-->
শিরোনাম

রাস্তায় খুঁজে পাওয়া গেল ‘একাধিক’ বাঘের পায়ের ছাপ

শরিফুল ইসলাম, নীলফামারী 
রাস্তায় খুঁজে পাওয়া গেল ‘একাধিক’ বাঘের পায়ের ছাপ
গ্রামের রাস্তায় একাধিক বাঘের পায়ের ছাপ শনাক্ত করছেন বন কর্মকর্তারা

নীলফামারীতে বৈদ্যুতিক ফাঁদে একটি চিতা বাঘের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষুধার্ত ওই বাঘটি রাতের অন্ধকারে মুরগি ব্যবসায়ী অলিয়ার রহমানের খামারে ঢুকতে চেষ্টা করলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

শুক্রবার (১৮ মার্চ) জেলা সদরের চওড়াবড়গাছা ইউনিয়নের কাঞ্চনপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই শনিবার (১৯ মার্চ) দুপুরে ওই এলাকায় একাধিক বাঘের পায়ের ছাপ মিলেছে।

মূলত রংপুরের বিশেষ টিমের তত্ত্বাবধানে মৃত চিতা বাঘের অপর সঙ্গীকে খুঁজতে গিয়ে একাধিক বাঘের পায়ের ছাপের সন্ধান পায় বন কর্মকর্তারা। তবে এখনো কোনো বাঘের অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি তারা।

এতে বাঘ আতঙ্ক বিরাজ করছে নীলফামারী সদরের গোড়গ্রাম ও চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের ছয় গ্রামবাসীর মধ্যে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মসজিদে মসজিদে মাইকিং করে জনগণকে নিরাপদে থাকার জন্য সতর্ক করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ফাঁদে চিতাবাঘের মৃত্যু, ভুট্টাক্ষেতে আরেকটির ‘গর্জন’

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বন বিভাগের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলের আশপাশে লাল পতাকা দিয়ে গ্রামবাসীর চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ডারিরপাড়, ধোবাডাঙ্গা, দলবাড়ি, তীলবাড়ি ডাঙ্গা, কাঞ্চনপাড়া, হিন্দুপাড়ায় বাড়ির সামনে হাতেগোনা কয়েকজন নারী-পুরুষকে দেখা গেছে। সবার চোখেমুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ।

দলবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘হঠাৎ এলাকায় বাঘ আসার কথা শুনে আতঙ্কে আছি। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে অনেক ভয় হচ্ছে। তাদের ঘরের বাইরে বের হতে বাধা দিচ্ছি। তবে তারা বাধা মানতে চায় না।’

স্থানীয় আব্দুর রহিম বলেন, ‘বাঘের আতঙ্কে ঘর থেকে বের হই না। হঠাৎ যদি বাঘ আক্রমণ করে তখন কী হবে?’

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার বলেন, ‘বাঘ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত আমি এখানকার স্থানীয়দের অনুরোধ করব, তারা যেন অতি উৎসাহী না হয়ে নিরাপদ দূরত্বে থাকে।’

রংপুর বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা স্মৃতি সিংহ রায় বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের চৌরাঙ্গী বাজারের নতিবাড়ী গ্রামের সড়কে একাধিক বাঘের পায়ের ছাপ দেখা গেছে। এসব পায়ের ছাপ দেখে মনে হচ্ছে শনিবার ভোরের দিকে এখানে বাঘের আনাগোনা ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এই এলাকায় একাধিক বাঘ রয়েছে।’

নীলফামারী জেলার বন বিভাগের কর্মকর্তা মোনায়েম খান জানান, ছাপগুলো ভারতীয় বাঘের হতে পারে। লুকিয়ে থাকা বাঘ জীবিত অবস্থায় ধরতে কাজ করছে ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর থেকে আসা বন বিভাগের তিনটি ইউনিট। জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমানসহ বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

গত শুক্রবার ভোরে কাঞ্চনপাড়ায় অলিয়ার রহমানের মুরগির খামার থেকে একটি মৃত চিতা বাঘ উদ্ধার করা হয়। ইতোমধ্যে শিয়াল মারার বৈদ্যুতিক ফাঁদে পড়ে মারা যাওয়া ওই চিতা বাঘটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। নীলফামারী প্রাণিসম্পদ বিভাগে বাঘটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।

এ ঘটনায় স্থানীয়দের দাবি ছিল মৃত চিতা বাঘের সঙ্গী পার্শ্ববর্তী ভুট্টাক্ষেতে লুকিয়ে আছে। তারা চিতা বাঘের গর্জন শুনতে পেয়েছে। ওই সঙ্গীকে খুঁজতে গিয়েই একাধিক বাঘের পায়ের ছাপের সন্ধান পায় বন কর্মকর্তারা।

মন্তব্য

Beta version