-->

আলু-ভুট্টার রাজ্যে তামাকের থাবা

নজরুল ইসলাম রাজু, রংপুর ব্যুরো
আলু-ভুট্টার রাজ্যে তামাকের থাবা
রংপুরের গঞ্জীপুরে নারীরা তামাক কাজে ব্যস্ত

শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরাঞ্চল। তবে ফসল উৎপাদন করে ক্রমাগত ক্ষতি হওয়ায় উত্তরের জেলা রংপুরের চাষিরা ঝুঁকছেন তামাক চাষে। ক্ষতি জেনেও বেশি লাভের আশায় হওয়ায় বিষাক্ত তামাক চাষ করছেন কৃষকেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলু ও ভুট্টার দাম কম হওয়ায় এ চাষে ঝুঁকি নিয়েছেন চাষিরা। রংপুরের সদর উপজেলার পাগলাপীরে বেশি তামাক চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া গংগাচড়া, তারাগঞ্জ ও পীরগাছায়ও হচ্ছে চাষ। গত বছরের চেয়ে ৩শ’ হেক্টর বেশি জমিতে তামাক চাষ হয়েছে।

কৃষকেরা জানান, আলু, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ঋণ পাচ্ছে না তারা। অন্যদিকে তামাক চাষের জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো আগে থেকেই টাকা দিচ্ছে তাদের। এতে অনেকটা বাধ্য হয়েই তামাক চাষ করছেন কৃষকেরা। সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে তামাক চাষ ছেড়ে দেবেন বলেও জানিয়েছেন তারা।

চলতি মৌসুমে রংপুরের পাগলাপীরের ভিন্নজগৎ এলাকার কৃষক রফিকুল ইসলাম তার এক একর জমিতে তামাক চাষ করেছেন। এর আগে এই জমিতে আলু ও গম চাষ করতেন তিনি।

দৈনিক ভোরের আকাশকে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আলু ও গমের দাম কম। তাই তো বেশি লাভের আশায় তামাক চাষ করেছি। অনেক পরিশ্রম ও শরীরের ক্ষতির কথা জেনেও তামাক করেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে কৃষি ঋণ না দেওয়ায় তামাক চাষ করেছি। সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে বিষাক্ত এ চাষ ছেড়ে দেব।’

তারাগঞ্জ এলাকার কৃষক মুনসুর আলী জানান, তিন বিঘা জমিতে বেশি লাভের আশায় বিষাক্ত তামাক চাষ করেছেন তিনি। কিন্তু এর আগে এই জমিতে আলু চাষ করতেন। এক সময় আলুতে লাভ বেশি ছিল কিন্তু এখন আলুর দাম কমে যাওয়ায় আবারো তামাক চাষ করছেন তিনি। তবে আলুর দাম বেড়ে গেলে এই বিষাক্ত চাষ ছেড়ে দেবেন বলে জানান মনসুর আলী।

গঙ্গাচড়া উপজেলার তামাক চাষি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি বছর দেড় বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছি। কিন্তু হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে অধিকাংশ তামাকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আলুর দাম কমে যাওয়ায় এ চাষে ঝুঁকেছি। আগামীতে তামাক চাষ ছেড়ে দেব।’

পাগলাপীর এলাকার খলেয়া গ্রামের লাবলু মিয়া বলেন, ‘৫০ শতক জমিতে আলু চাষ করতে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। আলু উৎপাদন হয় ৯০-১০০ মণ। আর তামাক চাষ করতে ২৫ শতক জমিতে খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। উৎপাদন হয় ৭-৮ মণ। তবে তামাকের চেয়ে আলুতে লাভ বেশি।’

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১১-১২ সালে দুই হাজার ৫৮৫ হেক্টর জমিতে, ১২-১৩ সালে দুই হাজার ৯২০ হেক্টর, ১৩-১৪ সালে দুই হাজার ৫২৫ হেক্টর, ১৪-১৫ সালে ২১৩০ হেক্টর, ১৫-১৬ সালে ১৫৯৫ হেক্টর, ১৬-১৭ সালে এক হাজার ৩৮৮ হেক্টর, ১৭-১৮ সালে ১৫৪০ হেক্টর, ১৯-২০ সালে ১৫২৫ হেক্টর, ২০-২১ সালে ১৮৬০ হেক্টর ও ২০২১-২২ সালে এক হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘তামাক চাষের জন্য বিভিন্ন কোম্পানির লোকজন আগে থেকেই কৃষকদের টাকা দিচ্ছে। এ কারণে তামাক চাষ বাড়ছে। তবে গত ৪-৫ বছরের চেয়ে অনেক কমে গেছে এ চাষ।’

মন্তব্য

Beta version