-->
শিরোনাম

দেশের আলু যাচ্ছে বিদেশে, শঙ্কায় ক্রেতারা

সোহেল রানা, ঠাকুরগাঁও
দেশের আলু যাচ্ছে বিদেশে, শঙ্কায় ক্রেতারা

ঠাকুরগাঁও থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীন ও কাতারসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে দেশের আলু। উৎপাদন বেশি হওয়ায় আগাম আলুর দাম পায়নি জেলার আলুচাষিরা। ফলে সে সময় চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লেও বর্তমানে আলুর দামে মুখে হাসি ফুটেছে তাদের।

ভুল্লী শবদল এলাকার কৃষক মফিজুর রহমান জানান, ২৮ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন তিনি। এর আগে পাঁচ বিঘাতে আগাম আলু চাষে লোকসান হয়েছে তার। কারণ উৎপাদন বেশি হলেও দাম কম। আর অসময়ে মাঘের বৃষ্টির কারণে এ লোকসান গুনতে হয়েছে তাকে। কিন্তু এখন আলুর ভালো দাম পাওয়া খুশি এলাকার সব আলুচাষি।

ভুল্লীর আলুচাষি খয়বর ইসলাম বলেন, ‘আগাম আলু উৎপাদনে দুই লাখ টাকা লোকসানে হয়েছে। কিন্তু এখন আলুর দাম পাচ্ছি। প্রতিকেজি ১৪ টাকা দরে ক্ষেত থেকেই আলু বিক্রি হচ্ছে। এ আলু কয়েক ব্যবসায়ীর হাত বদল হয়ে যাচ্ছে বিদেশে।

‘এত পরিমাণে আলুর উৎপাদন হয়েছে অন্যান্য বছরের শেষ সময়ে আলু অনেক চড়া দামে কিনলেও, এবারে কোল্ডস্টোরেজ জাত আলু প্রতি কেজি আলু ২০-২২ টাকায় কিনতে পারবে ক্রেতারা।’

সদরের মথুরাপুরের আলু ব্যবসায়ী মেসার্স নার্গিস ট্রেডার্সের পরিচালক নাছির উদ্দীন জানান, এযাবৎ তিন কন্টিনারে ১৩ টন আলু বিদেশে রপ্তানি করেছেন তিনি। একশ টন আলু দেওয়ার চুক্তি হয়েছে রংপুরের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও থেকে অনেক ব্যবসায়ী রংপুর, যশোরসহ অনেক বড় ব্যবসায়ীকে আলু দিচ্ছে বিদেশে পাঠানোর জন্য। আমি তার মধ্যে একজন। ১৪-১৫ টাকা দরে কেজিপ্রতি আলু কিনে ১৭ টাকা কেজি দরে আলু বিদেশে দিচ্ছি।’

রপ্তানির জন্য কার্টুনে ভরা হচ্ছে আলু

 

এই ব্যবসায়ীর চাতালে গিয়ে দেখা যায়, ২৪ জন নারী ও আট জন পুরুষ আলু বাছাইয়ের কাজ করছে। কাপড় দিয়ে আলু মুছে তিন কেজির কার্টনে আলু প্যাকেট করা হচ্ছে। তারপর সে আলু একদিন সংরক্ষণে রাখার পর কন্টিনারে লোড হয়।

আলু ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর আলুর উৎপাদন হয়েছে অনেক বেশি। কোল্ডস্টোরেজে আলুর ৫৫ কেজি প্রতি বস্তা ভাড়া ২৬০ টাকা নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। আমরা দাবি জানিয়েছিলাম যেন ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু দাবি পূরণ হয়নি। কাঁচামালের ব্যবসায় আমাদের দাবিগুলো অসহায়। তাই অনেক ব্যবসায়ী বিদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। লাভবানও হচ্ছে।’

এ দিকে খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জাতভেদে প্রতি কেজি আলু ১৮-২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

