-->
শিরোনাম

শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার

বিল্লাল হোসাইন, নারায়ণগঞ্জ
শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে পণ্যবাহী জাহাজের ধাক্কায় মুন্সীগঞ্জগামী এম এল আশরাফ উদ্দিন নামে একটি যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটেছে৷ রোববার (২০ মার্চ) দুপুর ২টার পর সদর উপজেলার আল-আমিন নগর এলাকায় নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর কাছাকাছি এই দুর্ঘটনা ঘটে৷

লঞ্চডুবির ঘটনায় রাত ৮টা পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। লঞ্চডুবির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে নৌ-পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক জিল্লুর রহমান জানান, ডুবে যাওয়া লঞ্চটিকে শনাক্ত করা হয়েছে। নিহত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনের লাশ নদীর তলদেশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুইজন পুরুষ, দুইজন নারী ও দুই জন শিশু রয়েছে।

তিনি আরও জানান, আনুমানিক ৫০ জন যাত্রী নিয়ে লঞ্চ নারায়ণগঞ্জ সেন্ট্রাল ঘাট থেকে ছেড়ে যায়। পেছন থেকে এমভি রূপসী-৯ নামের মালবাহী কার্গো জাহাজটি ধাক্কা দিলে লঞ্চটি ডুবে যায়। আনুমানিক ২০ থেকে ৪০ জন যাত্রী সাঁতরে তীরে উঠেছে। তবে কতজন নিখোঁজ রয়েছে তা এখনো পাওয়া যায়নি।

এদিকে যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল আশরাফ উদ্দিন ডুবে যাওয়ার ঘটনা তদন্ত করতে নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ঘটনার পর বিকেলে নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আ ন ম বজলুর রশীদকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন: শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি: চালকসহ আটক ৯, তদন্ত কমিটি গঠন

একই ঘটনার তদন্তে প্রকৌশলী ও জরিপকারক ওবায়দুল্লাহ ইবনে বশিরকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহণ অধিদপ্তর। এই কমিটিকে আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শামীম বেপারীকে আহ্বায়ক করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবারের মধ্যে এই কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।

ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে সাঁতরে তীরে উঠে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন যাত্রী জানান, দুপুর ১ টা ৫৮ মিনিটে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রায় অর্ধশত যাত্রী নিয়ে মাঝারি আকারের লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

লঞ্চটি সদর উপজেলার সৈয়দপুর কয়লাঘাট এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে এম ভি রূপসী নামে বড় আকারের একটি পণ্যবাহী কার্গো পর পর কয়েকবার ধাক্কা দিলে লঞ্চটি নদীর মাঝখানে ডুবে যায়। এ সময় ১০-১২জন যাত্রী নদীতে লাফিয়ে পড়ে বেঁচে গেলেও অধিকাংশ যাত্রী নিখোঁজ হন।

তাদের সন্ধানে নদীর দুই তীরে স্বজনরা এসে আহাজারি করতে থাকেন। এখনও অনেক নারী-পুরুষ নদীর দুই তীরে অবস্থান করছেন।

বেঁচে ফিরলেন মুন্সীগঞ্জের আব্দুর রব, নিখোঁজ ছেলের বউ ও নাতি

এদিকে আমাদের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবির ঘটনায় প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন মুন্সীগঞ্জের আব্দুর রব। তবে নিখোঁজ রয়েছেন তার সঙ্গে থাকা ছেলের বউ ও একমাত্র নাতি।

রোববার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে দেখা হয় মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার খাসকান্দি এলাকার আব্দুর রব (৬৫) এর সঙ্গে।

শ্বাসকষ্টের রোগী আব্দুর রব কথা বলতে পারছিলেন না। সঙ্গে থাকা তার স্ত্রী জানান, তার স্বামী ডাক্তার দেখাতে পুত্রবধূ ও নাতিকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে গিয়েছিলেন। বেলা দুইটার দিকে তারা নারায়ণগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জগামী এম এল আশরাফ উদ্দিন লঞ্চে উঠেন। লঞ্চটি পথিমধ্যে নারায়ণগঞ্জের কয়লাঘাট এলাকায় কার্গোর ধাক্কায় ডুবে যায়।

ডুবে যাওয়ার সময় তার ছেলে দীন ইসলাম (৪৫), স্ত্রী আরিফা (৩২) ও নাতি সাফায়েত (দেড় বছর) তার সঙ্গেই ছিলেন। লঞ্চটি ডু্বে যাওয়ার পর স্থানীয়রা আব্দুর রবকে উদ্ধার করলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত তার পুত্রবধূ ও নাতি নিখোঁজ রয়েছে।

লঞ্চডুবির ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ নৌ-থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এমভি রূপসী-৯ জাহাজের চালকসহ ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের হোসেনবাগ থেকে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাদের আটক করা হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা হবে।’

নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি বদিউজ্জামান বলেন, ‘ এর আগেও শীতলক্ষ্যা নদীতে জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চ ডুবে প্রাণহানি হয়েছে। নৌপুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা ঠিকমতো তদারকি না করায় শীতলক্ষ্যা অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।’

গত বছরের ৮ জুলাই শীতলক্ষ্যা নদীর একই স্থানে এক কার্গো জাহাজের ধাক্কায় সাবিত আল হাসান নামে যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে৷ এতে নারী ও শিশুসহ ৩৪ জনের মৃত্যু হয়৷

মন্তব্য

Beta version