করছেন তারা। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা তা ২৭০-২৭৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

অপরদিকে ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন খামারিরা। আর খুচরা বাজারে তা ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুরগির দাম বাড়া প্রসঙ্গে খামারি ও ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, করোনাকালে জেলার সিংহভাগ খামার বন্ধ হয়ে যায়। ফলে মুরগি উৎপাদনে জেলাজুড়ে ধস নামে। এতে গত তিন মাস ধরে মুরগির বাজারে সরবরাহ কম। তাই দাম বেড়েছে।

জয়পুরহাট জেলা সদরের আমতলি এলাকার বাসিন্দা উত্তরণ ফার্মিং কমপ্লেক্স এবং কিষাণ হ্যাচারির মালিক ফরিদ হোসেন জানান, করোনার কারণে ২০২০ সালের মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে পোলট্রি শিল্পে ধস নামে। তখন হ্যাচারিগুলোর উৎপাদিত এক দিনের বাচ্চা কেনার কোনো খামারি ছিল না। তবে এখন সোনালি জাতের এক দিনের বাচ্চা ১৭-১৮ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। খামারিরা ধীরে ধীরে মুরগি পালনে এগিয়ে আসছে।

আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জ বাজারের শেফালি পোলট্রি ফার্ম লিমিটেডের মালিক সাইফুল আলম জানান, করোনার কারণে বিপুল অংকের লোকসান গুনতে হয়েছে তাদের। বর্তমানে যাদের খামারে মুরগি রয়েছে, তারা এখন লাভের মুখ দেখছেন। অধিকাংশ খামারি, হ্যাচারি ও ফিড মিল মালিকদের ব্যাংকে ঋণ আছে। তাই সরকারের কাছে ঋণের সুদ মওকুফের আহ্বান জানান তিনি।

জয়পুরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ডিএলও) ডা. মাহফুজার রহমান জানান, করোনার জন্য জেলার পোলট্রি খামার, হ্যাচারি এবং ফিড মিল মালিকরা লোকসানে পড়েছিলেন। ওই সময় মুরগির দামও পড়ে যায়। এখন শিল্পটি আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। মুরগির ভালো দাম পাওয়ায় বন্ধ খামারগুলো উৎপাদনে যেতে শুরু করেছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ খামারিদের সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

জয়পুরহাট জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বণিক সমিতি) সভাপতি আহসান কবীর জানান, গত দুই বছরে করোনার প্রভাবে জেলায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে পোলট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। এ শিল্প এখনো বড় বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে।

মন্তব্য

Beta version