আলুর ক্রেতা জিয়াউল হক রকি বলেন, ‘আগাম আলু বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। আগাম আলু বাজারে আসার সময় অনেক কম দামে কিনেছিলাম। কিন্তু এখন একটু বেশি দামে আলু কিনতে হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে ঠাকুরগাঁও থেকে আলু বিদেশে যাচ্ছে। অনেক ভালো।’

কিন্তু শঙ্কা নিয়ে এই ক্রেতা বলেন, ‘এত বেশি উৎপাদন হয়েও প্রতি বছর বাজারে আলু সংকট তৈরি হয়। আর আমাদের প্রতি কেজি আলু ৫০ টাকা পর্যন্ত কিনতে হয়। এ বছর যেন কোল্ডস্টোরেজ জাত আলুর বাজারে সংকট না তৈরি হয়, সে জন্য আগাম পরিকল্পনা নেবে সরকার এই প্রত্যাশা করি।’

খুচরা বাজারে আলুর ক্রেতা মহিউদ্দীন আলম বলেন, ‘আলুর বাজারব্যবস্থাটা কিছু বুঝে আসে না। প্রতিবছর জেলাতে অনেক বেশি উৎপাদন হয়। এখন বাজারে অনেক আলু সরবরাহ আছে; তবুও দামের তারতম্য লক্ষ্য করছি। প্রকারভেদে ১২- ২০ টাকা দরে আলু কিনতে হচ্ছে। এ দর অনেক বেশি হয়ে যায়। প্রতি কেজি আলু ৮-১০ টাকার মধ্যে হলে নিম্নআয়ের মানুষরা অনেক খুশি হতাম।’

ক্রেতা মহনী রানী বলেন, ‘আলু আমাদের গরিব মানুষের প্রতিদিনের তরকারি। আমরা শুধু শুনছি জেলাতে অনেক বেশি আলু উৎপাদন হয়। চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু বাস্তবপক্ষে আমাদের আলু বেশি দামে কিনে খেতে হয়। দু-একদিন দাম কমলেও পরে আবার বেড়ে যায়।’

বাজার বিশ্লেষক রুবেল ইসলাম বলেন, ‘জেলাতে ব্যাপক আলুর উৎপাদন হয়েছে। অনেক আলু ব্যবসায়ী কোল্ডস্টোরেজে বেশি ভাড়ায় না রেখে আলু বিদেশে পাঠাচ্ছে। জেলার ১৫টি কোল্ডস্টোরেজে আলু নেওয়া হচ্ছে। প্রত্যাশা করছি, এবারে আলুর দাম নিম্নআয়ের মানুষের নাগালের মধ্যে থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘এবার আগাম আলু চাষে লোকসান হলেও চাষিরা এখন দাম পাচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের মনিটর করতে হবে। যে সময়ে বাজারে আলুর সংকট হয়। এবারেও একই সংকট তৈরি হবে কিনা, প্রতি বছর আলু উৎপাদন অধিক হলেও বাস্তবপক্ষে খুচরা বাজারে আলু ব্যবসায়ীদের কিছু অসাধুচক্র আছে যারা আলু কোল্ডস্টোরেজে মজুত করে বাজাওে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এবং দাম বাড়ায়। ফলে আলু ৫০ টাকা দরে কিনতে হয় ক্রেতাদের।’

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, ‘এ বছর জেলায় ২৭ হাজার ৬৭৭ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৭৯৮ টন। এযাবৎ আলু উত্তোলন করা হয়েছে ৫ লাখ ২৫ হাজার ৪৮২ টন।’

তিনি বলেন, ‘লক্ষ্যমাত্রার বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে ঠাকুরগাঁওয়ে। ঠাকুরগাঁওয়ের আলু জেলার চাহিদা পূরণ করে যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে এবং বিদেশেও যাচ্ছে। এ বছর আলুর সংকট তৈরি হওয়ার কথা না।’

মন্তব্য

Beta version