-->
শিরোনাম
খোলা আকাশের নিচে ২ লাখ ৯২ হাজার টন সার

নষ্ট হচ্ছে গুণগত মান, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ

সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা
নষ্ট হচ্ছে গুণগত মান, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ
খোলা আকাশের নিচে স্তূপ করে রাখা হয়েছে ইউরিয়া সার

উত্তরবঙ্গের একমাত্র নদীবন্দর সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি। এখান থেকেই উত্তরের ১৬ জেলায় সার সরবরাহ করা হয়। এ বন্দরে সার মজুতের জন্য রয়েছে দুটি গোডাউন; যেখানে মজুত রাখা যায় আট হাজার টন সার। তবে বর্তমানে বন্দরটিতে মজুত রয়েছে তিন লাখ টন সার।

গোডাউন না থাকায় খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে দুই লাখ ৯২ হাজার টন সার। মাসের পর মাস খোলা আকাশের নিচে রাখায় গুণগত মান হারাচ্ছে এসব সার। পাশাপাশি এতে দূষিত হচ্ছে বন্দর এলাকার পরিবেশ। মারা যাচ্ছে আশপাশের গাছপালাও।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা মুখ না খুললেও খোলা আকাশের নিচে রাখা সারের রাসায়নিক উপকরণ কমে যাওয়ার পাশাপাশি কৃষিকাজে এই সার ব্যবহারে কাক্সিক্ষত সুফল আসবে না বলে দাবি কৃষি কর্মকর্তা ও বন্দর ব্যবসায়ীদের।

শাহজাদপুর উপজেলা প্রশাসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বন্দর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার কৃষিজমিতে ব্যবহারের জন্য দেশের বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদিত ও বিদেশ থেকে আমদানি করা ইউরিয়া, পটাশ এবং জিম সারের সিংহভাগ সরকারি বিতরণ সংস্থা বাফার গোডাউনে সরবরাহ করা হয় বাঘাবাড়ি নৌবন্দর দিয়ে।

ইরি ও বোরো মৌসুমে কৃষিজমিতে ব্যবহারের জন্য অধিক পরিমাণে সার আনা হলেও সারাবছরই বন্দরটিতে ছোট-বড় জাহাজে আনা হয় ইউরিয়া সার।

বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে সেখানে তিন লাখ টন সার মজুত রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র আট হাজার টন ইউরিয়া রয়েছে বন্দর ও বাফার দুটি গোডাউনে। অবশিষ্ট সার প্লাস্টিকের কাগজ দিয়ে খোলা আকাশের নিচে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এতে অনেক বস্তার ভিতরেই সার জমাট বেঁধে গেছে। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।

এ ছাড়া রাসায়নিক সারের প্রভাবে ইতোমধ্যে বন্দর এলাকার অধিকাংশ গাছ মারা গেছে। গুণগত মানের কথা না ভেবে এ সারগুলোর জমাট ভেঙে পুনরায় বস্তায় ভরে দেওয়া হচ্ছে সার ডিলারদের।

বাঘাবাড়ি নদীবন্দরে কর্মরত একাধিক শ্রমিক জানান, সারাবছরই বিভিন্ন জায়গা থেকে সার আসে বন্দরটিতে। কিন্তু জায়গা সংকটে খোলা আকাশের নিচেই স্তূপ করে রাখা হয় ইউরিয়া। যার ফলে সার জমাট বেঁধে যায়, বন্দর এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়ায়।

বাঘাবাড়ি নদীবন্দরের ইজারাদার আবুল হোসেন জানান, বন্দরের একটি মাত্র গোডাউন, যার ধারণক্ষমতা চার হাজার টন। আর বাফার গোডাউনের ধারণক্ষমতা চার হাজার টন। কিন্তু বন্দরে সার আসে চার থেকে পাঁচ লাখ টন। এর মধ্যে কিছু সার তাৎক্ষণিকভাবে ডিলারদের কাছে পাঠানো হলেও বাকি সব সার খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়। এতে সারের গুণগত মান নষ্ট হয়।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন, ‘বন্দরে খোলা আকাশের নিচে সার রেখে তার গুণগতমান নষ্ট হওয়ার ঘটনা বন্ধে একাধিকবার বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আবারো গুদাম নির্মাণের জন্য চিঠি দেওয়া হবে।’

বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দরের বন্দর কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘প্রথমত বাঘাবাড়ি বন্দরে পর্যাপ্ত গুদাম নেই। দ্বিতীয়ত সার ডিলাররা সময়মতো সার বন্দর ইজারাদারদের কাছ থেকে বুঝে নেন না। যার ফলে ইউরিয়াসহ অন্যান্য সারের মজুত বৃদ্ধি পেয়েছে। মজুতকৃত সার বাধ্য হয়েই খোলা আকাশের নিচে রাখা হচ্ছে।’

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আহসান শহিদ সরকার বলেন, ‘ইরি-বোরো মৌসুমে সারের চাহিদা বাড়ায় বাঘাবাড়ি বন্দর হয়ে এর সরবরাহও বেড়ে যায়। এ সময় বাফার গুদামে জায়গা না থাকায় খোলা আকাশের নিচেই এই সার রাখা হয়। ইউরিয়া সার একটি রাসায়নিক উপকরণ, খোলা আকাশের নিচে স্তূপ করে রাখার ফলে ইউরিয়া বাতাসে উড়ে যায়। এতে সারের পরিমাণ কিছুটা কমে যায়।’

মন্তব্য

Beta version