-->
শিরোনাম

চিনি, পানি, রং দিয়ে গুড়

শামীম রেজা, রাজবাড়ী
চিনি, পানি, রং দিয়ে গুড়
ভেজাল গুড়

বহু বছর আগে থেকেই রাজবাড়ীর পাংশার আখের গুড়ের সুনাম রয়েছে। এ উপজেলার অনেক কৃষক আখ চাষ করে তাদের ভাগ্য বদল করেছেন। তবে আখের গুড়ের সেই সুনামকে পুঁজি করে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী তৈরি করছেন ভেজাল গুড়।

পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা পচা গুড়ের সঙ্গে চিনি, রং, সোডা, হাইড্রোজ, ফিটকিরিসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে গুড়। যা যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এ নিয়ে কোনো তথ্য নেই প্রশাসনের কাছে।

রাজবাড়ী শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে পাংশার বাহাদুরপুর ইউনিয়ন। ওই ইউনিয়নের ডাঙ্গিপাড়া ও রঘুনন্দনপুর গ্রামে গড়ে উঠেছে দুটি ভেজাল গুড়ের কারখানা। কারখানা দুটির আশপাশ দিয়ে পচা গুড়ের গন্ধ ছড়াচ্ছে।

ওই দুই কারখানার ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায় শতাধিক ছোট ছোট পাত্রে গুড় ঢেলে রাখা হয়েছে। অনেক খালি পাত্রে গরম গুড় ঢালাও হচ্ছে। পাশেই রয়েছে দুটি চৌবাচ্চা। সেখানে দুই শ্রমিক খালি পায়ে লুঙ্গি গিট দিয়ে মাটির কোলা থেকে পচা গুড় ঢালছে।

সেই গুড়ে বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে পায়ের সাহায্যে মিশ্রণ করা হচ্ছে। শ্রমিকদের গা থেকে ঘাম পরছে ওই গুড়ের মধ্যে। মাঝে মধ্যে হাচি-কাশিও দিচ্ছেন তারা।

চৌবাচ্চায় মিশ্রণ গুড় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে লোহার কড়াইতে করে চুলার ওপর। সেখানে দেওয়া হচ্ছে তাপ। বেশ কিছু সময় তাপ দেওয়ার পর ওই গুড়ে মেশানো হচ্ছে চিনি, রং, হাইড্রোজ, ফিটকিরিসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল।

এভাবে আরো কিছু সময় জ্বালানোর পর তা রাখা হচ্ছে ছোট ছোট টিনের পাত্রে। পরে ওই গুড় বাজারজাত করার জন্য পাঠানো হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

রঘুনাথপুর গ্রামে ভেজাল গুড়ের কারখানা মালিক রাজকুমার। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যসম্মত না হলে গুড় তৈরি করতাম না। আমাদের গুড় মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক না।’

চিনি, রং, হাইড্রোজ, ফিটকিরিসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল কেন মেশানো হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চিনি আর ফুড কালার ব্যবহার করি। কেমিক্যাল বা অন্য কিছু ব্যবহার করি না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান, প্রতিদিন দুই কারখানা থেকে তৈরি করা হয় প্রায় ১০০ মণ গুড়। বিভিন্ন কেমিক্যাল মেশানো হয় বলে তারা এই গুড় খান না।

গুড়ের কারখানার পাশেই আলেয়া বেগমের বাড়ি। তিনি বলেন, ‘পচা গুড়ের গন্ধে ঘরে থাকা যায় না। ভাত, তরকারির ওপরে মশা-মাছি পড়ে থাকে। গুড়ের কারখানার কালো ধোঁয়ায় গাছপালা মরে যাচ্ছে। দ্রুত এসব ভেজাল গুড়ের কারখানা বন্ধ করে আমাদের রেহাই দেয়া হোক।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক স্থানীয় যুবক বলেন, ‘এলাকার প্রভাবশালীরা এই ভেজাল গুড় তৈরি করছে। এই কারখানায় কিছু পচা গুড় ঢোকে। যা গরু-ছাগলের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অথচ কারখানা থেকে প্রতিদিন বেড় হয় মণ মণ গুড়।’

তিনি আরো বলেন, ‘চিনি, পানি, রং দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এসব গুড়। সেই গুড়ের ওপর ইঁদুর, টিকটিকি, তেলাপোকা মরে থাকে।’

প্রশাসন কিছু বলে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিছু দিন আগে প্রশাসনের কয়েকজন এসেছিল। তারা কারখানর মধ্যে ঢুকে মালিকের সঙ্গে কথা বলে চলে গেছে। তারপর কি হয় জানি না।’

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. ইব্রাহিম টিটোন বলেন, ‘রং, কেমিক্যাল মেশানো খাবার খেলে ক্যান্সার, লিভার, কিডনি, চর্ম রোগসহ নানা রোগ হতে পারে। এসব খাবর খাওয়ার আগে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আলী বলেন, ‘গত বছর আমরা বাহাদুরপুরে ভেজাল গুড়ের কারখানার সন্ধান পেয়েছিলাম। জানার সঙ্গে সঙ্গে সে কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম।’

বাহাদারপুরে সেই কারখানা বা আরো নতুন কোনো কারখানা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। যদি কেউ ভেজাল খাবার তৈরি করে বাজারজাত করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মন্তব্য

Beta version